হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের মৃত্যুর পর চেয়ারম্যানের পদ ঘিরে দেবর জি এম কাদের ও ভাবি রওশন এরশাদের মধ্যকার কোন্দল বেশ কয়েকবার প্রকাশ্যে এসেছে। এরমধ্যে কয়েক দফায় এই বিরোধ তীব্র হতে দেখা যায়। পাল্টাপাল্টি বহিষ্কার, সংবাদ সম্মেলন এবং চেয়ারম্যান ঘোষণা করার দৃশ্যও গণমাধ্যমে এসেছে। ফের দেবর-ভাবির এই দ্বন্দ্বের কারণে দলটি ভাঙনের মুখে পড়েছে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে থেকেই শুরু দলটির মধ্যে কোন্দল দেখা দেয়। নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার কথা বলে হঠাৎ নির্বাচনে আসার ঘোষণা, সরকারি দলের সঙ্গে আসন ভাগাভাগি ও টাকা নিয়ে ভাগ-বাটোয়ারা, মনোনয়ন দেওয়া, নির্বাচনে রওশন এরশাদের মূল্যায়ন না করা, তৃণমূল অস্থিরতা এবং ৬০০-এর বেশি নেতাকর্মী পদত্যাগসহ নানা ইস্যু নিয়ে অভ্যন্তরীণ কোন্দল চলছিল। অবশেষে সেই দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে আসলো।
গত ২৮ জানুয়ারি হঠাৎ বর্তমান চেয়ারম্যান জি এম কাদেরকে অব্যাহতি দিয়ে নিজেকে দলের চেয়ারম্যান ঘোষণা করেছেন রওশন এরশাদ। একই সঙ্গে দলটির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুকে অব্যাহতি দিয়ে প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী মামুনুর রশীদকে দলের মহাসচিব হিসেবে দায়িত্ব দেন তিনি। যদিও রওশনের এই সিদ্ধান্তকে আমলে না নেওয়ার কথা জানিয়েছেন সংবাদ সম্মেলন করেছেন চুন্নু। দলটির এমন নাটকীয়তার মধ্যে আগামীতে আর রাজনীতি না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি দরটির সাবেক মহাসচিব ও দল থেকে বহিষ্কৃত নেতা মসিউর রহমান রাঙ্গা।
সংবাদ সম্মেলনে মুজিবুল হক চুন্নু জানান, দলের গঠনতন্ত্রে দলের প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদকে এমন কোনো ক্ষমতা দেওয়া হয়নি। তাই রওশনের ঘোষণার কোনো ভিত্তি নেই। একে আমলে নিচ্ছে না জাতীয় পার্টি। জি এম কাদেরের নেতৃত্বে যে দল আছে সেটিই জাতীয় পার্টি।
যদিও রওশন এরশাদের মুখপাত্র কাজী মামুনুর রশীদ বলেন, বেগম রওশন এরশাদ দলের গঠনতন্ত্রের ২০-এর ১ ধারা অনুযায়ীই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আর গঠনতন্ত্র মেনেই তাদেরকে (জি এম কাদের ও মুজিবুল হক চুন্নু) অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
দলটিতে বারবার এমন কোন্দোল আর নিতে পারছেন না তৃণমূল নেতাকর্মী। তারা জানান, জাতীয় পার্টিতে কী হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছি না। নির্বাচনের আগ থেকেই সমস্য চলছিল। নির্বাচনের মাঠে নামিয়ে খোঁজখবর না নিয়ে উল্টো সরকারের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার তথ্যও আমরা জানতে পেরেছি। নির্বাচনের পর অনেক প্রার্থী তো এ নিয়ে সংবাদ সম্মেলনও করেছে। এখন দেখছি আবার পদ নিয়ে কাড়াকাড়ি। দলের এমন অবস্থা দেখতে আর ভালো লাগে না। এখন আর চিন্তাও করি না। দেখা যাক কোথায় গিয়ে দাঁড়ায়।
জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও অতিরিক্ত মহাসচিব রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, দলে কোনো দ্বন্দ্ব নেই। জাতীয় পার্টি সাতবার ভেঙেছে, আরেকটা ভাঙন হলে আটবার হবে।
এদিকে রোববার দুপুর থেকে জাতীয় পার্টিতে যখন প্রকাশ্যে দ্বন্দ্ব চলছিল, ঠিক ওইদিন সন্ধ্যায় জি এম কাদেরকে জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা এবং আনিসুল ইসলাম মাহমদুকে উপনেতা ঘোষণা করে সংসদ সচিবালয় থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।
উল্লেখ্য, ১৯৮৬ সালের ১ জানুয়ারি রাজনৈতিক দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে জাতীয় পার্টি। দলটির প্রতিষ্ঠাতা সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ২০১৯ সালের ১৪ জুলাই মারা যান।