বাংলাদেশকে উন্নতির শিখরে উঠাতে হলে প্রয়োজন শেখ হাসিনার সরকারের ধারাবাহিকতা- মো. খসরু চৌধুরী সিআইপি
ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশন (এফবিসিসিআই) শুক্রবার ‘স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে ব্যবসায়ী সম্মেলন’ শীর্ষক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিকাল ৪টা থেকে রাত ৮টা ৪০ মিনিট পর্যন্ত ব্যবসায়ীদের নানা সমস্যাসহ ভবিষ্যৎ করণীয় সম্পর্কে বক্তব্য ধৈর্যসহকারে শোনেন।
সম্মেলনে দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ী ও বিভিন্ন ব্যবসা সংগঠনের নেতারা স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে প্রধানমন্ত্রীর পাশে থাকার অঙ্গীকার করেন। তাঁরা আবারও শেখ হাসিনাকেই প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখতে চান বলে বক্তব্যে উল্লেখ করেন।
ব্যবসায়ীরা বলেন, শেখ হাসিনার বিকল্প শুধু শেখ হাসিনাই। তাকে সরাতে নানা ষড়যন্ত্র হচ্ছে। এ ষড়যন্ত্র প্রতিহত করতে হবে। সংবিধান অনুযায়ী আগামী নির্বাচন সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে হবে। সংবিধানের বাইরে কিছু হবে না। অনুষ্ঠানে উপস্থিত সব ব্যবসায়ী জাতীয় পতাকা নেড়ে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি পূর্ণ সমর্থন ব্যক্ত করেন। সে সময় ব্যবসায়ীরা সমস্বরে বলেন, ‘শেখ হাসিনার সরকার, বারবার দরকার।’
সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, শিল্প-ব্যবসা-বাণিজ্য যত প্রসারিত হবে মানুষের আর্থিক অবস্থা তত ভালো হবে। সরকারের পক্ষ থেকে আমরা সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা করে দিয়েছি। অন্তত ওই হাওয়া ভবনের মতো খাওয়া ভবনও নাই, কিচ্ছু নাই। আপনাদের কেউ ঝামেলা করবে না। আমরা চাই স্মার্ট বাংলাদেশ, স্মার্ট ইকোনমি। তাহলে ব্যবসায়ীরা সব থেকে লাভবান হবেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, শিল্প-কলকারখানা প্রতিনিয়ত পরিবর্তনশীল। আজকে আমাদের সামনে আছে চতুর্থ শিল্পবিপ্লব। যেখানে বেশির ভাগ দক্ষ জনশক্তি দরকার। শুধু স্বপ্ন দেখলেই চলবে না, স্বপ্ন বাস্তবায়নেরও যোগ্যতা অর্জন করতে হবে। আর সেই ধরনের চিন্তাভাবনা থাকতে হবে। তিনি বলেন, আজকে খুব আনন্দিত, এখানে অনেক বয়স্ক অভিজ্ঞ ব্যবসায়ী যেমন আছেন, আবার নতুন প্রজন্মও আছে, যারা উঠতি জনশক্তি, ধীরে ধীরে গড়ে উঠছে। তিনি বলেন, আমাদের দেশের যারা যুব সমাজ তাদের আমরা উৎসাহিত করতে চাই। তারা নিজেরা শুধু পাস করে একটা চাকরির পেছনে ছুটবে না, নিজেরাই উদ্যোক্তা হবে, আরও মানুষকে চাকরি দেবে। সেই যোগ্যতা তারা অর্জন করবে।
এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী সরকারের স্টার্ট আপ প্রোগ্রাম, কোম্পানি আইন পরিবর্তন করাসহ বিভিন্ন উদ্যোগের কথা তুলে ধরে বলেন, আমরা কিন্তু ব্যবসা করি না। অন্তত আমি তো বলতে পারি সরকারপ্রধান হিসেবে ব্যবসার ‘ব’ও বুঝি না। কিন্তু আমরা ব্যবসাকে উৎসাহিত করা, সুযোগ সৃষ্টি করা, সুবিধা তৈরি করে দেওয়া, পরিবেশ তৈরি করে দেওয়া এবং সেই সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করে ব্যবসাবান্ধব একটা সরকার আমাদের; সেটাই আমরা নিশ্চিত করেছি।
শেখ হাসিনা বলেন, অন্তত এইটুকু দাবি করতে পারি, ১৪-১৫ বছর আগে অর্থাৎ সাড়ে ১৪ বছর আগে যে বাংলাদেশ ছিল এখন আর সে বাংলাদেশ নেই। বাংলাদেশকে আমরা অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে গেছি। আপনারাও একবার চিন্তা করে দেখেন, ২০০৮ পর্যন্ত বাংলাদেশের মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কী ছিল। মাথাপিছু আয় কী ছিল বা মানুষের আর্থিক অবস্থা কী ছিল। এখন তো আপনাদের উৎপাদিত পণ্য একেবারে গ্রামে চলে যাচ্ছে।
শেখ হাসিনা বলেন, স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনে ব্যবসায়ীরা সব থেকে লাভবান হবেন। এগিয়ে আসুন, আপনারা কাজ করেন। ২০৪১-এর বাংলাদেশ ক্ষুধা দারিদ্র্যমুক্ত স্মার্ট সোনার বাংলা আমরা গড়ে তুলব। জাতির পিতার স্বপ্ন আমরা গড়ে তুলব।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার ব্যবসাবান্ধব সরকার। আজকের বাংলাদেশ বদলে যাওয়া বাংলাদেশ। এ বদলে যাওয়া দেশকে আরও এগিয়ে নিতে হবে। বাংলাদেশ গত দেড় দশকে এগিয়েছে ঈর্ষণীয়ভাবে। হাজার বছরে জাতি অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে যতটা এগিয়েছে মাত্র দেড় দশকের অর্জন তার চেয়েও বেশি। এ অর্জনের প্রধান কারণ জননেত্রী শেখ হাসিনার ব্যবসা-বাণিজ্যবান্ধব নীতি। এই নীতির বদৌলতে দেড় দশকে হাজার হাজার শিল্প ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে।
বাংলাদেশের অর্থনীতি প্রতিদিনই নিজেকে অতিক্রম করছে। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে বলেই ইতোমধ্যে হতদরিদ্র অবস্থা থেকে মধ্য আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে। বিশ্বের সবচেয়ে মর্যাদাবান অর্থনৈতিক বিশ্লেষক প্রতিষ্ঠান গোল্ডম্যান শ্যাক্স বলেছে, ২০৭৫ সাল নাগাদ বাংলাদেশ বিশ্বের ১৬তম অর্থনীতিতে পরিণত হবে। আজ বাংলাদেশের মানুষ যে সব দেশে কাজ পাওয়াকে স্বপ্ন বলে ভাবছে সেসব দেশের অবস্থানও বাংলাদেশের পেছনে থাকবে। বাংলাদেশ গত দেড় দশকে যে ইন্দ্রজালিক অগ্রগতি লাভ করেছে তা সম্ভব হয়েছে দেশের শিল্প ক্ষেত্রে তথা ব্যবসা-বাণিজ্য দ্রুত সম্প্রসারণের জন্য। যে দেশের রপ্তানি আয় ছিল স্বাধীনতার আগে মাত্র ২০০ কোটি টাকা সে দেশ আট লাখ কোটি টাকারও বেশি রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করেছে চলতি অর্থবছরে। বাংলাদেশকে উন্নতির শিখরে উঠতে হলে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির চলমান ধারা অব্যাহত রাখতে হবে।
লেখক: পরিচালক, বিজিএমইএ; শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ; চেয়ারম্যান, নিপা গ্রুপ ও কেসি ফাউন্ডেশন।