এনামুল মামুন :
দেশে দিন দিন বেকারত্ব বাডছে। বিভিন্ন ভাবে বিভিন্ন কারণে বেকারত্ব বাডছে। বেকারত্ব দিন দিন বাডার অন্যতম কারণ হচ্ছে বৈদেশিক বিনিয়োগ কমে যাওয়া, বিদেশে নতুন কর্মসংস্থান না সৃষ্টি হওয়া এবং কারিগরী জ্ঞানের অভাব।
বর্তমানে দেশে বেকার যুবকের অধিকাংশ শিক্ষিত। গত এক বছরে দেশে উচ্চশিক্ষতর হার অনেক বেডেছে। এখন প্রতি বছর প্রায় ২০ লাখের অধিক ছাত্র স্নাতক পর্যায়ে ভর্তি হয়।
ইকোনমিস্ট ইন্টিলিজেন্স ইউনিট কর্তৃক চলতি বছরের জানুয়ারিতে প্রকাশিত দক্ষিন এশিয়া বিষয়ক হাই ইউনিভার্সিটি এনরোলমেন্টে, লো গ্রেজুয়েট এমপ্লয়মেন্ট শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনে যে তথ্য উঠে আসে- তাতে বলা হয়েছে- বাংলাদেশে স্নাতক ডিগ্রিধারীর মধ্য প্রায় ৪৭% বেকার।
দুঃখজনক! অত্যান্ত মর্মস্পর্শী এবং উদ্বেগজনক। দেশের এত বেকারত্ব কিন্তু সরকার এই বিষয়ে কোন বাস্তব প্রদক্ষেপ নিচ্ছেননা। প্রতিবছর বাংলাদেশে যত স্নাতক ডিগ্রিধারী বাহির হয় তার অধিকাংশ হচ্ছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সেশনজট লেগেই আছে। চার বছরেরর অনার্স কোর্স সম্পন্ন করতে লাগে সাত বছর! এমন শিক্ষা ব্যাবস্থা পৃথিবীর আর কোথাও নেই। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের এই বাডতি সময়ের মূল্য কে দিবে? এর দায় কারা নিবে?
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে সেশনজটের কারণে অনেক ছাত্র পডা-লেখা বন্ধ করে দেন আবার অনেকে ভালো রেজাল্ট করতে পারেননা। ফলে এরা চাকুরির বাজারে হিমশিম খেতে হয় নিয়মিত। এই কারণে বেকারত্ব আরো বাডছে।
দেশে নতুন কোন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছেনা। দুঃখজনক হচ্ছে যাদের চাকুরি ছিলো তাদেরও চাকুরি চলে গেছে বিভিন্ন কারণে। ফলে অনেকে বেকার হয়ে গেছে। বাংলাদেশের সবচাইতে বড কর্মক্ষেত্র হচ্ছে গার্মেন্টস শিল্প, কিন্তু এখন গার্মেন্টস শিল্পতেও বিপর্যয়। নতুন বায়ার তুলনা মূলক বাডছেনা, বরং অনেকে ছলে গেছেন।
রানাপ্লাজা ট্রাজেডী এবং তাজরিন ফ্যাশন ট্রাজেডির বলিতে শিকার হন গার্মেন্টস শিল্প। এই প্রতিষ্ঠানে যারা চাকরি করতো তাদের অনেকের চাকুরি আর হয়নি। অনেকে দেশে থেকেও মানবেতর জীবন পার করতেছেন। এত বড বিপর্যয় নিয়ে ভাবার কেউ নেই।
বাংলাদেশের সবচাইতে বড জনশক্তি রপ্তানিকারক অঞ্চল হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্য। কিন্তু সেখানেও জনশক্তি রপ্তানীতে বড বিপর্যয়। ২০০৮ সালে সৌদি আরবের ভিসা বন্ধ হওয়ার পর এখনো ভিসা চালু হয়নি। বিভিন্ন সময় মিডিয়াতে বলা হয়েছে সৌদি আরবের ভিসা চালু হবে, কিন্তু তা এখনো চালু হয়নি। সংযুক্ত আরব আমিরাতে ভিসা পুরোপুরি বন্ধ। ফলে দেশের দক্ষ শ্রমিকরা বেকার। ভিসা জটিলতার কারণেও অনেক প্রবাসী বাঙ্গলী দেশে ফেরত এসেছেন, কেউ অবৈধ হয়ে গেছেন।
জনশক্তি রপ্তনিতে ব্যার্থতা হচ্ছে সরকারের চরম কুটুনৈতিক ব্যার্থতা। এই ব্যার্থতার ভার বহন করে চলছেন দেশের বেকার যুবকরা।
দেশে এত বেকারত্বর জন্য অনেকে অনেক কিছু অভিযোগ করেন। কেউ কেউ বলেন দেশে জনসংখ্যা বেশি তাই দেশে বেকারত্ব বাডতেছে। আসলে তা কতটুকু যুক্তিসম্মত?
অর্থনীতির কোন অংশে বলা হয়নি জনসংখ্যা বাডলে বেকারত্ব বাডে। বিষয়টা আসলে এত জটিলনা। যদি সরকার এই অধিক জনসংখ্যাকে সম্পদে রুপান্তর করতে পারতো, তাহলে এটাকে আর সমম্যা হিসেবে মনে হতোনা।
এই বেকারত্বের অন্যতম আরেকটি কারণ হচ্ছে অগোচালো শিক্ষা ব্যাবস্থা।
আমাদের শিক্ষা ব্যাবস্থার অবকাঠামো আরো পরিবর্তন করা দরকার এবং দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীল ফিরিয়ে আনতে হবে। অধিক সংখ্যাক শ্রমিক প্রবাসে পাঠাতে পারে। কিন্তু বর্তমানে জনশক্তি রপ্তানিতে সবচাইতে বেশি বিপর্যয় লক্ষ্য করা যায়। জনশক্তি রপ্তানিতে বিপর্যয়, আবার আমাদের উৎপাদণশীল প্রতিষ্ঠানও খুবই কম।
তাই উৎপাদনশীল প্রতিষ্ঠান বাডাতে হবে, এই জন্য বৈদেশিক বিনিয়োগের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। কিন্ত সরকার এটা নিয়ে যেন তেমন ভাবছেনা। না হয় রানাপ্লাজার ট্রাজেডী এবং তাজরিন ফ্যাশন ট্রাজেডি হওয়ার পরেও কেন শিল্প প্রতিষ্ঠানে দুর্ঘটনা ঘটে?
লেখকঃ ব্লগার ও মুক্তলেখক
Anamulbd1305@gmail.com