রাষ্ট্র সংস্কারে আইনজীবীদের ভূমিকা শীর্ষক আলোচনা সভার আয়োজন করে বাংলাদেশ আইনজীবী অধিকার পরিষদ। শনিবার (২১ সেপ্টেম্বর) বিকাল ৪ টায় জাতীয় প্রেসক্লাবে আব্দুস সালাম হলে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ আইনজীবী অধিকার পরিষদ, গণঅধিকার পরিষদের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন হিসেবে আইনজীবীদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় কাজ করে যাচ্ছে। এই আলোচনা সভা থেকে আইনজীবী অধিকার পরিষদের নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়।
আলোচনা সভায় গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর বলেন, ‘উচ্চ আদালতে বিচারপতি নিয়োগের বিষয়ে নিয়ম থাকা উচিত। আদালতকে আইন মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ করা উচিত না। বিচার বিভাগের পূর্ণাঙ্গ স্বাধীনতার যে কথা আমরা বলি, তা নিশ্চিত করতে হবে। বিপ্লবের পর বিভিন্ন দেশে সংবিধান পরিবর্তন হয়। বাংলাদেশের যে সংবিধান তা মানুষের মৌলিক অধিকার সুরক্ষা দিতে পারে নাই, তাই নতুন করে সংবিধান পরিবর্তন করলে আমাদের আপত্তি নাই। স্বাধীনতার ৫৩ বছরে আমরা বাংলাদেশ কে নতুন করে গড়ার সুযোগ পেয়েছি, এখন সময় এসেছে দেশকে সংস্কার করা।বিভিন্ন সময় দেশের মানুষ জীবন দিয়েছে কিন্তু দেশের গুণগত পরিবর্তন হয় নাই, এই জাতি তো বারবার জীবন দিবে না, তাই এখন সময়কে কাজে লাগাতে হবে। জেলায় জেলায় নিরপেক্ষ লোককে পাবলিক প্রসিকিউটর হিসেবে নিয়োগ দিতে হবে।
নুর আরও বলেন, ২০১৮ সালে আমরা কোটা আন্দোলন করেছি, চাইলে আমরা চাকরিতে ঢুকে যেতে পারতাম। আমরা যখন দেখেছি একটা অংশ কোটাকে সংস্কার করে লাভ নেই, রাষ্ট্রের রন্ধ্রে রন্ধ্রে যে এরকম শত সহস্র অনিয়ম সেগুলো সংস্কার করবে কারা? জাতির সামনে সেরকম নেতৃত্ব নাই। সেজন্যে আমরা রাজপথ থেকে উঠে এসে রাজনৈতিক দল গঠন করেছি। দল ঘোষণার এক বছরের মধ্যেই নির্বাচন কমিশনের সকল শর্ত পূরণ করে নিবন্ধন পেয়েছি। আমরা উদ্যোগ নিয়েছিলাম আজকে সফল হয়েছি, তরুণ সৎ মেধাবীদের রাজনীতিতে এগিয়ে আসতে হবে। নতুন নেতৃত্ব ছাড়া বাংলাদেশ নতুনভাবে বিনির্মাণ সম্ভব না, ৫৩ বছরেও যারা পারেনি, তারা সামনেও পারবে কি না সেটা নিয়ে জনগণের সংশয় আছে। নবগঠিত আইনজীবী অধিকার পরিষদকে বলব আপনারা তৃণমূল পর্যায়ে যাবেন। আইনজীবী অধিকার পরিষদ এর মূল কাজ হবে সুবিচার নিশ্চিত করা। এ সময় নুরুল হক নুর এডভোকেট গোলাম সওয়ার জুয়েল আহ্বায়ক, অ্যাডভোকেট সরকার নুরে এরশাদ সিদ্দিকীকে সদস্য সচিব করে বাংলাদেশের আইনজীবী অধিকার পরিষদের কমিটি ঘোষণা করেন।
গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মোঃ রাশেদ খাঁন বলেন, শেখ হাসিনার পতন হলেও বিচারবিভাগ, সচিবালয়, পুলিশ- প্রশাসনে ফ্যাসিবাদ রয়ে গেছে। আওয়ামী সেটাপ পরিবর্তন না করে রাষ্ট্র সংস্কার করা সম্ভবপর নয়। ৫৬ জেলায় আওয়ামীলীগের তালিকার ডিসি কারা নিয়োগ দিলো? ২৫ জন আওয়ামী শপথবদ্ধ বিচারক এখনো হাইকোর্টে বহাল। নিন্ম আদালতের জাজরা আওয়ামীলীগের। পুলিশের ৯০ শতাংশ আওয়ামী পরিবারের। সুতরাং অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে বলবো, সবকিছু ঢেলে সাজান। আওয়ামীলীগ ইতোমধ্যে ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। পাহাড়ে অশান্তি কারা করছে, খতিয়ে দেখুন। আমরা পাহাড় ও সমতলের মধ্যে কোন বৈষম্য-পার্থক্য চাইনা। আশা করি সরকার অচিরেই সব নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে। আমরা সরকারকে সহযোগিতা করছি, কিন্তু কেউ কেউ দেশকে অস্থিতিশীল করতে চক্রান্ত করছে। বাংলাদেশকে নিয়ে কোন ষড়যন্ত্র সফল হতে দেওয়া হবেনা।
সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী বলেন, আইনজীবীদের সংগঠন কারা নেতৃত্ব দিবে সেটাও শেখ হাসিনা ঠিক করে দিতো।আগামীতে সুস্থ ধারার আইনজীবীদের যেকোন আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য আমরা কাজ করবো। বিচার বিভাগকে আমাদের রক্ষা করতে হবে। আজকে প্রধান বিচারপতি তার পরিকল্পনা প্রকাশ করছেন, আমরা দেখতে চাই বাস্তবে তার কতটা প্রতিফলন হয়।
গণঅধিকার পরিষদের মানবাধিকার বিষয়ক সম্পাদক এডভোকেট খালিদ হাসান বাংলাদেশ আইনজীবী অধিকার পরিষদের পক্ষ থেকে ১১ দফা প্রস্তাবনা তুলে ধরেন।
আইনজীবী অধিকার পরিষদের নবঘোষিত কমিটির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট গোলাম সারওয়ার খান জুয়েলের সভাপতিত্বে সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট সরকার নুরে এরশাদ সিদ্দিকীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন, এসসিবিএ সংবিধা নসংরক্ষণ কমিটির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সৈয়দ মামুন মাহবুব, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এরশাদুল বারী খন্দকার, এবি পার্টির যুগ্ম সদস্য সচিব ব্যারিস্টার সানি আব্দুল হক, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট খাদেমুল ইসলাম, গণঅধিকার পরিষদের উচ্চতর পরিষদের সদস্য আবু হানিফ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাসান আল মামুন, আইন সম্পাদক শেখ শওকত হোসেন, সহ-আইন সম্পাদক অ্যাডভোকেট হাবিবুর রহমান প্রমুখ।