জুলাই থেকে টোল বাড়ছে ৫০ সেতুতে

ডেস্ক রিপোর্ট : সারা দেশে ৬১টি সেতু থেকে টোল আদায় করে সড়ক ও জনপথ অধিদফতর (সওজ)। এর মধ্যে ৫০টির টোল আগামী ১ জুলাই থেকে বাড়ছে। www.bonikbartaনতুন নীতিমালা অনুযায়ী এ বৃদ্ধির হার যানবাহনভেদে ১০২৫ শতাংশ পর্যন্ত। এর প্রভাব পড়বে যাত্রী ও পণ্য পরিবহনে। বেড়ে যাবে বাস ও ট্রাকের ভাড়া। টোল বাড়লে পরিবহন খাতে বিশৃক্সখলা সৃষ্টি হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এ নিয়ে কিছুটা অস্বস্তিতে রয়েছে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়।
নীতিমালা না থাকায় এত দিন ইচ্ছামতো টোলের হার নির্ধারণ হতো। এজন্য নতুন টোল নীতিমালা প্রণয়ন করে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়, ২৪ মার্চ যা মন্ত্রিসভায় অনুমোদন হয়। নীতিমালা অনুযায়ী, সেতুর দৈর্ঘ্য, অবস্থান ও যানবাহনের ধরনের ভিত্তিতে টোলের হার কম-বেশি হবে।
গুরুত্বপূর্ণ, জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়ক এবং জেলা সড়কে সেতুর অবস্থানের ক্ষেত্রে পৃথক টোলের হার প্রযোজ্য হবে। আবার দৈর্ঘ্যের ক্ষেত্রে ১ হাজার মিটারের অধিক, ৭৫১-১০০০, ৫০১-৭৫০ ও ২০১-৫০০ মিটার— এ চার ভাগে পৃথক টোলহার আরোপ করা হবে। এ হিসাবে সওজের ৫০টি সেতুতে টোল বাড়বে ২ দশমিক ২৭ থেকে ১০২৫ শতাংশ। তবে ১১টি সেতুতে টোলের হার কমবে ৩ দশমিক ৫৭ থেকে ৭৫ শতাংশ।
এ প্রসঙ্গে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সড়ক বিভাগের সচিব এমএএন ছিদ্দিক বণিক বার্তাকে বলেন, নীতিমালার আওতায় কিছু সেতুর টোল বাড়বে। কিছু সেতুতে আবার কমবে। তবে এতে কোনো ধরনের বিশৃক্সখলা যাতে সৃষ্টি না হয়, সেদিকে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে।
নীতিমালা অনুযায়ী, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে মেঘনা ও মেঘনা-গোমতী (দাউদকান্দি) সেতুতে টোলের হার প্রায় দ্বিগুণ হবে। সেতু দুটিতে বর্তমানে একসঙ্গে টোল আদায় করা হয়। এক্ষেত্রে বড় আকারের ট্রাকের জন্য টোল নেয়া হয় ৮০০ টাকা, নীতিমালা কার্যকর হওয়ার পর বেড়ে দাঁড়বে ১ হাজার ৫০০ টাকা। এছাড়া সেতু দুটিতে বাসের টোল ৪০০ টাকা থেকে বেড়ে হবে ৬৪০, মাইক্রোবাসে ১৪০ থেকে বেড়ে ৩০০ ও ব্যক্তিগত গাড়িতে ১০০ থেকে বেড়ে হবে ১৮০ টাকা।
এ সেতু দুটিতে টোল বৃদ্ধির বিরোধিতা করেন এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ইএবি) সভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদী। তিনি বলেন, মেঘনা ও মেঘনা-গোমতী সেতু সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হয় আমদানি-রফতানিতে। এ সেতু দুটিতে টোলের হার দ্বিগুণ হলে ট্রাকভাড়া বাড়বে, যার প্রভাব পড়বে উৎপাদন ব্যয়ে। এতে ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। তবে আমদানি-রফতানি বাণিজ্যকে অতিরিক্ত টোল থেকে ছাড় দিলে সরকারের খুব বেশি ক্ষতি হবে না। তাই আমদানি-রফতানির জন্য ব্যবহূত ট্রাকে চালান দেখে সেতু দুটিতে বিশেষ ছাড় দেয়া উচিত।
