সব দলকে নিয়ে সরকার গঠন করতে চাই: তারেক রহমান

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, দেশকে পুনর্গঠন করতে হলে বিএনপি একা পারবে না। সবাইকে সঙ্গে নিয়ে করতে হবে।

সেজন্য আমরা জাতীয় সরকারের কথা বলেছি। আমরা আন্দোলনরত যে দলগুলো ছিলাম, একসঙ্গে আমরা আন্দোলন করেছি। আমরা চাই সব দলকে নিয়ে এমন একটি সরকার গঠন করতে যাতে মানুষ তাদের মতামত রাখতে পারবে এবং সবাই মিলে কাজ করতে পারবে। তিনি জনগণের প্রত্যাশা পূরণে কাজে নেমে পড়তে দলের নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, জনগণের আস্থায় থাকতে না পারলে ছিটকে পড়তে হবে।

রোববার ঢাকা, রংপুর ও বরিশালে আয়োজিত তিনটি কর্মশালায় আলাদাভাবে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন।

জনগণের প্রত্যাশা পূরণে কাজ শুরুর সময় এসেছে : বিকালে রাজধানীর খিলক্ষেতে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি আয়োজিত কর্মশালায় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তারেক রহমান বলেন, জনগণের সঙ্গে থাকুন, জনগণকে সঙ্গে রাখুন। এজন্য জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী যেভাবে চলা দরকার, সেভাবে চলুন। দেশ ও দেশের মানুষকে সামনে রেখে গত ১৫-১৬ বছর আমরা যে কথাগুলো বলেছি, সেই মোতাবেক কথার পালা শেষ, এখন কাজের পালা শুরু। কাজ শুরু করার সময় এসেছে।

খিলক্ষেতের বরুয়া আলাউদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে ৩১ দফা নিয়ে এই কর্মশালার আয়োজন করা হয়। খিলক্ষেত থানা বিএনপির আহ্বায়ক হাজি ফজলুল হক ফজলুর সভাপতিত্বে কর্মশালায় বক্তব্য দেন ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্য সচিব মোস্তফা জামান, যুগ্ম আহ্বায়ক মো. আক্তার হোসেন, মোস্তাফিজুর রহমান সেগুন, এসএম জাহাঙ্গীর, ফেরদৌসী আহমেদ মিষ্টি, এবিএমএ রাজ্জাক, মো. আক্তার হোসেন, মো. আতাউর রহমান প্রমুখ।

তারেক রহমান আরও বলেন, রাজনীতিতে সবচেয়ে বড় পুঁজি হচ্ছে-জনগণের সমর্থন। এই সমর্থনকে যে কোনোভাবে আমাদের পক্ষে রাখতে হবে। জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী আমাদের চলতে হবে। ৫ আগস্ট পটপরিবর্তনের পর দলের কিছু নেতাকর্মী বিভ্রান্ত হয়েছে জানিয়ে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, হাতের পাঁচ আঙুল সমান নয়। ঠিক একইভাবে সব মানুষই এক রকম নয়। আমাদের মধ্যে হয়তো বা কিছু কিছু মানুষ থাকতে পারে, আমাদের কিছু সহকর্মী থাকতে পারে, যারা কিছু বিষয়ে বিভ্রান্ত হয়ে গিয়েছে। এই বিভ্রান্তির কারণে তারা এমন কিছু কাজ করছে, যে কাজগুলো মানুষ পছন্দ করছে না।

এ অবস্থায় নেতাকর্মীদের সতর্ক করে দিয়ে তিনি বলেন, আজকে আপনাদের পরিষ্কার একটি কথা বলি-আপনার লক্ষ্য যদি অন্যকিছু হয়ে থাকে, দলের আদর্শকে রক্ষার লক্ষ্য যদি না হয়ে থাকে, দুদিন পরে আপনি ছিটকে পড়ে যাবেন। দল থেকে ছিটকে পড়ে যাবেন, মানুষের সমর্থন থেকে ছিটকে পড়ে যাবেন।

