নীতিমালায় আটকে আছে পলিটেকনিকে ভর্তি

কলেজ-মাদ্রাসায় একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির অনলাইন আবেদন প্রক্রিয়া ৮ ডিসেম্বর শুরু হয়েছে। একইদিন কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আবেদন নেওয়ার কাজও শুরু করার কথা ছিল। কিন্তু ভর্তির নীতিমালা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে আটকে থাকায় পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটসহ দেশের বিভিন্ন কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তির কার্যক্রম রোববারও শুরু করা যায়নি। শুধু তাই নয়, কবে নাগাদ ভর্তির কাজ শুরু করা যাবে তাও কেউ ঠিকমতো বলতে পারছেন না।

জানতে চাইলে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান আলী আকবর খান বলেন, ‘নীতিমালার খসড়া চূড়ান্ত করে তা অনুমোদনের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন পেলেই অনলাইনে ভর্তি নেওয়া শুরু হবে।’

শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, কারিগরি শিক্ষা বোর্ড থেকে যে নীতিমালা প্রস্তাব করা হয়েছে তাতে বেশকিছু নতুনত্ব আনা হয়েছে। কারিগরি শিক্ষায় নারী শিক্ষার্থী ভর্তি বাড়াতে তাদের জন্য আলাদা জিপিএ শর্ত দেওয়া হয়েছে। ছাত্রদের মধ্য থেকে এসএসসি পর্যায়ে জিপিএ-৩ পেলে আবেদন করা যাবে। কিন্তু ছাত্রীরা জিপিএ-২.৫ পেলেই হবে। এছাড়া নিজ এলাকায় তাদের ভর্তি অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। মেরিন টেকনোলজিতে ভতিচ্ছুদের জন্য এবার আলাদাভাবে বিএমআই (বডি ম্যাস ইনডেক্স) বা বয়স অনুযায়ী উচ্চতা, বুকের মাপ, ওজন ইত্যাদি যুক্ত করা হয়েছে। মূলত দেশি-বিদেশি জাহাজে এই টেকনোলজি পাশ করা শিক্ষার্থীরা চাকরি পায়। সেখানে নিয়োগে বিএমআই এবং সিডিসি (কন্টিনিউয়াস ডিসচার্জ সার্টিফিকেট) চাওয়া হয়। যদি কোনো গ্র্যাজুয়েট বিএমআই শর্ত পূরণ না করে তাহলে সে সিডিসি পায় না। ফলে মেরিনে লেখাপড়া করেও অনেকে জাহাজে বিশেষ করে বিদেশি জাহাজে চাকরি পান না। এজন্যই এবার এই শর্ত আরোপ করা হয়েছে।

সূত্র আরও জানায়-কারিগরি, সাধারণ ও মাদ্রাসা সব ধরনের শিক্ষায় ভর্তি বাড়াতে আরও পরিবর্তন আছে। গত বছরের নিয়ম অনুযায়ী উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাশ করা শিক্ষার্থীরা যে কোনো বয়সেরই হোক-ভর্তি হতে পারবেন। এবার সাধারণ শিক্ষার ক্ষেত্রেও এই নীতিমালা রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। অর্থাৎ, সাধারণ ও কারিগরি-মাদ্রাসা বোর্ডের শিক্ষার্থীরা যে কোনো বয়সে নিয়মিত শিক্ষার্থী হিসাবে ভর্তি হতে পারবে। এতদিন তারা শুধু প্রাইভেট পরীক্ষার্থী হিসাবে ফরম পূরণ করতে পারতেন।

কারিগরি খাতে ভর্তির ক্ষেত্রে এবার আরও একটি নতুন দিক আনা হয়েছে। সেটি হচ্ছে, প্রথম মেধা তালিকা দেওয়ার সঙ্গে অপেক্ষমাণ তালিকা দেওয়া হবে। অপেক্ষমাণ তালিকা থেকে আসন শূন্য থাকা সাপেক্ষে একাধিক দফায় ভর্তি করা হবে। এরপরও আসন ফাঁকা থাকলে দ্বিতীয় দফায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা যাবে। মূলত যারা ভর্তি নিয়ে দোটানায় থাকে বা যারা কোনো কারণে কোথাও ভর্তি হতে না পারে; তাদের জন্য এমন সুযোগ রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, উল্লিখিত নীতিমালা অনুমোদনের জন্য শিক্ষামন্ত্রীর কাছে পাঠানো হয়েছে। কয়েকদিন তিনি দেশের বাইরে ছিলেন। এজন্য নীতিমালা অনুমোদনে বিলম্ব হয়। কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে www.btebadmission.gov.bd শীর্ষক ওয়েবসাইটের মাধ্যমে ভর্তির আবেদন করতে পারবে শিক্ষার্থীরা।

এবার কারিগরি বোর্ডের অধীনে বিভিন্ন ধরনের প্রতিষ্ঠানে আসন আছে প্রায় ৯ লাখ। এরমধ্যে এইচএসসি ভোকেশনালে পৌনে ৩ লাখ, ব্যবসায় ব্যবস্থাপনা ও প্রযুক্তিতে (বিএমটি) ৪ লাখ আসন। এছাড়া ৪৭টি সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট, একটি গ্রাফিক্স আর্ট ইনস্টিটিউট ও একটি গ্লাস অ্যান্ড সিরামিকস ইনস্টিটিউটটে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়। এছাড়া ৫১৫টি বেসরকারি পলিটেকনিক আছে। ডিপ্লোমা ইন কমার্সের ৭ প্রতিষ্ঠানেও শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়।

এবার এসএসসি, দাখিল-এসএসসি ও দাখিল ভোকেশনালে মোট পাশ করেছে ১৭ লাখ ৪৩ হাজার ৬১৯ জন। তাদের মধ্যে ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডে শুধু এসএসসিতে ১৩ লাখ ৯৯ হাজার ৫৭১ জন, মাদ্রাসায় ২ লাখ ১৩ হাজার ৮৮৩ জন, আর কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে ১ লাখ ৩০ হাজার ১৬৫ জন পাশ করেছে। সাধারণত এসএসসি পাশের পর এক ধারার শিক্ষার্থী আরেক ধারায় চলে যায়। তবে শুধু সরকারি পলিটেকনিক ও মনোটেকনিক এবং হাতেগোনা কিছু বেসরকারি পলিটেকনিক প্রতিষ্ঠানে প্রায় সব আসনেই শিক্ষার্থী ভর্তি হয়। প্রতিবছর বেশিরভাগ বেসরকারি পলিটেকনিকসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে অসংখ্য আসন খালি থাকে। মূলত হাতে-কলমে শিক্ষার ঘাটতি আর সুনাম-সংকটের কারণেই এমনটি হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *