বিনোদন তারকাদের নিয়ে মানুষের আগ্রহের শেষ নেই। তারকার খ্যাতি, নানা কর্মকান্ড এমনকি ব্যক্তিগত দৈনন্দিন কর্মকান্ড সম্পর্কেও জানতে চান মানুষ। এসব তারকার অনেক ভক্তও তৈরি হয় এবং এসব ভক্তের অধিক আগ্রহ থাকে প্রিয় তারকাকে নিয়ে। প্রিয় তারকা সম্পর্কে জানার জন্য প্রথমেই সংবাদপত্রের দিকে চোখ রাখেন ভক্তরা। সংবাদপত্রের বিশেষ করে বিনোদন পাতা কিংবা বিনোদন পত্রিকার প্রতিটি সংবাদ খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখেন আর জেনে নেন তার প্রিয় তারকা সম্পর্কে।
এক সময় চলচ্চিত্র ছিল অন্যতম বিনোদন মাধ্যম। আর চলচ্চিত্র জগত ও চলচ্চিত্র জগতের তারকাদের ঘিরেই তৈরি হয় বিনোদন পত্রিকা। এসব পত্রিকার বিপুল সংখ্যক পাঠক তৈরি হয় এবং তারা তারকাদের নানা খবর জানার জন্য আগ্রহ ভরে অপেক্ষা করেন। তারকাদের কিছু স্ক্যান্ডালের খবর জানার ব্যাপারেও আগ্রহ থাকে পাঠক ও দর্শকদের। এ কারণেই একসময় বিনোদন পত্রিকায় বিশেষ আয়োজন থাকত স্ক্যান্ডাল নিয়ে।
সংবাদকর্মীরা ছুটে বেড়াতেন এফডিসি, শুটিং স্পট, চলচ্চিত্র নির্মাণ প্রতিষ্ঠানের অফিস এমন কি তারকার বাড়ির অন্দরে। স্ক্যান্ডালের উৎস খুঁজতেন। আর স্ক্যান্ডাল নিয়ে সামান্য তথ্য পেলেই আকর্ষণীয় ছবি দিয়ে ফলাও করে ছাপতেন পত্রিকায়। আর পাঠকও তা হট কেকের মত গিলতেন। অবশ্য এসব স্ক্যান্ডালের মধ্যে একটা পরিছন্নতার ছাপ থাকত। তবে এখন যুগ পাল্টেছে। চলচ্চিত্রের জায়গায় চলে এসেছে অনেক বিনোদন মাধ্যম। টেলিভিশন তারকা বলতে একসময় সবচেয়ে গুরুত্ব পেতেন নাট্য শিল্পীরা। এখন শুধু নাট্যশিল্পীরাই নন, এই মাধ্যমের মডেল, উপস্থাপক, সংবাদ কর্মী, টক শোর সঞ্চালকরাও তারকা খ্যাতি পাচ্ছেন। আর তারকাদের সম্পর্কে জানার জন্য শুধু সংবাদ পত্রই নয়, অনেক মাধ্যম বেরিয়ে গেছে। বেতার-টেলিভিশনও এখন তারকাদের সম্পর্কে জানার অন্যতম মাধ্যম। তবে তরুণদের জন্য সবচেয়ে বড় মাধ্যম হয়ে দাড়িয়েছে ইন্টারনেট, অনলাইন, ফেসবুক, ব্লগ, ইউটিউব ইত্যাদি সম্বলিত কম্পিউটার নামক যন্ত্রটি।
এখানে বোতাম টিপলেই পাঠক প্রিয় তারকা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য পেয়ে যাচ্ছেন। শুধু প্রিয় তারকা কেন, দেশ-বিদেশের সব জনপ্রিয় তারকাদের খবর চলে আসছে কম্পিউটার মনিটরে। শুধু স্থির চিত্র নয়, সর্বশেষ ভিডিও চিত্রটিও মুহূর্তের মধ্যে পেয়ে যাচ্ছেন দর্শক। আর ভিডিও স্ক্যান্ডাল, সেও তো এখন ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর হাতের মুঠোয়। কিন্তু এসব স্ক্যান্ডাল কতটা বস্তুনিষ্ঠ তা নিয়ে অনেক প্রশ্ন রয়েছে। কারণ কম্পিউটার নামক যন্ত্রটি এই মাধ্যমকে এতটাই সহজ করে দিয়েছে যে, যে কোন মানুষের স্থির চিত্র কিংবা ভিডিও চিত্রকে যে কোনভাবে ব্যবহার করা যায়। কাছাকাছি চেহারার একজন মানুষের ছবিকে একটু সম্পাদনা করে ওই ব্যক্তির নামে যেমন প্রচার করা যায় তেমনই ছবির মুখমন্ডলের অংশকে অন্য ছবির সাথে জুড়ে দেয়াও এখন অনেক সহজ কাজ। এছাড়া এ্যানিমেশনের সহায়তা নিয়েও স্থির কিংবা ভিডিও চিত্রের বিকৃত ব্যবহার করছেন অনেকে।
