চট্টগ্রাম থেকে ময়মনসিংহ হয়ে খুলনা। বিএনপি একের পর এক বিভাগীয় শহরে জনসভা করে চলেছে। পরবর্তী গন্তব্য রংপুর। নির্বাচনের চৌদ্দ-পনেরো মাস আগে এ শোডাউন নজর কাড়ছে। একই সঙ্গে জন্ম দিয়েছে অনেক প্রশ্নের।
এর আগে বিএনপি যেখানেই মিছিল-সমাবেশ করতে গেছে, তারা নানা বাধার সামনে পড়েছে। অনেক জায়গায় তাদের ওপর হামলা হয়েছে। তাতে প্রাণহানিও হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, বিএনপিকে কর্মসূচি পালনে বাধা দেওয়া হবে না। তাঁকে এ কথা বলতে হলো কেন? বলার পরও পরিস্থিতি বদলায়নি। তাহলে কি ধরে নিতে হবে, এটা ছিল কথার কথা? নাকি তাঁর দলের মধ্যে অন্তর্ঘাতীরা সক্রিয় হয়েছে। এর আগে দেখেছি, কোনো গোলমাল হলেই তাঁরা বলতেন, দলে অনুপ্রবেশকারী ঢুকেছে। তারাই এসব করছে। কাজটা যে মন্দ, তা তাঁরা স্বীকার করেন। তাই দায় নিতে চান না।
বিএনপি আগেভাগে জানান দিয়েই সমাবেশগুলো করছে, যাতে দূরদূরান্ত থেকে মানুষ এসে যোগ দিতে পারে। উনিশ শ পঞ্চাশ ও ষাটের দশকে দেখা গেছে, মানুষ পুঁটুলিতে চিড়া-মুড়ি-গুড় নিয়ে শেরেবাংলার জনসভা কিংবা মাওলানা ভাসানীর কৃষক সমাবেশে যোগ দিতে রোদ-বৃষ্টি উপেক্ষা করে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকত। এখন আর এটার দরকার হয় না। এখন রাস্তাঘাট হয়েছে, পরিবহন-সুবিধা বেড়েছে। ফলে কয়েক ঘণ্টার প্রস্তুতি নিয়ে মানুষ আসতে পারে। কিন্তু ময়মনসিংহ আর খুলনায় দেখলাম অন্য রকম দৃশ্য। মানুষ যাতে দূর থেকে এসে সমাবেশে যোগ দিতে না পারে, সে জন্য বিনা নোটিশে পরিবহন ধর্মঘট হয়েছে। প্রতিবারই দেখা গেছে, ধর্মঘটের আয়ু দুই দিন। জনসভা শেষ হলো আর বাস চলতে শুরু করল।
মানুষ কিন্তু ঠিকই এসেছে নানানভাবে—মোটরবাইক, নছিমন, রিকশাভ্যান আর নৌকায় চড়ে। বাস চলাচল করলে হয়তো আরও লোক আসত। যারা এত কষ্ট করে কী আশায় ছুটে আসে, তা নিয়ে গবেষণা করার দরকার নেই। যেহেতু সমাবেশগুলো সরকারবিরোধী, অর্থাৎ আওয়ামী লীগবিরোধী; বোঝা যায়, তারা সরকার পরিবর্তন চায়। এত দিন একটা কথা ছিল, বিএনপির নেতা-কর্মীরাই শুধু সমাবেশ করেন। ‘জনতা’ কই? সাম্প্রতিক জমায়েতগুলোয় ‘জনতাকে’ দেখা গেছে।
একটা কথা আছে—আন্দোলন করে জনগণ। রাজনৈতিক দল নেতৃত্ব দেয়। জনগণকে সম্পৃক্ত করতে না পারলে আন্দোলন গড়ে ওঠে না। বিএনপি চায় ‘রেজিম চেঞ্জ’। জনগণও যদি তা চায়, তাহলে তাদের সম্মিলন ঘটবে। প্রশ্ন হলো, জনগণ কত দূর পর্যন্ত যাবে?