অ্যালার্জির আভিধানিক অর্থ হলো স্পর্শকাতরতা, অতি প্রতিক্রিয়া, প্রতিক্রিয়াপ্রবণতা, বিতৃষ্ণা, বিরাগ ইত্যাদি। তবে ক্ষেত্রে বিশেষ বিশেষ খাদ্য, পতঙ্গদংশন, ফুলের পরাগরেণু ইত্যাদির প্রতি কারো কারো শারীরিক অতি স্পর্শকাতরতা বা অতি সংবেদনশীলতাকে অ্যালার্জি বলে। শরীরে অবস্থিত অ্যান্টিবডি-অ্যান্টিজেনের অতি সংবেদনশীলতা বা রি-অ্যাকশনের কারণে অ্যালার্জির সৃষ্টি হয়। শিশুদের নানা রকম অ্যালার্জি হতে পারে।
এসবের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ফুড অ্যালার্জি বা খাবারে অ্যালার্জি।
অ্যালার্জিপ্রবণ খাবার
► দুধ
► ডিম
► মাছ (চিংড়ি, ইলিশ, সামুদ্রিক)
► মাংস (গরু, হাঁস)
► সবজি (বেগুন, কচু, গাজর, আপেল)
► বাদামজাতীয় খাবার (চিনাবাদাম, মটরশুঁটি)
► শামুকজাতীয় খাবার।
তবে ডিমের অ্যালার্জি শিশুদের ০-১ বছরে শুরু হয়। তারপর ৭৫ শতাংশ অ্যালার্জি সাত বছরের মধ্যেই চলে যায়। গরুর দুধের অ্যালার্জি ০-১ বছরে শুরু হয় এবং ৭৬ শতাংশ অ্যালার্জি পাঁচ বছরের মধ্যেই চলে যায়। সাধারণত ডিম ও গরুর দুধের অ্যালার্জি ৫০ শতাংশ স্কুল বয়সেই চলে যায়। ডাল বা বাদামজাতীয় খাবারের অ্যালার্জি ২০ শতাংশ চলে যায়। বাকিটা সারা জীবন থাকতে পারে।
শিশুর অ্যালার্জি হয় বলে অ্যালার্জিপ্রবণ খাবার খাওয়া বাদ দেওয়া উচিত নয়। কারণ কোনো কোনো বিশেষ খাবারে দেখা গেল হঠাৎ করেই একবার বা দুইবার অ্যালার্জির সৃষ্টি হলো।
পরক্ষণে হয়তো বা আর না-ও হতে পারে। আবার কারো কারো ক্ষেত্রে বিশেষ খাবারে অ্যালার্জি রয়েছে, কিন্তু অন্যজনের আরেক খাবারে অ্যালার্জি থাকতে পারে। কাজেই গণহারে সবাইকে সব খাবার পরিহার করাটা সমীচীন হবে না। এতে শরীরে অপুষ্টি দেখা দিতে পারে।
অন্যদিকে মায়ের অ্যালার্জির সমস্যা থাকলেও বাচ্চাকে মায়ের দুধ খাওয়ানো বন্ধ করার কোনো প্রয়োজনীয়তা নেই। কেননা বুকের দুধের মাধ্যমে মায়ের শরীরের অ্যালার্জি বাচ্চার শরীরে প্রবেশ করার আশঙ্কা খুবই কম।
অ্যালার্জি দূর করতেও আছে খাবার
অ্যালার্জি দূর করতে সাহায্য করে এমন অনেক খাবারও আছে। সেসব হলো ভিটামিন ‘সি’ সমৃদ্ধ খাবার। যেমন—কমলা, পেয়ারা, আমলকী, কুল, মাল্টা ইত্যাদি। এগুলো অ্যালার্জি নিয়ন্ত্রণ ও ক্ষত নিরাময়ে বিশেষ ভূমিকা রাখে।
অ্যালার্জির এই র্যাশ বা দাগগুলো কত দিন থাকতে পারে?
এই র্যাশগুলো সাধারণত কয়েক ঘণ্টা থেকে কয়েক দিনের মধ্যেই চলে যায়। তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে উপযুক্ত চিকিৎসার পর এটি চলে যেতে দু-চার সপ্তাহও লেগে যেতে পারে।
অ্যালার্জি শনাক্তের টেস্টগুলো কী কী?
► রক্তের আইজিই টেস্ট : প্রাথমিকভাবে এই টেস্ট খুব জনপ্রিয়। তা ছাড়া যাদের বয়স পাঁচ বছরের নিচে, অতি বৃদ্ধ বা যাদের ত্বকের পরীক্ষায় ভীতি রয়েছে, তাদের এই টেস্ট করানো হয়।
► স্কিন প্রিক টেস্ট : এই পরীক্ষায় শরীরে নির্দিষ্ট অ্যালার্জেন প্রবেশ করিয়ে অ্যালার্জির মাত্রা নির্ণয় করা হয় এবং কোন জিনিসে অ্যালার্জি আছে, তা শনাক্ত করা হয়।
► স্কিন স্ক্রাচিং টেস্ট : এই টেস্ট সব সময় করা হয় না। ত্বকে আঁচড় কেটে সেখানে অ্যালার্জেন ঢেলে এর রি-অ্যাকশন দেখা হয়।
► স্কিন চ্যালেঞ্জ টেস্ট : এই পরীক্ষা সাধারণত ফুড অ্যালার্জির রোগীদের ক্ষেত্রে করা হয়। চিকিৎসকের সামনে নির্দিষ্ট খাদ্য খাইয়ে দেখা হয় অ্যালার্জি হচ্ছে কি না।
► রক্তের ইসোনোফিল টেস্ট : এ ক্ষেত্রে ইসোনোফিলের মাত্রা অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যায়।
কেন এই টেস্ট করতে হবে?
► এই টেস্টে কোন কোন জিনিসের প্রতি অ্যালার্জি আর কোন কোন জিনিসের প্রতি অ্যালার্জি না, সেটি শনাক্ত করা যায়। ফলে চিকিৎসা সহজ হয়।
► কোন ধরনের খাবার পরিহার করতে হবে, সেটির আন্দাজ পাওয়া যায়।
► অ্যালার্জেন ভ্যাকসিন লাগবে কি না, সে ব্যাপারেও সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়।
লেখক : ডা. এহসানুল কবীর , শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ
ডিরেক্টর, ডক্টরস পয়েন্ট স্পেশালাইজড হাসপাতাল, খুলনা