বাজারে অনুমোদনহীন বেবিফুড, ঝুঁকিতে শিশু স্বাস্থ্য

babyfood-300x199রাজধানীর নামীদামি সুপার শপ ও মার্কেটগুলোতে অবাধে বিক্রি হচ্ছে অনুমোদনহীন ‘ বেবিফুড’। মায়ের দুধের বিকল্প বলা হলেও এসব বেবিফুডের পুষ্টিগুণ নিয়ে যেমন বিতর্ক রয়েছে, তেমনি অধিকাংশরই নেই বিএসটিআই (বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন) অনুমোদন।

এগুলোর মধ্যে নিডো, কিটক্যাট, রেড কাউ, কেয়ার লেক ও পাম ল্যান্ড গোল্ড এর মতো বিশ্বখ্যাত ব্র্যান্ডের বেবিফুডও রয়েছে। এগুলোর কোনটিতে বিএসটিআই এর লোগোই নেই, আবার যেগুলোতে আছে সেগুলোর অধিকাংশই নকল বলেও অভিযোগ আছে।

এমনকি এসব বেবিফুডের মেয়াদ পেরিয়ে গেলে সেগুলো নষ্ট না করে নতুন মোড়কে বাজারজাত করার অভিযোগও উঠছে সুপারশপগুলোর বিরুদ্ধে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসব ‘বেবিফুড’ মাযের দুধের বিকল্প হিসেবে কাজ তো করছেই না উল্টো বাধাগ্রস্ত করছে শিশুর মানসিক ও শারীরিক বিকাশ। একই সঙ্গে ভবিষ্যতের অজানা আরও অসংখ্য রোগের কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে এসব বেবি ফুড।

পুষ্টি বিজ্ঞানীরা বলছেন,‘বেবিফুড’ আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোর মন ভুলানো বিজ্ঞাপনে আকৃষ্ট হয়ে ক্রেতারা এসব পণ্য কিনে প্রতারিত হচ্ছেন। পাশাপাশি এসব পণ্যের মান ও মেয়াদ পরীক্ষার জন্য বিএসটিআই এর পর্যাপ্ত লোকবল ও প্রযুক্তির অভাব রয়েছে।

বিএসটিআই কর্তৃপক্ষ আমদানিকৃত এসব শিশু খাদ্য পরীক্ষা করছে না। নামিদামী বিভিন্ন  ‌ব্র্যান্ডের নামে ‘সিলকৃত’ হয়ে আসা এ সব পণ্য সঠিক পরীক্ষা নিরীক্ষা ছাড়াই পাওয়া যাচ্ছে বাজারে।

‌এক শ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী বিমানবন্দর ও স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগসাজশ করে এসব পণ্য আমদানি করে নামিদামী সুপারশপসহ খুচরা বাজারগুলোতে বিক্রি করছে। শুল্ক বিভাগকে ফাঁকি দিয়ে কিছু ‘লাগেজ পার্টি’ও  নিয়মিতভাবেই এসব বিদেশি দুধ দেশে এনে বিক্রি করছে।

আর অধিক মুনাফার আশায় নিজেদের শেলফে রেখে দেদারছে এগুলো বিক্রি করছে সুপারশপগুলোও।

অনুসন্ধান করে দেখা গেছে, অনুমোদন ও পরীক্ষাহীন এ সব দুধের বেশিরভাগই আসে পার্শ্ববর্তী ভারত, চীন, থাইল্যান্ডসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ থেকে।
নগরীর বিভিন্ন সুপারশপ ও মার্কেটগুলো সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, প্রায় সবগুলো নামীদামি সুপারশপেই অনুমোদন ও নিরীক্ষাহীন বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ‘বেবিফুড’  বিক্রি হচ্ছে।

অবৈধভাবে আমদানি করা এসব বেবিফুডের বেশির ভাগ ক্রেতাই সমাজের উচ্চবিত্ত শ্রেণীর।

সবচেয়ে ভয়াবহ হলো, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বিক্রি না হওয়া মেয়াদোত্তীর্ণ এ সব বেবিফুড রাজধানীর পুরান ঢাকার বিভিন্ন ফ্যাক্টরিতে নতুন মোড়ক ও  নতুন করে মেয়াদ বসানো সিল বসিয়ে বাজারজাত করা হচ্ছে।