জানা গেছে, সওজের আওতাধীন বড় সেতুগুলোয় টোল বেশি হারে বাড়বে। এক্ষেত্রে ঈশ্বরদী-কুষ্টিয়া সড়কে লালন শাহ (পাকশী) সেতুতে বড় ট্রাকের ক্ষেত্রে টোল বাড়বে প্রায় ২৫০ শতাংশ। বর্তমানে সেতুটিতে বড় ট্রাকে টোল আদায় করা হয় ২১৫ টাকা, যা বেড়ে দাঁড়াবে ৭৫০ টাকায়। আর বাসের টোলের হার ২১৫ থেকে বেড়ে ৩৪০, মাইক্রোবাসে ৫০ থেকে বেড়ে ১৫০ ও প্রাইভেট কারে ৩০ থেকে বেড়ে হবে ৯৫ টাকা।
খুলনার খান জাহান আলী (রূপসা) সেতুতে বড় ট্রাকে টোলের হার ১৬০ থেকে বেড়ে দাঁড়াবে ৭৫০ টাকা, বাসে ১৫০ থেকে বেড়ে ৩৪০, মাইক্রোবাসে ৫০ থেকে বেড়ে ১৫০ ও প্রাইভেট কারে ৩০ থেকে বেড়ে হবে ৯৫ টাকা। একই হারে টোল প্রযোজ্য হবে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের বাংলাদেশ-যুক্তরাজ্য মৈত্রী (ভৈরব) সেতুতে।
রাজধানীর প্রবেশপথে বুড়িগঙ্গা সেতুতে ট্রাকের টোলের হার ৩০ থেকে বেড়ে হবে ৬০০ ও বাসে ৩০ থেকে বেড়ে ২৭০ টাকা। সেতুটিতে মাইক্রোবাস ও প্রাইভেট কারের টোল ২০ থেকে বেড়ে হবে যথাক্রমে ১২০ ও ৭৫ টাকা। একই হারে টোল আরোপ করা হবে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সড়কের শাহ আমানত সেতুতে।
এদিকে মানিকগঞ্জের তরা সেতু, মুন্সীগঞ্জের ধলেশ্বরী ১ ও ২, বরিশালের দোহারিকা-শিকারপুর ও ফরিদপুরের গড়াই সেতুতে টোল বাড়ছে ১২৫-৩৪৮ শতাংশ। এছাড়া পটুয়াখালী সেতু, সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ, গোপালগঞ্জের মোল্লারহাট ও মাদারীপুরের আড়িয়াল খাঁ সেতুতে টোল বাড়ছে ২০৫-৬৩০ শতাংশ।
ঢাকার ধল্ল্যা সেতু, গাজীপুরের কাপাসিয়া, ময়মনসিংহের শম্ভুগঞ্জ ও পিরোজপুরের বলেশ্বর সেতুতে টোল বাড়ছে ৩০৮-৭৩০ শতাংশ। এছাড়া বরিশাল-পটুয়াখালী মহাসড়কের গাবখান, জামালাপুরের ঝিনাই ও জিঞ্জিরাম, শেরপুরের ব্রহ্মপুত্র, টাঙ্গাইলের হাঁটুভাঙ্গা, কক্সবাজারের মহেশখালী ও তৈলারদ্বীপ, চাঁপাইনবাবগঞ্জের মহানন্দা, মকরমপুর ও চৌডালা, কুড়িগ্রামের ধরলা, দিনাজপুরের মোহনপুর, বাগেরহাটের দড়াটানা ও কুষ্টিয়ার মাছ-উদ-রুমী সেতুতে টোল বাড়ছে ১২৫ থেকে ১০২৫ শতাংশ।
প্রতিটি সেতুর ক্ষেত্রেই ট্রাকে টোলের হার অধিক হারে বাড়ছে। এর প্রভাবে পণ্য পরিবহন ভাড়া বাড়বে বলে জানান ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক রুস্তম আলী। তিনি বলেন, এর আগেও সরকার এক দফা টোল বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছিল। পণ্য পরিবহন ব্যয় বেড়ে যাওয়ার দাবিতে সে সময় এর প্রতিবাদ জানানো হয়। পরে তা স্থগিত রাখা হয়। এখন আবার টোল বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এতে ভাড়া অনেক বেড়ে যাবে, যার প্রভাব পড়বে পরিবহন খরচে।
টোলের হার বাড়ানো নিয়ে কিছুটা অস্বস্তিতে রয়েছে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়। কীভাবে টোলের হার কার্যকর করা যায়, তা নিয়ে টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে। আগামী ১ জুলাই কোনো ধরনের বিশৃক্সখলা যাতে সৃষ্টি না হয়, সেজন্য জনসচেতনতা সৃষ্টির বিষয়টিও বিবেচনা করা হচ্ছে।
এমএএন ছিদ্দিক এ প্রসঙ্গে বলেন, সেতুগুলোয় নতুন টোলের হার কীভাবে কার্যকর করা যায়, তা নিয়ে টাস্কফোর্স কাজ করছে। তাদের সুপারিশের ভিত্তিতে আরেকটি গেজেট প্রকাশ করা হবে। নতুন টোল বাস্তবায়নে সওজের প্রতিটি আঞ্চলিক কার্যালয়ে তা পাঠানো হবে। বণিকবার্তা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *