1. ccadminrafi@gmail.com : Writer Admin : Writer Admin
  2. 123junayedahmed@gmail.com : জুনায়েদ আহমেদ, সম্পাদনায়-আরজে সাইমুর : জুনায়েদ আহমেদ, সম্পাদনায়-আরজে সাইমুর
  3. swadesh.tv24@gmail.com : Newsdesk ,স্বদেশ নিউজ২৪.কম : Newsdesk ,স্বদেশ নিউজ২৪.কম
  4. swadeshnews24@gmail.com : নিউজ ডেস্ক, স্বদেশ নিউজ২৪.কম, সম্পাদনায়-আরজে সাইমুর: : নিউজ ডেস্ক, স্বদেশ নিউজ২৪.কম, সম্পাদনায়-আরজে সাইমুর:
  5. hamim_ovi@gmail.com : Rj Rafi, সম্পাদনায়- সাইমুর রহমান : Rj Rafi, সম্পাদনায়- সাইমুর রহমান
  6. skhshadi@gmail.com : শেখ সাদি, সম্পাদনায়-সাইমুর রহমান: : শেখ সাদি, সম্পাদনায়-সাইমুর রহমান:
  7. srahmanbd@gmail.com : এডমিন, সম্পাদনায়- সাইমুর রহমান : এডমিন, সম্পাদনায়- সাইমুর রহমান
  8. sumaiyaislamtisha19@gmail.com : তিশা, সম্পাদনায়-সাইমুর রহমান : তিশা, সম্পাদনায়-সাইমুর রহমান
কোটিপতি বানানোর কারখানা রাজউক - Swadeshnews24.com
শিরোনাম
‘সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিলেই বিএনপি বলে বিরোধীদল দমন’ এবার বুবলী-শাকিবের ‘কোয়ালিটি টাইম’ নিয়ে মুখ খুললেন অপু বাংলাদেশের সফলতা চোখে পড়ার মতো: সিপিডির রেহমান সোবহান চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে যা বললেন নিপুণ তালিকা দিতে না পারলে ফখরুলকে ক্ষমা চাইতে বললেন ওবায়দুল কাদের প্রকাশিত হলো দিদারের ‘বৈশাখ এলো রে এলো বৈশাখ’ আ.লীগের মতো ককটেল পার্টিতে বিশ্বাসী নয় বিএনপি: রিজভী হৃদয় খানের সঙ্গে জুটি ন্যান্সিকন্যা রোদেলার শাকিব ছাড়া দ্বিতীয় কোনো পুরুষকে ভাবতে পারি না: বুবলী শাকিবের এমন সময় আমাদেরও ছিল: ওমর সানী কত টাকা সালামি পেলেন জায়েদ খান, দিতে হলো কত লাখ? শাকিব খানের সঙ্গে বিয়ে,দেনমোহর, বিচ্ছেদসহ নানা বিষয় নিয়ে মুখ খুললেন বুবলী দেশের আকাশে চাঁদ দেখা যায়নি, বৃহস্পতিবার ঈদ বাড়তি ভাড়া চাওয়ায় ‘যাত্রীদের মা’র’ধরে’ বাসচালক ও হেলপার নি’হ’ত ওমরাহ পালনে সৌদি আরবে সাকিব

কোটিপতি বানানোর কারখানা রাজউক

  • Update Time : রবিবার, ১৯ মার্চ, ২০২৩
  • ১৬৯ Time View

রাজউক (রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ) যেন কোটিপতি বানানোর এক কারখানায় পরিণত হয়েছে। এখানে চাকরি করলে রাতারাতি ঘুরে যায় ভাগ্যের চাকা। বড় পদ নয়, একেবারে কেরানি পদে চাকরি করেও কোটিপতি বনে গেছেন অনেকে। স্বল্প বেতনের চাকরি করে যাদের সাধারণ জীবনযাপনের কথা, তাদের কেউ কেউ রীতিমতো রাজা-বাদশাহ হিসাবে আবির্ভূত হয়েছেন। খোদ রাজধানীতে তাদের একাধিক বাড়ি ও ফ্ল্যাটের সন্ধান মিলেছে। আছে নামিদামি ব্র্যান্ডের একাধিক বিলাসবহুল গাড়ি।
তবে অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, তাদের অনেকেই অবৈধ অর্থের জোরে এখন সমাজপতিও বটে। হতে চান এমপি-মন্ত্রীও। তাই চাকরির পাশাপাশি রাজনীতির মাঠেও সক্রিয় তাদের কয়েকজন। যুগান্তরের দীর্ঘ অনুসন্ধানে রাজউকের এসব সৌভাগ্যবান কর্মচারীর অঢেল অর্থবিত্তের চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসে।
লাগামহীন অভ্যন্তরীণ দুর্নীতি এবং কোটিপতি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সম্পর্কে জানতে চাইলে রাজউক চেয়ারম্যান মো. আনিছুর রহমান মিঞা ১২ মার্চ তার কার্যালয়ে যুগান্তরকে বলেন, দুর্নীতিবাজ হিসাবে পরিচিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চিহ্নিত করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে গণমাধ্যমে যাদের নাম এসেছে, তাদের তদন্তের মুখে পড়তে হবে। এছাড়া দুর্নীতিবাজদের অনেকে দুদকের অনুসন্ধানের আওতায় আছেন। ফলে অবৈধ পথে যারা অঢেল অর্থসম্পদের মালিক হয়েছেন, তারা স্বস্তিতে নেই। তাদের অনেকেই আর বেশি দিন রাজউকে টিকে থাকতে পারবেন না।
ধনকুবের মিল্কি : উত্তরা এস্টেট শাখায় কর্মরত সহকারী পরিচালক সামসুল আলম ওরফে মিল্কির অর্থবিত্তের হিসাব কষতে দীর্ঘ সময় প্রয়োজন। শুধু রাজধানীতেই শতকোটি টাকার সম্পদ রয়েছে তার। মিল্কির পুরো পরিবার অভিজাত জীবনযাপন করে। ব্যবহার করেন কোটি টাকা মূল্যের বিলাসবহুল গাড়ি।
যুগান্তরের অনুসন্ধানে তার সম্পদের একটি ক্ষুদ্র অংশের সন্ধান মেলে। উত্তরা ৯ নম্বর সেক্টরের ৪ নম্বর রোডের ২৭ নম্বর হোল্ডিংয়ের ৬ তলা বাড়িতে বসবাস করেন মিল্কি। ২৬ ফেব্রুয়ারি সেখানে হাজির হন যুগান্তর প্রতিবেদক। এ সময় দেখা যায়, লেকপাড় ঘেঁষে নির্মাণ করা হয়েছে ৭ তলা আলিশান ভবন। বর্তমানে প্লটসহ বাড়ির মূল্য ২০ কোটি টাকারও বেশি। সিসি ক্যামেরা নিয়ন্ত্রিত ভবনে সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা প্রহরী ছাড়াও সার্বিক ব্যবস্থাপনার জন্য একজন ম্যানেজার আছেন। ভবনের সামনে ঝুলছে ‘টু-লেট’ সাইনবোর্ড।
ভাড়াটিয়া পরিচয়ে ভবনে ঢুকতেই গ্যারেজে তিনটি বিলাসবহুল গাড়ি দেখা যায়। একটি টয়োটা হ্যারিয়ার (ঢাকা মেট্রো ঘ-১৫-২৪৪৬), একটি কালো টয়োটা ল্যান্ডক্রুজার প্রাডো জিপ (ঢাকা মেট্রো ঘ-১৩-৬৪০৩) এবং রাজউকের স্টিকার লাগানো একটি সাদা টয়োটা সেডান কার (ঢাকা মেট্রো গ-১৩-৭২৩৫)। এসব গাড়ির একেকটির মূল্য কয়েক কোটি টাকা।