গত ৩১ মার্চ রাজধানীর কামরাঙ্গীর চরের হযরতনগর এলাকায় অভিযান চালিয়ে ভেজাল শিশুখাদ্য উৎপাদনের দায়ে ২টি কারখানা সিলগালা করে দেয় র‌্যাব-২। এর আগে গুলশান এলাকায় অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ ভেজাল শিশুখাদ্য জব্দ করে র‌্যাব।

তবে এ সব পণ্যের বিক্রি বন্ধে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী মাঝে মধ্যে অভিযান পরিচালনা করলেও তা পর্যাপ্ত নয় বলেও মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, ভেজাল ‘বেবিফুড’ আমদানি ও বিক্রি বন্ধে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে আরও ভূমিকা রাখতে হবে। শুধু মাঝে মধ্যে দু‘একটি অভিযান চালিয়ে এসব পণ্যের আমদানি ও বিক্রি বন্ধ করা যাবে না।

র‌্যাব-২ এর অপারেশন অফিসার রায়হান উদ্দিন আহমেদ বলেন, র‌্যাব এসব মেয়াদোত্তীর্ণ ও অনুমোদনহীন শিশুখাদ্য বিক্রি বন্ধে নিয়মিতভাবেই অভিযান পরিচালনা করে আসছে।

ভেজাল শিশুখাদ্য উৎপাদন ও বিক্রির দায়ে ইতোমধ্যেই পুরান ঢাকার বেশ কয়েকটি কারখানা ও দোকানকে সিলগালা করা হয়েছে। পাশাপাশি এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থাকার অভিযোগে বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের মালিককে জেল জরিমানা করা হয়েছে।

কারওয়ান বাজার, নিউমার্কেট ও বিভিন্ন সুপারশপে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বাজারে বিএসটিআই কর্তৃক অনুমোদিত বেবিফুডগুলোর মধ্যে রয়েছে, মাই বয়, এলডো বেবি, ল্যাকটোজেন, বেবি কেয়ার, মাদারস স্মাইল, লেকটোফিক্স, গেসটোফিক্স, ডানো প্রভৃতি। তবে বিএসটিআইয়ের অনুমোদন ছাড়াই বিক্রি হচ্ছে নিডো, কিটক্যাট, রেড কাউ, কেয়ার লেক ও পাম ল্যান্ড গোল্ডসহ আরও অর্ধশতাধিক ব্র্যান্ডের বেবিফুড।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্যবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক ও পুষ্টিবিদ খুরশিদ জাহান বলেন, বিদেশ থেকে আমদানি করা এসব বেবিফুডের পুষ্টিমান নিয়ে আমি শংকিত। কেননা এসব দুধ পরীক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও প্রযুক্তি বাংলাদেশে নেই।

বিভিন্ন সময় দেখা গেছে, আলাদা আলাদা ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষিত একই দুধের পুষ্টিমান ও অন্যান্য উপাদানের ফলাফল এক রকম হয় না। এমনকি বাজারে যেসব দুধ বেবিফুড হিসেবে বিক্রি হচ্ছে তার কোনটি বিএসটিআই অনুমোদিত তারও প্রকৃত কোন চিহ্ন নেই।

এ সব রোধে তিনি অবিলম্বে একটি সেন্ট্রাল ফুড অ্যান্ড টক্সিকোলজি ল্যাবরেটরি নির্মাণ ও তাতে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

বিএসটিআই পরিচালক কমল প্রসাদ দাশ বলেন, বাজারে যেসব বেবিফুড প্রচলিত রয়েছে তার কোনটির মান সঠিক আর কোনটির মানে ঘাটতি রয়েছে তা পরীক্ষা ছাড়া এ বিষয়ে কিছু বলা সম্ভব নয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *