টাঙ্গাইলের দেলদুয়ারে সদ্য সরকারি হওয়া সৈয়দ মহব্বত আলী ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ মো. মনিরুজ্জামান খানের বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে।
nagad-300-250
৩০টি সুনির্দিষ্ট অনিয়ম ও দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরে অভিযোগপত্র দুর্নীতি দমন কমিশনসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। কলেজের শিক্ষক-কর্মচারী ও এলাকাবাসীর পক্ষে দাতা সদস্য আব্দুর রাজ্জাক এ অভিযোগপত্র পাঠান।
অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ইতোমধ্যে বিভাগীয় তদন্ত শুরু হয়েছে। ২৯ সেপ্টেম্বর মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগের বিষয়ে সরেজমিন তদন্তের জন্য সরকারি সা’দত কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক সুব্রত নন্দী ও প্রাণিবিদ্যা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ফওজিয়া ভানুর সমন্বয়ে কমিটি গঠন করে। কমিটি ১২ অক্টোবর তদন্তকাজ সম্পন্ন করেন।
অধ্যাপক সুব্রত নন্দী তদন্তের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
অভিযোগপত্র ও শিক্ষক-কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অধ্যক্ষ মনিরুজ্জামান খান ২০১২ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর সৈয়দ মহব্বত আলী ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ পান। দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই অধ্যক্ষ বিভিন্ন অনিয়মের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন।
শিক্ষক পরিষদের সম্পাদক মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ২০১৯ সালেই বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতি প্রসঙ্গে মাউশির ঢাকা অঞ্চলের পরিচালক মো. মনোয়ার হোসেন সরেজমিন তদন্ত করতে কলেজে আসেন। ওই সময় অধ্যক্ষ মনিরুজ্জামান খান তদন্ত কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে পার পেয়ে যান।
ওই সময় তিনি কলেজ তহবিলের দুই লাখ টাকা আত্মসাৎ করেন। যার বিল ভাউচারে স্বাক্ষর দিতে আমাকে ও মার্কেটিং বিভাগের প্রভাষক মো. আব্দুস সালামকে জোরপূর্বক বাধ্য করেন। শিক্ষক-কর্মচারীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার, অশালীন আচরণ, স্বেচ্ছাচারিতা, ল্যাপটপ কিনে তা ব্যবহার করতে তার ছেলেকে দিয়েছেন অধ্যক্ষ।
তদন্ত কর্মকর্তা ওই ল্যাপটপ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি (অধ্যক্ষ) আইসিটি বিভাগ কর্তৃক প্রদত্ত ১টি ল্যাপটপ দেখান তদন্ত কর্মকর্তাকে। ২০২২ এর সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কলেজ তহবিলে ১৭ লাখ ৮৭ হাজার ৮৯০ টাকা জমা থাকলেও গভর্নিং বডির সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে শিক্ষক-কর্মচারীদের ৫ মাসের বেতন বকেয়া রেখেছেন। ফলে তারা মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
অধ্যক্ষ ২০১৮ সালে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় আহত হন। কাউকে দায়িত্ব না দিয়ে এবং ছুটি না নিয়ে তিনি ৬ মাসেরও বেশি সময় কলেজে অনুপস্থিত থাকেন। পরে হাজিরা খাতায় ৬ মাসের হাজিরা একদিনে স্বাক্ষর করেন।
বন বিভাগের অনুমতি ব্যতীত বেঞ্চ তৈরির নামে কলেজের গাছ কর্তন করে তা বিক্রি করে অর্থ আত্মসাৎ করেন। কলেজের পুকুর লিজের টাকার হিসাব দৃশ্যমান না করে তা আত্মসাৎ করেন। শিক্ষার্থীদের মূল সনদপত্র তুলে নিতে কোনোরূপ রশিদ ছাড়া জনপ্রতি ৩০০ টাকা আদায় করে একাই আত্মসাৎ করেন।
শিক্ষক পরিষদ কর্তৃক গঠিত ক্রয় ও অর্থ কমিটি থাকলেও অধ্যক্ষ তাদের সঙ্গে আলোচনা না করে বিভিন্ন দ্রব্যসামগ্রী নিজেই ক্রয় করেন এবং ইচ্ছেমতো বিল ভাউচারসমূহ পাশ করান।
অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে অধ্যক্ষ মো. মনিরুজ্জামান খান বলেন, তদন্ত চলছে। তদন্তেই বেরিয়ে আসবে অভিযোগ কতটা সত্য। একটা পক্ষ তাদের ব্যক্তিস্বার্থে আমাকে হেয় করার জন্য এসব মিথ্যা অভিযোগ এনেছেন।