সম্মিলিত প্রচেষ্টায় স্বৈরাচারের পতন : বরিশাল শিল্পকলা একাডেমি এবং রংপুর শিল্পকলা একাডেমি অডিটোরিয়ামে রোববার দিনব্যাপী রাষ্ট্র কাঠামো সংস্কারবিষয়ক ৩১ দফা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বিভাগীয় প্রশিক্ষণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তারেক রহমান বলেন, আমরা আন্দোলন করেছি, বিএনপির নেতাকর্মীরা আন্দোলন করেছে। কিন্তু একক বিএনপির আন্দোলন সফল হয়নি। আন্দোলন সফল হয়েছে আরও অনেক রাজনৈতিক দল, সমাজের সর্বস্তরের মানুষ, সব শ্রেণি-পেশার মানুষ একসঙ্গে নেমে এসেছিল বলে। সবার সম্মিলিত চেষ্টাতেই বিএনপির আন্দোলন সফল হয়েছিল। সবার মিলিত শক্তিতে স্বৈরাচারকে বিদায় করা সম্ভব হয়েছে। ঠিক সেভাবে, পরবর্তিতে দেশকে যদি গড়তে হয়, একক বিএনপি কিন্তু পারবে না দেশকে গড়তে। দেশকে গড়তে হলে পুনর্গঠন করতে হলে, আমাদের পুরো জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে। দল-মত নির্বিশেষে মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে।

তিনি বলেন, প্রান্তিক পর্যায়ে মানুষের কাছে সুফল বয়ে আনতে অর্থনৈতিক বিষয়টি সঠিকভাবে পুনর্বিন্যাস করা হবে। নারীদের সামাজিক শিক্ষাসহ সর্বদিক থেকে মর্যাদা বৃদ্ধির পাশাপাশি পারিবারিক মেরুদণ্ড শক্তিশালী করতে কার্যকরী উদ্যোগ গ্রহণ করবে বিএনপি।

বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক (রংপুর বিভাগ) ও সাবেক উপমন্ত্রী অধ্যক্ষ আসাদুল হাবিব দুলুর সভাপতিত্বে কর্মশালায় সঞ্চালক ছিলেন বিএনপির মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক ডা. মওদুদ আলমগীর পাভেল। বক্তব্য রাখেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, পল্লী উন্নয়নবিষয়ক সম্পাদক ফরহাদ হোসেন আজাদ, আন্তর্জাতিকবিষয়ক উপকমিটির সদস্য সংগীতশিল্পী বেবি নাজনীন, সহকারী প্রশিক্ষক হিসাবে ছিলেন বিএনপির মানবাধিকার কমিটির সদস্য ফারজানা শারমিন পুতুল, মিডিয়া সেলের সদস্য মেহেরা আক্তার বারি, ফারজানা শারমিন, বিএনপি কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আব্দুস সাত্তার পাটোয়ারি প্রমুখ।

অন্যদিকে বরিশাল বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক আকন কুদ্দুসুর রহমানের সভাপতিত্বে কর্মশালায় উপস্থিত ছিলেন ৩১ দফা প্রণয়ন কমিটির সদস্য ইসমাইল জবিউল্লাহ, বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মজিবর রহমান সরোয়ার, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা ড. মাহদী আমিন, বরিশাল বিভাগের সহসাংগঠনিক সম্পাদক মাহমুদুল হক নান্নু, নির্বাহী কমিটির সদস্য নেওয়াজ হালিমা আরলী, কৃষক দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহমুদা হাবিব, বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য প্রফেসর মোর্শেদ হাসান খান, কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু নাসের মুহাম্মদ রহমতউল্লাহ প্রমুখ।

শ্বেতপত্রে অভূতপূর্ব দুর্নীতির চিত্র : এদিকে রোববার সামাজিক মাধ্যমে এক পোস্টে তারেক রহমান লিখেছেন, ‘শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রতিবেদনে হাসিনা সরকারের আমলে অভূতপূর্ব দুর্নীতির চিত্র উঠে এসেছে। এতে দেশের অর্থনীতির দৈন্যদশা ফুটে উঠেছে। হাসিনা সরকার যে চোরতন্ত্র কায়েম করেছিল, এই প্রতিবেদনে সেটাই পরিষ্কার হয়েছে।’

পোস্টে রাষ্ট্র সংস্কারে বিএনপির ৩১ দফার কথা তুলে ধরে তারেক রহমান বলেছেন, সংস্কার প্রস্তাবের ১৩তম দফায় কার্যকরী দুর্নীতি দমন কমিশন গঠনের কথা বলা হয়েছে। এটা করা গেলে জনগণের অর্থের যথেচ্ছ ব্যবহার ঠেকানোর পাশাপাশি জবাবদিহিতাও তৈরি হবে।

এদিকে বড়ুয়ার আলাউদ্দিন দেওয়ান উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে কর্মী সভা ও কর্মশালায় ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমিনুল হক দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, আমরা এমন কিছু করব না, যাতে করে সাধারণ মানুষ যেন বলতে না পারে-আওয়ামী লীগ-বিএনপি মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *