রংপুরের তারাগঞ্জে দুইটি বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে ছাত্রলীগ নেতা ও চালকের দুই সহকারীসহ ৯ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন বেশ কয়েকজন। রোববার (৪ সেপ্টেম্বর) রাত সাড়ে ১২টার দিকে রংপুর-দিনাজপুর মহাসড়কের তারাগঞ্জ উপজেলার খারুভাজ সেতুর কাছে ঢাকাগামী ইসলাম পরিবহনের সঙ্গে সৈয়দপুরগামী বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়।
সোমবার দুপুরে ইসলাম পরিবহনের বাসে থাকা এক যাত্রী রুবেল হোসেনের সঙ্গে কথা হয়। তিনি জানান- হঠাৎ বিকট শব্দে সব যাত্রীই দিশেহারা হয়ে বাঁচান বাঁচান বলে চিৎকার করতে থাকি।
রুবেল হোসেন ঠাকুরগাঁও জেলার পীরগঞ্জ উপজেলার একান্নপুর গ্রামের বাসিন্দা। দুর্ঘটনার বিবরণ দিয়ে তিনি বলেন, সাড়ে ১২টার দিকে বৃষ্টি শুরুর পর হঠাৎ বাসটি বাম থেকে ডান দিকে চলে যায়। কিছু বুঝে উঠার আগেই ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা বাসটির সঙ্গে আমাদের বাসটির মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। বিকট শব্দে সব যাত্রীই দিশেহারা হয়ে বাঁচান বাঁচান বলে চিৎকার করতে থাকি। স্থানীয় লোকজন বৃষ্টিতে ভিজে গাড়ির জানালা ভেঙে আমাদের উদ্ধার করেন।
এদিকে এ দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে জেলা প্রশাসন। এছাড়াও রংপুরের জেলা প্রশাসক আসিফ আহসান নিহতদের পরিবারকে ২০ হাজার টাকা করে অনুদান দেওয়ার ঘোষণা প্রদান করেন।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, রোববার রাত সাড়ে ১২টার দিকে রংপুর-দিনাজপুর মহাসড়কের তারাগঞ্জ উপজেলার খারুভাজ সেতুর কাছে ওই ঢাকাগামী ইসলাম পরিবহনের সঙ্গে সৈয়দপুরগামী যাত্রীবাহী বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলেই ৫ জনসহ মোট ৯ নিহত হন। আহত ব্যক্তিদের প্রথমে স্থানীয় লোকজন ও দুর্ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা উদ্ধার করে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে দেন।
উদ্ধার কাজে অংশ নেওয়া খারুভাজ গ্রামের রফিকুল ইসলাম বলেন, রাত সাড়ে ১২টার সময় বিকট শব্দ শুনে ঘর থেকে বের হয়ে দেখি সড়কে দুইটি বাস মুখোমুখি সংঘর্ষে হয়েছে। এ সময় পাশের বাড়ির আলতাফ হোসেন ও সাদেকুল ছুটে আসেন। এরপর দৌড়ে গিয়ে গাড়ির জানালা ভেঙে প্রায় ১৫-২০ জনকে গুরুতর আহত অবস্থায় বের করি। বৃষ্টিতে দুর্ঘটনায় আহত মানুষের দুর্ভোগ কয়েকগুণ বেড়ে গিয়েছিল। খবর পেয়ে ২০-২৫ মিনিটের মধ্যে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা চলে আসেন। রাত সাড়ে ৩টা পর্যন্ত উদ্ধার কাজ চলে।
এ দুর্ঘটনায় নিহতরা হলেন- নীলফামারী সৈয়দপুর উপজেলা ছাত্রলীগের দপ্তর সম্পাদক অলিউল হোসেন জুয়েল (২৭), একই উপজেলার কুন্দল পূর্বপাড়া গ্রামের মহসিন হোসেন সাগর (৪২), জোয়ানা পরিবহণের চালকের সহকারী ও রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার ঝাকুয়াপাড়া গ্রামের আনোয়ার হোসেন (৩৫), তৃপ্তি পরিবহণের হেলপার পলাশবাড়ী গ্রামের বিনোদ সেন (৪৫), ইসলাম পরিবহণের হেলপার লক্ষ্মীপুর রায়পুর গ্রামের নয়ন ইসলাম (২৬), সয়ার কাজীপাড়া গ্রামের আনিছুর রহমান (৪৮) এবং গাইবান্ধা জেলার উত্তর কিদারী এলাকার সাদেক আলীসহ (৫৬) ৯ জন।
তারাগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের ভারপ্রাপ্ত স্টেশন ইনচার্জ খতিবুর রহমান বলেন, রাত সাড়ে ১২টার দিকে মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছিল। এসময় খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে দুমড়ে-মুচড়ে যাওয়া পরিবহনের সামনের রড় কেটে গুরুতর আহত অবস্থায় প্রায় ৪৫-৫০ জন যাত্রীকে উদ্ধার করি। এ সময় পাঁচজনের লাশ উদ্ধার করা হয়।
তারাগঞ্জ হাইওয়ে থানার ওসি মাহবুব মোর্শেদ সোমবার দুপুরে ছাত্রলীগ নেতাসহ ৯ জন নিহতের কথা নিশ্চিত করেছেন।
রংপুরের জেলা প্রশাসক আসিফ আহসান সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, তারাগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাসেল মিয়াকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন প্রদান করবেন। এছাড়া এ ঘটনায় নিহত প্রত্যেক পরিবারকে ২০ হাজার টাকা করে অনুদান দেওয়া হবে।