আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, তারেক রহমান লন্ডনের টেমস নদীর তীরে বসে বাণী পাঠাচ্ছে আর দেশে বসে ফখরুল হুঙ্কার ছাড়ছেন শেখ হাসিনা পালিয়ে যাবে, মন্ত্রীরা সবাই দেশত্যাগ করবে- এটা কখনো হবে না। আওয়ামী লীগ কাউকে ভয় পায় না। শেখ হাসিনা কাউকে ভয় পান না। আওয়ামী লীগ ভয় পায় আপনাদের আগুন সন্ত্রাস, লাঠি নিয়ে খেলাধুলাকে। সেই বদমতলব আপনাদের আছে। সেজন্যই আপনাদের পল্টন দরকার।
শনিবার বিকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ঢাবি শাখার সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি কেন সোহরাওয়ার্দী মাঠকে বাদ দিয়ে পল্টনে জনসভা করতে চায়। তার কারণ আমরা সবাই জানি। গত নির্বাচনের আগেও তো বেগম জিয়া এখানে (সোহরাওয়ার্দী) মিটিং করেছেন; কিন্তু ফখরুল সাহেব আপনি কেন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করতে চান না? ধরা পড়ে গেছেন, ধরা পড়ে গেছেন! স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আপনার মধ্যে নেই- তা আবারো প্রমাণিত হলো। এ কারণেই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করতে চাচ্ছেন না ফফরুল।
তিনি বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার আর হবে না। সংবিধান পরিবর্তন করার কোনো সুযোগ নেই। সংবিধানকে অনেক কচুকাটা করেছেন। আইন করে বঙ্গবন্ধু হত্যার ঘাতকদের বিচার বন্ধ করেছিলেন। সংবিধানে হাত দেওয়ার অধিকার কারো নেই। কাজেই তত্ত্বাবধায়ক নিয়ে দিবাস্বপ্ন, রঙিন খোয়াব দেখে লাভ নেই।
মন্ত্রী বলেন, যারা ভোট চুরি করে তারাই আবার ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনার কথা বলে। ঢাকা শহরের বড়লোকদের বাড়ির সামনে লেখা থাকে কুকুর হতে সাবধান আর গ্রামের নিরীহ মানুষ বলে বিএনপি থেকে সাবধান। বিএনপিকে বর্তমানে কেউ বিশ্বাস করে না।
রাজশাহীতে বিএনপির চলমান সমাবেশ প্রসঙ্গে কাদের বলেন, আমি খবর পেয়েছে বিএনপির রাজশাহীর সমাবেশ সুপার ফ্লপ। ফখরুল হুঙ্কার ছুড়ছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবেশের ছবিটা একটু দেখতে বলবেন।
বিএনপিকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ১০ ডিসেম্বর যখন চলে যাবে, জানি অবরোধ দেবেন, জানি ধর্মঘট দেবেন, জানি আবারো আগুন-সন্ত্রাস শুরু করবেন, জানি আবারো লাঠিখেলা করবেন। আমরা কি চুপ করে বসে থাকব?
গণমাধ্যমের সমালোচনা করে ওবায়দুল কাদের বলেন, আমরা এত বড় বড় জনসভা করি, কিন্তু কিছু মিডিয়া ওভাবে নিউজ দেয় না। এখানে ফখরুল দাঁড়িয়ে বক্তব্য দিলে পুরো ছবিসহ কোনো কোনো মিডিয়ায় যেত। যারা আমাদের পছন্দ করেন না, তাদের আমি বলেছি আমরা বেশি চাই না। আমাদের ন্যায্য কাভারেজ দেন।
তিনি আরও বলেন, কেন এত বৈরিতা। আমি জানি না। একদিনও কারো বিরুদ্ধে কিছু বলি নাই। কারো নাম বলি নাই। আমার ভাইকে নিয়ে প্রতিদিন ডাবল কলামে নিউজ হতো- আমার ক্ষতি করার জন্য। কী অপরাধ করেছি আমি। এখন তো কোম্পানীগঞ্জে সবাই ঐক্যবদ্ধ। এখন তো নিউজ দেন না।
বিএনপির সমাবেশে পরিবহণ বন্ধ না করতে পরিবহণ মালিক সমিতির নেতাদের সঙ্গে কথা বলেছেন দাবি করে মন্ত্রী বলেন, এখনই শুনলাম বিএনপির নেতাকর্মীরা বিছানা-বালিশ, শীতের কম্বল, সঙ্গে মশার কয়েল নিয়ে তাঁবু গেড়েছে। এত আগে আসার কী দরকার? তত্ত্বাবধায়ক আর হবে না, সংবিধান পরিবর্তনের সুযোগ নেই। আমি পরিবহণ মালিক সমিতির নেতাদের অনুরোধ করেছি তারা যেন গাড়ি বন্ধ না করেন। তারাও বলেছেন গাড়ি বন্ধ করবেন না। ছাত্রলীগের সঙ্গেও যেন কোনো কিছু না ঘটে সেজন্য ছাত্রলীগের সম্মেলন এগিয়ে আনা হয়েছে। ছাত্রলীগ বিএনপির ধারে-কাছেও যাবে না।
আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী প্রতি এক বছর পরপর সম্মেলনের কথা থাকলেও কোভিড-১৯ মহামারির কারণে দীর্ঘ সাড়ে চার বছর পর সম্মেলন অনুষ্ঠিত হলো।
ফলে সম্মেলনকে ঘিরে নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক উচ্ছ্বাস-উদ্দীপনা দেখা যায়। সারাদিন পুরো ক্যাম্পাসে ছিল সাজ সাজ রব আর উৎসবের আমেজ। দীর্ঘ প্রতীক্ষিত এ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য এবং ঢাবি ছাত্রলীগ সভাপতি সঞ্জিত চন্দ্র দাস ও সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন।
এবার ছাত্রলীগের গুরুত্বপূর্ণ এই ইউনিটের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে ২৪৫ জন নেতাকর্মী জীবন বৃত্তান্ত জমা দিয়েছেন।
ঢাবি ছাত্রলীগের নতুন নেতৃত্ব নির্বাচনের বিষয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের কমিটি, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের কমিটি এবং ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ ছাত্রলীগের কমিটি একসঙ্গে ঘোষণা করা হবে।