একসময় স্ক্যান্ডাল প্রচারনায় যে পরিছন্নতার ছোঁয়া ছিল এখন আর তা নেই। পরিছন্নতার জায়গা দখল করে নিয়েছে অশ্লীলতা। আর এসব চিত্র আগ্রহ ভরে দেখছেন তরুণ প্রজন্মের ছেলে-মেয়েরা। নিজের প্রিয় তারকাকে নিয়ে কোন পরিছন্ন স্ক্যান্ডাল প্রচার হলে তিনি সন্তষ্ট হচ্ছেন এবং ছবি ও লেখা ট্যাগ ও শেয়ার করছেন। আবার অশ্লীল স্ক্যান্ডাল প্রচারে তারা ব্যথিত হচ্ছেন, ক্ষুব্ধ হচ্ছেন। অনেকে মনে মনে গালি দিচ্ছেন নিজের প্রিয় তারকাকে।
তবে এসব ছবি বা ভিডিও চিত্র প্রকৃত অর্থেই ওই তারকার নাকি তৈরি করা তা অনেক দর্শকই ভেবে দেখেন না। মেতে ওঠেন ভিডিও চিত্র নিয়ে। তোলপাড় হয়ে যায় একটি মহলে। শেযারের পর শেয়ার চলতে থাকে। এমনই বেশ কিছু ভিডিও স্ক্যান্ডাল ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের মধ্যে আলোড়ন তোলে। ব্যথিত করে অনেক ভক্তকে। চলচ্চিত্র তারকা মৌসুমীর ভিডিও স্ক্যান্ডাল তার ভক্তদের যেমন ব্যথিত করেছে তেমনই ক্ষুব্ধও করেছে। তবে ভিডিওটি সঠিক কিনা তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। মৌসুমীর ক্যারিয়ারে নেতিবাচক প্রভাব তৈরি করতেই একটি মহল এসব ভিডিও স্কান্ডাল ছড়াচ্ছে বলে মনে করছেন অনেকে। দেশের শীর্ষ মডেল ও অভিনেত্রী প্রভার একটি ভিডিও ফুটেজ বাজারে ছাড়েন তার এক সময়ের হবু বর রাজীব। মুহূর্তেই তা দেশ বিদেশে ছড়িয়ে পড়ে।
রাজীব এবং প্রভার বিয়ে পারিবারিকভাবে চূড়ান্ত হওয়ায় অনেকটা দাম্পত্য জীবনের মতোই ছিলো তাদের সম্পর্ক। কিন্তু এক পর্যায়ে প্রভা পালিয়ে অপূর্বকে বিয়ে করেন। এরপরই প্রতিহিংসার বশে প্রভার একান্ত সময়ের কিছু ফুটেজ ইন্টারনেটে ছেড়ে দেন রাজীব। এ নিয়ে তুমুল বির্তকে পরেন প্রভা। অপূর্বর সাথেও সংসার ভেঙ্গে যায়। ক্যারিয়ারে ধস নামে। দুই বছর মিডিয়া থেকে আড়ালে ছিলেন তিনি। মডেল ও উপস্থাপিকা চৈতির একটি ভিডিও প্রকাশ হয় নির্মাতা এনামুল কবির নির্ঝরের সাথে আপত্তিকর অবস্থায়। মোবাইলে ধারণ করা ভিডিওটি প্রচারের পর আলোচনার ঝড় উঠে ইন্টারনেট ব্যবহারকারী ভক্তদের মধ্যে। অনেক দিন আর মিডিয়ায় দেখা যায়নি এই তারকাকে। পপ শিল্পী ও মডেল মিলা যখন জনপ্রিয়তার তুঙ্গে তখন জড়িয়ে যান ভিডিও স্ক্যান্ডালে। ৩৩ সেকেন্ডের ঐ ভিডিওটিতে মাতাল অবস্থায় থাকা তরুণীর চিত্র রয়েছে।
মিলা এ নিয়ে বলেন, ওই ভিডিও চিত্রের মেয়েটি তিনি নন। এটি আসলেই মিলা কিনা তা নিয়ে সন্দেহ থাকলেও স্ক্যান্ডাল থেকে রক্ষা পাননি তিনি। জনপ্রিয় মডেল অভিনেতা তিন্নি-হিল্লোল জুটি নিয়ে একটি ভিডিও ছেড়ে দেয়া হয়। একটি হোটেল কক্ষে তরুণ-তরুণীর অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ভিডিও চিত্রটি তাদের বলে উল্লেখ করেন প্রচারকারীরা। ভিডিওটির সত্যতা না মিললেও রেহাই পাননি এই তারকা-জুটি। তিন্নি এখন মিডিয়া থেকে অনেকটাই বিচ্ছিন্ন। জনপ্রিয় মডেল আনিকা কবির শখের নামে একটি ভিডিও ফুটেজ বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করে। ভিডিওতে বিবসনা নারীটি আসলেই শখ কিনা তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। তবে ফুটেজ ছড়িয়ে পড়ার পর শখের ক্যারিয়ারে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। লাক্স সুপারস্টার জনপ্রিয় মডেল অভিনেত্রী বিদ্যা সিনহা মীমের ক্যারিয়ারে আঘাত হানে ভিডিও স্ক্যান্ডাল। এক বিদেশি ক্রিকেটারের সাথে আপত্তিকর দৃশ্যের একটি ভিডিও প্রকাশ করা হয়।
এ নিয়ে সামাজিক মাধ্যমসহ নানা মহলে সমালোচনার ঝড় ওঠে। তবে এই ভিডিও চিত্রটিও মিমের কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। মডেল অভিনেত্রী নোভার নামে একটি অর্ধ বিবসনা ভিডিও চিত্র ছড়িয়ে পরে। এই ভিডিওটি তার ক্যারিয়ারে আঘাত হানে। তবে এটি নোভার চিত্র কিনা তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। জনপ্রিয় মডেল ও অভিনেত্রী সারিকাও ভিডিও স্ক্যান্ডালমুক্ত নন। ইন্টারনেটে বেশ কয়েকটি ওয়েব সাইটে সারিকার নামে একটি পর্ণো ভিডিও ছড়িয়ে দেয়া হয়। এই ভিডিও চিত্রটিও সেলফোন, মনিটরে ঘুরে ঘুরে সমালোচনার জন্ম দিয়েছে।
তবে ভিডিওর নারী চরিত্রটি সারিকা নয় বলে দাবি করেছেন তার ঘনিষ্ঠজনরা। জনপ্রিয় সঙ্গীত শিল্পী পরশীও সাইবার ক্রাইমের শিকার। পরশীর নাম ব্যবহার করে একটি ভিডিও চিত্র ছেড়ে দেয়া হয়। তবে ভিডিও চিত্রের মেয়েটি কে তা নিয়ে নানা প্রশ্ন রয়েছে। নাট্যকার ও সাংবাদিক অরুন চৌধুরীকে জড়িয়ে একটি ভিডিও স্ক্যান্ডালের নায়িকা জনপ্রিয় তারকা বিন্দু। একটি অফিস কক্ষে গোপন ক্যামেরায় ধারণকৃত ভিডিওতে কথিত অরুন চৌধুরীর সাথে যে নারীটিকে দেখা গেছে সেই নারীটি মডেল বিন্দু বলে প্রচার করা হয়। এটিকে বিন্দুর বিরুদ্ধে অপপ্রচার বলে দাবি করেন তার নিকটজনরা।
প্রকৃতই হোক আর বিকৃত করেই হোক এ ধরণের স্ক্যান্ডাল যে শুধু কারো ক্যারিয়ারের ক্ষতি করে কিংবা ভক্তদের ব্যথিত করে তাই নয়, এসব স্ক্যান্ডাল তরুণ প্রজন্মের মধ্যে নৈতিক অবক্ষয়ের বিষবাষ্প ছড়িয়ে দেয়। আধুনিক প্রযুক্তির অন্যতম সংযোজন ইন্টারনেট সুবিধাকে সঠিক পথে ব্যবহার না করে বিপথে ব্যবহার করে যে অপরাধীরা এসব অপরাধ করছেন তারা হয় তো ভেবে দেখেন না তার সন্তানও এমন নৈতিক অবক্ষয়ের শিকার হতে পারে। সাইবার ক্রাইম রোধে নানা সময়ে আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী পদক্ষেপ নিলেও তা অপরাধের তুলনায় সামান্য। তবে এই অপরাধ রোধে আইন শৃংখলা বাহিনীর পদক্ষেপই যথেষ্ট নয়, এজন্য প্রয়োজন গোটা সমাজের সচেতনতা।
আ স