ভবনের নিরাপত্তারক্ষী সোহেল জানান, বাড়ির মালিকের নাম সামসুল আলম মিল্কি। তিনি রাজউকে চাকরি করেন। শ্রমিক লীগের নেতা।
সূত্র জানায়, সামসুল আলম মিল্কি আগে রাজউকের দৈনিক মজুরিভিত্তিক কর্মী ছিলেন। পরে জুনিয়র হিসাব সহকারী পদে তৃতীয় শ্রেণির চাকরি নেন। একপর্যায়ে কর্মচারী ইউনিয়নেও সক্রিয় হয়ে ওঠেন তিনি। ২০০২ সালে রাজধানীর খিলক্ষেতে রাজউক ট্রেড সেন্টার নির্মাণ শুরু হলে তার কপাল খুলে যায়। কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক পদের প্রভাব খাটিয়ে অন্তত ২০টি দোকানের পজেশন নিজের নিয়ন্ত্রণে নেন মিল্কি। এরপর তাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। এছাড়া পূর্বাচল ও ঝিলমিল প্রকল্পে একাধিক প্লট, নিকুঞ্জ আবাসিক এলাকায় ১/ডি এবং ১৩ নম্বর রোডে ডুপ্লেক্স বাড়ি আছে মিল্কির।
বাড়ি গাড়িসহ অঢেল সম্পদের বিষয়ে বক্তব্য জানার জন্য শনিবার সামসুল আলম মিল্কির মোবাইল নম্বরে কল করা হলে তিনি ফোন ধরেননি। পরে বক্তব্য চেয়ে খুদে বার্তা পাঠানো হয়। কিন্তু এতেও তিনি সাড়া দেননি।
সবুজ টাওয়ার : বরাদ্দপত্রে ছবি বদল, ক্ষতিগ্রস্তদের প্লট জালিয়াতি ও নথি গায়েবসহ বিস্তর অভিযোগ আছে পূর্বাচল স্টেট শাখার কেরানি জাহিদুল ইসলাম ওরফে সবুজের বিরুদ্ধে। তিনি সর্বসাকুল্যে বেতন পান ৩২ হাজার টাকা। অথচ রাজধানীর সবুজবাগে দুই হাজার বর্গফুটের নিজস্ব বিলাসবহুল ফ্ল্যাটে বসবাস করেন সবুজ। ঢাকার অদূরে গাজীপুরের ভবানিপুরে সাজেক ইকো রিসোর্ট অ্যান্ড ভিলেজ নামে রিসোর্ট রয়েছে তার। এছাড়া যৌথ মালিকানায় রাজধানীর দক্ষিণ মাদারটেক চৌরাস্তাসংলগ্ন কবরস্থানের কাছে ১০ তলা ভবন নির্মাণ করছেন।
২৭ ফেব্রুয়ারি দুপুরে সরেজমিনে মাদারটেক চৌরাস্তায় দেখা যায়, ১০ কাঠা জায়গার ওপর তিন ইউনিটবিশিষ্ট ভবনের নির্মাণকাজ প্রায় শেষ। এখন ১০ম তলার ছাদ ঢালাইয়ের কাজ চলছে। নির্মাণ শ্রমিকরা জানান, চার কক্ষের একেকটি ফ্ল্যাটের আয়তন ১৮শ বর্গফুটের বেশি। দুটি লিফট ও নিজস্ব জেনারেটর সুবিধাসম্পন্ন একেকটি ফ্ল্যাটের মূল্য কোটি টাকার ওপরে।
স্থানীয়রা জানান, জাহিদুল ইসলাম সবুজের সঙ্গে যৌথভাবে এই ভবনের মালিকানায় আছেন পূর্বাচল প্রকল্পের উপসহকারী প্রকৌশলী আব্দুর রউফ, পূর্বাচল এস্টেট শাখার উচ্চমান সহকারী আবু জোহা মুরাদ ও নিুমান সহকারী আব্দুল ওয়াহাবসহ কয়েকজন। এই ভবন ছাড়াও দক্ষিণ মাদারটেক এলাকার ১৪০/১ নম্বর হোল্ডিংয়ে যৌথ মালিকানায় তাদের আরেকটি বাড়ি আছে।
এ প্রসঙ্গে বক্তব্য জানার জন্য শনিবার জাহিদুল ইসলাম সবুজের মোবাইল নম্বরে ফোন করা হয়। কিন্তু ফোনে রিং হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
কালা জাহাঙ্গীর : জোন-৩-এর অফিস সহকারী জাহাঙ্গীর আলম ওরফে কালা জাহাঙ্গীর রাজউকে কোটিপতি হিসাবে পরিচিত। ১০ তলাকে ১২ তলা এবং ১২ তলাকে অনায়াসে ১৫ তলায় রূপান্তরে জাহাঙ্গীরের জুরি মেলা ভার। খোদ রাজউকেই তাকে বলা হয় প্ল্যান জালিয়াতির ‘ডন’। জাহাঙ্গীরের দুর্নীতি-অপকর্মের ফিরিস্তি তুলে ধরে ৮ আগস্ট দুদকে লিখিত অভিযোগ দেন জনৈক আব্দুল মতিন। এতে বলা হয়, ‘জাল-জালিয়াতি ও ঘুস বাণিজ্যের মাধ্যমে বিপুল অর্থসম্পদের মালিক বনে গেছেন জাহাঙ্গীর। ঢাকার অদূরে সাভারে প্রাসাদোপম বাড়ি আছে তার।
অভিযোগের সূত্র ধরে জাহাঙ্গীরের বাড়ির খোঁজে পহেলা মার্চ সাভারের বলিভদ্র বাজারে হাজির হন যুগান্তর প্রতিবেদক। বাজারের পূর্বদিকে একটি সরু রাস্তা চলে গেছে শ্রীপুর তালপট্টির দিকে। সেখান থেকে মিনিট পাঁচেক হাঁটলে ভাদাইল মহল্লা। ঢোকার মুখেই ইউনিয়ন পরিষদের রাস্তা পাকাকরণের কাজ করছেন স্থানীয় শ্রমিকরা। তাদের কাছে জাহাঙ্গীরের বাড়ি সম্পর্কে জানতে চাইলে পাশের একটি ৬ তলা ভবন দেখিয়ে দেন তারা। বলেন, ‘ওটাই জাহাঙ্গীরের বাড়ি। তবে তাকে এখানে পাবেন না। তিনি ঢাকায় থাকেন। বাড়িটির সামনে গিয়ে দেখা যায়, পাঁচ কাঠা জায়গার ওপর নির্মিত বাড়িটি বিশাল। গাড়ি পার্কিংসহ ৬ তলার পুরোটাই ভাড়া দেওয়া।
সূত্র বলছে, সাভারে বাড়ি ছাড়াও মিরপুর শেওড়াপাড়ায় সাড়ে তিন কোটি টাকার ফ্ল্যাট, পূর্বাচল ও উত্তরায় একাধিক প্লট আছে জাহাঙ্গীরের। এছাড়া গ্রামের বাড়ি সিরাজগঞ্জের কাজীপুর উপজেলা গান্দাইল গ্রামে রয়েছে বিপুল পরিমাণ ভূসম্পত্তি।
এ বিষয়ে বক্তব্য জানার জন্য শনিবার জাহাঙ্গীর আলমের মোবাইলে একাধিকবার কল করা হয়। কিন্তু তিনি ফোন ধরেননি। পরে বক্তব্য চেয়ে খুদে বার্তা পাঠানো হয়। কিন্তু তিনি কোনো বক্তব্য দেননি।
কোটিপতি রেবেকা : ঢাকায় একাধিক বাড়ির মালিক পূর্বাচল এস্টেট শাখার তত্ত্বাবধায়ক রেবেকা ইয়াসমিন। এর মধ্যে রাজধানীর উত্তরা ১১ নম্বর সেক্টরে, কদমতলা বাসাবো ও প্রগতি সরণিতে তিনটি বাড়ির খোঁজ পায় যুগান্তর। রেবেকা বর্তমানে উত্তরায় ১১ নম্বর সেক্টরের ১৭ নম্বর রোডের ৭৭নং বাড়িতে সপরিবারে বসবাস করছেন।
২৬ ফেব্রুয়ারি সেখানে গেলে দেখা যায়, ৩ কাঠা জায়গার ওপর আধুনিক স্থাপত্য নকশায় ছয় তলা ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। ভবনে লিফট স্থাপন এখনো বাকি। কিন্তু ইতোমধ্যে সব ফ্ল্যাট ভাড়া হয়ে গেছে। ভবন মালিক সম্পর্কে জানতে চাইলে নিরাপত্তাকর্মী শহিদুল ইসলাম বলেন, বাড়ির মালিকের নাম রেবেকা। তিনি রাজউকে চাকরি করেন।
সূত্র জানায়, প্রাতিষ্ঠানিক প্লটের তদবির বাণিজ্য করে বিপুল অঙ্কের অর্থের মালিক হয়েছেন রেবেকা। এছাড়া তার বিরুদ্ধে রাজউকের নথি জালিয়াতির অভিযোগ আছে। আগে তিনি গুলশান স্টেট শাখায় ডিলিং সহকারী পদে টানা ৫ বছর কর্মরত ছিলেন। পরে পদোন্নতি পেয়ে তত্ত্বাবধায়ক হিসাবে পূর্বাচলে পোস্টিং নেন। এরপর সেখানেই আছেন টানা ১৪ বছর।
অঢেল অর্থ সম্পদের বিষয়ে বক্তব্য জানার জন্য শনিবার রেবেকা ইয়াসমিনের মোবাইলে ফোন করা হলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। এর আগে একাধিকবার তার বাড়িতে গিয়েও রেবেকার সাক্ষাৎ পাওয়া যায়নি।
ঘুসের রাজা কাইয়ুম : নকশা শাখার অফিস সহকারী আব্দুল কাইয়ুমকে ‘ঘুসের রাজা’ বলা হয়। তিনি অঢেল সম্পদের মালিক। রাজধানীর ডেমরা এলাকায় বহুতল আবাসিক ভবন উঠছে তার। ডগাইর ফার্নিচার মোড়ে রাজউকের কাইয়ুম বললে সবাই একনামে তার বাড়ি চেনে। ২৭ ফেব্রুয়ারি সরেজমিন কাইয়ুমের বাড়িতে গেলে দেখা যায়, বাড়ির তিন তলা পর্যন্ত নির্মাণকাজ শেষ। দ্বিতীয় তলায় বসবাস করছেন কাইয়ুম। বাড়িতে ঝুলছে ফ্ল্যাট ভাড়ার ‘টু-লেট’ সাইনবোর্ড। ভবনে ঢুকতেই কাইয়ুমের সাক্ষাৎ পাওয়া যায়। ভাড়াটিয়া পরিচয়ে এ প্রতিবেদকের সঙ্গে তার কথা হয়। কাইয়ুম নিজেকে রাজউক কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে বলেন, রাজউকে চাকরি করার কারণে সব নিয়মকানুন মেনে তিনি বাড়ি নির্মাণ করছেন। ভবনের নকশা ৮ তলার। নকশার বাইরে এদিক-সেদিক কিছু করবেন না তিনি।
বক্তব্য জানতে চেয়ে শনিবার কাইয়ুমের মোবাইল নম্বরে একাধিকবার কল করা হয়। কিন্তু তিনি ফোন রিসিভ করেননি। পরে প্রতিবেদকের পরিচয় দিয়ে খুদে বার্তা পাঠানো হয়। কিন্তু তিনি কোনো বক্তব্য দেননি।
হিটলার জাহাঙ্গীর : পূর্বাচল এস্টেট শাখার অফিস সহকারী জাহাঙ্গীর আলম চাকরির পাশাপাশি ব্যবসা করেন। উত্তরায় বিশাল রেস্টুরেন্ট আছে তার। উত্তরা ৭ নম্বর সেক্টরে ৭১ নম্বর প্লটে ‘রাজউক রাজীব কসমো শপিং কমপ্লেক্সে’ তার রেস্টুরেন্টের নাম ‘প্যান ডি এশিয়া’। এছাড়া কসমো শপিং কমপ্লেক্সের অন্যতম মালিক তিনি। বর্তমান বাজারে সেখানে একেকটি ফ্লোরের মূল্য ১০ কোটি টাকারও বেশি।
৯ মার্চ সরেজমিন প্যান ডি এশিয়া রেস্টুরেন্টে গিয়ে দেখা যায়, ২টি ফ্লোরে (৫ তলা ও ৭ তলা) রেস্টুরেন্ট। আয়তন ১০ হাজার বর্গফুটেরও বেশি। কিন্তু একজন ক্রেতাও নেই। সুনসান রেস্টুরেন্টে কর্মচারীদের বেশির ভাগই ঝিমাচ্ছে। ব্যবসা কেমন হচ্ছে জানতে চাইলে এক কর্মচারী বলেন, ব্যবসা তেমন একটা নেই। তবে স্যার (জাহাঙ্গীর) নিজেই ফ্লোরের মালিক। তাই ভাড়া লাগে না।
সূত্র বলছে, জাহাঙ্গীর অনেকটা আরব শেখদের মতো অভিজাত জীবনযাপন করেন। সন্ধ্যার পর বিভিন্ন মদের বার ও তারকা হোটেলে ঘোরাফেরা করতে দেখা যায় তাকে। বিশেষ করে কাকরাইলের হোটেল রাজমনি ঈশাখাঁ, পল্টনের হোটেল ফার্স, নিকুঞ্জ এলাকার হোটেল রিজেন্সি এবং লা-মেরিডিয়ানের নিয়মিত অতিথি জাহাঙ্গীর।
সূত্র জানায়, প্লট জালিয়াতির পাশাপাশি বেনামি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দেখিয়ে নিজেও পূর্বাচলে ৩ বিঘার প্রাতিষ্ঠানিক প্লট নিয়েছেন জাহাঙ্গীর। এছাড়া পূর্বাচলে ৫ কাঠার আবাসিক প্লট, উত্তরা তৃতীয় প্রকল্পে ৩ কাঠার প্লট এবং শান্তিনগর ও বারিধারায় ফ্ল্যাট আছে তার।
রেস্টুরেন্ট ব্যবসা এবং অঢেল সম্পদের মালিকানা সম্পর্কে শনিবার রাতে মোবাইল ফোনে প্রশ্ন করা হলে জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘রেস্টুরেন্ট ব্যবসা তার নয়। তিনি অঢেল সম্পদের মালিক নন। তবে এ বিষয়ে আরও বিস্তারিত কিছু জানতে হলে রাজউক অফিসে যেতে বলেন তিনি।
ঘুস দম্পতি : রাজউকের কেরানি দম্পতি আনোয়ার হোসেন আলম এবং তার স্ত্রী কম্পিউটার অপারেটর ফারহানা প্রভাবশালী হিসাবে পরিচিত। তাদের অঢেল সম্পদের গল্প রাজউকে সবার মুখে মুখে। বিশেষ করে যাত্রাবাড়ী ১৬/২ শহীদ ফারুক রোডে ৯ তলা ভবন, নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ড এলাকায় নিজস্ব বাড়ি, পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে ৩ কাঠার ২টি প্লট, উত্তরখান মাস্টারবাড়ী এলাকায় ৭ কাঠার প্লট, উত্তরা ১৮ নম্বর সেক্টরে ৯ নম্বর হোল্ডিংয়ে ১৬শ বর্গফুটের ফ্ল্যাটসহ অঢেল সম্পদের খবর আর গোপন নেই। ব্যক্তিগত গাড়িতে (ঢাকা মেট্রো গ-৪২০১৩৮) তারা অফিসে যাতায়াত করেন।
বক্তব্য জানার জন্য শনিবার আনোয়ার হোসেন আলমের মোবাইলে কল করা হয়। কিন্তু তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
ধরাছোঁয়ার বাইরে : জোন-১-এর পরিচালক হাফিজুর রহমানের বিরুদ্ধে প্লট জালিয়াতির অভিযোগ প্রমাণিত হলে মামলা করে দুদক। কিন্তু মামলা মাথায় নিয়েও তিনি দুদফা পদোন্নতি বাগিয়ে নিতে সক্ষম হন। অনেকেই বলেন, হাফিজুরের হাত নাকি অনেক লম্বা। প্রভাবশালী মহলে হট কানেকশন থাকায় তার কিছুই হবে না। দুর্নীতির অঢেল টাকায় বিপুল পরিমাণ সম্পদ গড়েছেন হাফিজ। পূর্বাচল প্রকল্পের কালীগঞ্জ অংশে বেনামে অন্তত ১০টি প্লটের মালিকানা আছে তার।
বক্তব্য জানতে পরিচালক হাফিজুর রহমানের মোবাইল নম্বরে কল করা হলে নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়। অফিসে গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি।
সূত্র বলছে, রাজউকের জোন-৫-এর উচ্চমান সহকারী (অতিরিক্ত) ফাতেমা বেগম ওরফে মলির বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ভূরিভূরি। মেহেদী হাসান নামের এক ভুক্তভোগী ২০২০ সালের ১১ অক্টোবর মলির বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে লিখিত অভিযোগ দেন। এতে বলা হয়, ‘মলি একজন চূড়ান্ত ঘুসখোর কর্মচারী। চলাফেরা করেন নতুন মডেলের নোহা মাইক্রোবাসে (নম্বর ঢাকা মেট্রো-চ-১৫-৪৬১৮)। এছাড়া রাজধানীর ১৫/এ জিগাতলায় ডার্লিং পয়েন্ট অ্যাপার্টমেন্টে তার ৩টি ফ্ল্যাট আছে। যার মূল্য কয়েক কোটি টাকা। এ ছাড়া পূর্বাচলে তিন কাঠার ৩টি প্লটসহ নামে-বেনামে অঢেল সম্পদ আছে তার।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রাজউকের সদস্য মেজর (অব.) শামসুদ্দিনের পিএ হিসাবে কর্মরত থাকায় মলি নিজেকে প্রভাবশালী বলে পরিচয় দেন। দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে এক জায়গায় কর্মরত তিনি। সম্প্রতি উপপরিচালক প্রবীর কুমার দাসের নেতৃত্বে মলির বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু হলে দুদককে ম্যানেজ করতে মরিয়া হয়ে ছুটে বেড়াচ্ছেন মলি।
এছাড়া রাজউকের ডাকসাইটে দুর্নীতিবাজের তালিকায় নাম আছে জোন-৪-এর হিসাবরক্ষক মোফাজ্জল হোসেন ওরফে বিদ্যুৎ, জোন-৩-এর নিুমান সহকারী মহিউদ্দীন ওরফে মাস্টার মহিউদ্দিন, রাজউকের পাম্পচালক নজরুল ইসলাম ওরফে ধামরাই, কেরানি মোশাররফ হোসেন ওরফে স্কাই এবং পূর্বাচল প্রকল্পের কম্পিউটার অপারেটর গিয়াস উদ্দিন ওরফে পাঠান।
এ প্রসঙ্গে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান যুগান্তরকে বলেন, ‘যাদের অঢেল সম্পদের তথ্য বেরিয়ে আসছে, তারা এককভাবে অনিয়ম বা দুর্নীতি করেনি। এর সঙ্গে উচ্চপর্যায়ের অনেকেই জড়িত। এছাড়া সুবিধাভোগী যারা, তারাও প্রভাবশালী। তারাই দুর্নীতিবাজদের সুরক্ষা দেয়। এ অবস্থা বিচারহীনতার সংস্কৃতি তৈরি করে। তাই রাজউক যে বর্তমানে দুর্নীতির একটা প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে, তা থেকে প্রতিষ্ঠানটিকে বের হতে হবে। দুর্নীতিবাজদের কঠোর হাতে দমন করতে না পারলে রাজউক কখনোই কাঙ্ক্ষিত সেবা দিতে পারবে না।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category
© All rights reserved © 2020 SwadeshNews24
Site Customized By NewsTech.Com