কেরানীগঞ্জে বাকপ্রতিবন্ধী নারীকে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় আসামি সুজন মিয়াকে (২৫) গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ভিকটিম লতার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কের বিষয়টি ফাঁস হওয়ার ভয়ে তাকে মারধরের পর পুড়িয়ে হত্যা করেন সুজন।
শনিবার ঢাকা জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান পুলিশ সুপার মো. আসাদুজ্জামান।
এর আগে ২৮ নভেম্বর রাতে ৯৯৯ নাম্বারের ফোনে খবর পেয়ে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের সাবান ফ্যাক্টরি এলাকা থেকে দগ্ধ অবস্থায় এক নারীকে উদ্ধার করে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করে পুলিশ। পরে জানা যায় দগ্ধ ওই নারী বাকপ্রতিবন্ধী। চিকিৎসাধীন অবস্থায় পরদিন তার মৃত্যু হয়। ওই দিনই নিহতের ভাই স্বপন সরকার বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা করেন।
ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ভিকটিমের বাড়ি কেরানীগঞ্জ মডেল থানাধীন কলাতিয়া এলাকায়। তার বাড়ির পাশের একটি বালুর গদিতে কাজ করত আসামি সুজন। সম্প্রতি তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। ২৮ নভেম্বর বিকালে সুজন বালুর গদিতে লতার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করে। এরপর লতা সুজনকে বিয়ের জন্য জোর-জবরদস্তি করতে থাকেন। এ সময় লতা সুজনকে কোথাও পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করার কথা বলেন। অন্যথায় শারীরিক সম্পর্কের কথা সবাইকে জানিয়ে দেবেন। সুজন তখন কাপড় নিয়ে সন্ধ্যার সময় লতাকে আসতে বলেন। সন্ধ্যায় লতা বাড়ি থেকে পালিয়ে এসে গদিতে সুজনের সঙ্গে দেখা করেন। এরপর দুজন সেখান থেকে আঁটিবাজার হয়ে কদমতলী আসেন। কদমতলী থেকে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানাধীন শুভাঢ্যা সাবান ফ্যাক্টরি শ্মশান ঘাটের নির্জন এলাকায় নিয়ে লতাকে মারধর করে সড়কের পাশে খাদে ফেলে দেন। এ সময় লতা চিৎকার করতে থাকলে সুজন তার মাথায় শক্ত বস্তু দিয়ে আঘাত করেন ও গলা টিপে ধরেন। এতে লতা অজ্ঞান হয়ে পড়লে সুজন ভাবে সে মারা গেছে। লতাকে যাতে কেউ শনাক্ত করতে না পারেন এজন্য লতার সঙ্গে থাকা কাপড়চোপড় শরীরের ওপর রেখে দিয়াশলাই দিয়ে আগুন ধরিয়ে পালিয়ে যায় সুজন। পরে স্থানীয়রা ৯৯৯ নাম্বারের মাধ্যমে পুলিশে খবর দিলে পুলিশ মুমুর্ষূ অবস্থায় লতাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ শাহজামান জানান, মৃত্যুর আগে হাসপাতালে সাইন ল্যাঙ্গুয়েজ এক্সপার্ট দিয়ে বাকপ্রতিবন্ধী লতার জবানবন্দি গ্রহণ করা হয়। এর পর লতার ডায়িং ডিক্লারেশন, ঘটনাস্থলের আলামত, ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ ও তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে তদন্ত টিম আসামি সুজনকে শনাক্ত করতে সক্ষম হয়। ঘটনার পর সুজন প্রথমে তার গ্রামের বাড়ি শরীয়তপুরের গোসাইরহাট পালিয়ে যায়। সেখান থেকে পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া এলাকায় শ্বশুরবাড়ি গিয়ে আত্মগোপন করে। শুক্রবার পটুয়াখালীর কলাপাড়া থেকে তাকে গ্রেফতার করে ঢাকায় নিয়ে আসা হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে লতাকে ধর্ষণ ও হত্যার কথা স্বীকার করেছে। এ ঘটনায় আরও কেউ জড়িত কিনা? সেই বিষয়ে তদন্ত চলছে।