রাজশাহীর পবা উপজেলার বড়গাছি ইউনিয়নের বড়গাছি বাজার এবং বাজার সংলগ্ন রাস্তার ধারের সরকারি জায়গায় বেড়ে উঠা পাঁচটি বট-পাইকড় গাছ কর্তন বন্ধ করাসহ সেগুলো দ্রুত সংরক্ষণের পদক্ষেপ নিতে রাজশাহীর জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট শামীম আহাম্মেদকে স্মারকলিপি প্রদান করেছেন রাজশাহীর তরুণরা। আজ বৃহস্পতিবার সকালে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে গিয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) কল্যাণ চৌধুরী ও পবার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা লসমী চাকমার সঙ্গে এক তরুণ প্রতিনিধিদল সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন এবং স্মারকলিপির কপি তাদের হাতে তুলে দেন।
সাক্ষাৎকালে তরুণ প্রতিনিধি দলে ছিলেন, গবেষণাধর্মী উন্নয়নমূলক যুব সংগঠন ইয়ুথ এ্যাকশন ফর সোস্যাল চেঞ্জ-ইয়্যাস’র সভাপতি মোঃ শামীউল আলীম শাওন ও বরেন্দ্র ইয়ুথ ফোরাম’র সভাপতি শাইখ তাসনীম জামাল, গবেষণাধর্মী উন্নয়নমূলক যুব সংগঠন ইয়ুথ এ্যাকশন ফর সোস্যাল চেঞ্জ-ইয়্যাস’র সাধারণ সম্পাদক এবং বরেন্দ্র ইয়ুথ ফোরামের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক মোঃ আতিকুর রহমান আতিক, সদস্য রবিন শেখ, ফারজানা নাজনীন মুন্নি, গ্রীন ভয়েস রাজশাহীর সমন্বয়ক আব্দুর রহিমসহ স্থানীয় তরুণ সংগঠন ও ফোরামের প্রতিনিধিবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
স্মারকলিপিতে বলা হয়েছে যে, বাংলাদেশের উত্তর পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত বিশেষ বৈশিষ্ট্য মন্ডিত আদিভূমি বরেন্দ্র অঞ্চল। নিকট অতীতে বরেন্দ্র অঞ্চলখ্যাত রাজশাহীর ঐতিহ্য এবং ইতিহাস অত্যন্ত সুদৃঢ ছিলো। এই অঞ্চলে প্রাচীন সকল বৃক্ষ কেটে দিনে দিনে ‘বৃক্ষ শূন্য’ করা হচ্ছে। একই সাথে বিভিন্ন সময়ে প্রয়োজনে বা অপ্রয়োজনে গাছ খেকোরা কৌশলে বৃক্ষ কর্তন করছেন।
স্মারকলিপি তারা বলেছেন সম্প্রতি প্রত্যক্ষ পর্যবেক্ষণে আমরা জানতে পারি যে, রাজশাহীর পবা উপজেলার বড়গাছি ইউনিয়নের বড়গাছি বাজারে এবং বাজার রাস্তা সংলগ্ন সরকারি জায়গায় বেড়ে উঠা বড় বড় দুটি বট-পাইকড়সহ মোট পাঁচটি বট-পাইকড় গাছ কাটার জন্য জোর প্রচেষ্টা চলছে। আমরা সরেজমিনে গিয়ে দেখতে পাই যে, এ পর্যন্ত একটি পাইকড় গাছের বেদিও ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে গাছ কাটার উদ্দেশ্যে। এমনকি সেখানে গাছের নিচে এক্সাভেটর (ভেকু) যন্ত্রও রাখা হয়েছে। স্থানীয় প্রভাবশালী মহলের ভয়ের কারণে জনগোষ্টী সরাসরি প্রতিবাদ করতেও ভয় করছেন। জানা যাচ্ছে সরকারি জায়গাটিতে মার্কেট করার লক্ষ্যে গাছগুলো কাঁটা হবে।
বড়গাছি বাজারে এই বট-পাইকড় গাছগুলোতে বিভিন্ন পাখির বসবাস। এ ছাড়াও এই গাছের ফল খেয়ে পাখির জীবন রক্ষা হয় এবং এই গাছগুলোর ছায়ায় বসে মানুষ শীতল হয়। একই সাথে বট-পাইকড় গাছগুলোর নীচে প্রান্তিক চাষিরা তাঁদের উৎপাদিত শস্য-ফসল খোলা বাজারে বিক্রি করেন। কিন্তু আমরা জানতে পারি প্রভাবশালী মহল এই বাজারটির জায়গাও নাকি দীর্ঘ মেয়াদে লীজ নিয়েছেন। আমাদের বোধগম্য হয়না যে, কিভাবে একটি বাজার একজন ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠান দীর্ঘ সময়ের জন্য লীজ নেয়। নাকি এগুলো তাঁদের দখল করার অপচেষ্ঠা। স্থানীয় জনগোষ্ঠী কোন তথ্যই সঠিক ভাবে জানতে পাচ্ছেনা। আবার ভয়ে তারা কোথাও জিজ্ঞাসা করতে পারছেন না। আসলে কি হচ্ছে এই বাজার দখলকে কেন্দ্র করে। আমাদের জানামতে বাজার দখলের পাশাপাশি তারা বাজারের সরকারি জায়গায় গাছগুলোও কাটার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন বলেও তুলে ধরা হয়েছে স্মারকলিপিতে।
তরুণরা স্বারকলিপিতে উল্লেখ করেন যে, আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৃক্ষ ও পরিবেশ সুরক্ষার কথা বার বার বলে আসছেন। তিনি পরিবেশ সুরক্ষা করেই সকল উন্নয়নের কথা বলেছেন। এ লক্ষ্যে নানামূখী পদক্ষেপের অংশ হিসেবে ‘বৃক্ষ সংরক্ষণ আইন ২০১৬’ প্রণয়ন করা হয়। সেখানে শুধু বৃক্ষ সুরক্ষাই নয়, প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী বৃক্ষগুলো সংরক্ষণের কথাও বলা হয়েছে। কিন্তু আমরা বাস্তবে দেখছি, উন্নয়নের নামে কিছু অসৎ ব্যক্তি নানা অজুহাতে দেদারসে বৃক্ষ কর্তন করে আমাদের দেশটাকে পরিবেশ বিপর্যয়ের সম্মূখীন করে তুলছে।
তাই তরুণরা রাজশাহীর জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট শামীম আহাম্মেদের কাছে নিম্নলিখিত সুস্পষ্ট দাবি উপস্থাপন করেন। তাদের দাবিগুলো হলো ঃ
রাজশাহীর পবা উপজেলার বড়গাছি ইউনিয়নের বড়গাছি বাজার এবং বাজার সংলগ্ন রাস্তার ধারের সরকারি জায়গায় বেড়ে উঠা পাঁচটি বট-পাইকড় গাছ কর্তন বন্ধ করাসহ সেগুলো দ্রুত সংরক্ষণের পদক্ষেপ নিতে হবে। অন্যথায় যেকোন সময় দুষ্কৃতিকারী মহল গাছগুলো কেটে ফেলবে। একইসাথে রাজশাহী জেলার সকল প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী বৃক্ষগুলো কর্তন বন্ধ করা হয় সংরক্ষণের উদ্যোগ গ্রহণ করার কথাও বলেছেন।
প্রসঙ্গত, আমাদের উন্নয়নের মূল উপাদান হিসেবে এবং বেঁচে থাকতে যে বিষয়টি সবার আগে চলে আসে তা হলো প্রাণবৈচিত্র্য ও পরিবেশ সুরক্ষা। পরিবেশ সুরক্ষা হলো আামদের উন্নয়নের মূলমন্ত্র। আমাদের চারপাশের বৈচিত্র্য নিয়েই আমরা বেঁচে আছি। আর এই প্রাণবৈচিত্র্য বেঁচে থাকার প্রধান ভূমিকা পালন করে বৃক্ষ। বৃক্ষ থেকে সকল প্রাণীকূল অক্সিজেন নিয়ে বেঁচে থাকে। শুধু অক্সিজেনই নয়, বিভিন্ন প্রাণীকুলের খাদ্য, আহার, বাসস্থানসহ নানা কাজে ভূমিকা পালন করে এই বৃক্ষ। বৃক্ষ যদি না থাকে হয়তো এই পৃথিবীতে জীববৈচিত্র্যও থাকবেনা। তাই সকল উন্নয়নে বৃক্ষ সুরক্ষার কথা বলা হয় এবং বৃক্ষ সুরক্ষায় ‘বৃক্ষ সংরক্ষণ আইন ২০১৬’ প্রণয়ন করা হয়েছে।