বাংলাদেশে সম্প্রতি জাপানি এনকে ফালাইটিস নামে মশাবাহিত একটি নতুন রোগ দেখা দিয়েছে। সম্প্রতি রোগ পর্যবেক্ষণ সংস্থা আইইডিসিআর বলছে, অন্য এলাকার থেকে এর প্রকোপ উত্তারাঞ্চলে বেশি। সংস্থাটির মতে, এটি একমাত্র মশাবাহিত রোগ যা প্রতিরোধের টিকা রয়েছে।
রোগটি বুঝবার উপায় কী এবং কী ধরনের সতর্কতা নিলে এ থেকে বেঁচে থাকা যায়?
এ ব্যাপাে আইইডিসিআর- এর প্রধান ড. মাহমুদুর রহমান বলেন, বাংলাদেশে ছয় ধরনের মশাবাহিত রোগ দেখা যায়। এর মধ্যে ক্যাপ্রিজ এনকে ফালাইটিস একটি রোগ আছে যেটি মস্তিষ্কে প্রদাহ করে। এটিও জনস্বাস্থ্যের জন্য সমস্যা। এতে সাধারণ দেখা যায়, কথা বলতে অসুবিধা হয়। বিরক্তি লাগে। কোনো কিছু বললেই রাগ হয়ে যায়। আবার কখনও কখনও মানসিকভাবেও একটু অন্য রকম লাগে। কোথায় আছে বুঝতে পারে না। কথায় অসংলগ্ন থাকে। একটা পর্যায়ে এসে হয়তো অজ্ঞান হয়ে যায়। কখনও কখনও খিচুনিও হতে পারে। এগুলো হচ্ছে প্রধান উপসর্গ।
এই রোগটির প্রাদুর্ভাব কেমন এবং এ থেকে পরিত্রাণের উপায় কী?
এ ব্যাপারে ডা. মাহমুদুর রহমান বলেন, এটি একটি মশাবাহিত রোগ। ২০০৭ সাল থেকে রোগটি নিয়ে পর্যবেক্ষণ শুরু হয়। তাতে দেখা যায় ৪৮টি জেলায় এই রোগের প্রাদুর্ভাব পাওয়া যায়। এর মধ্যে উত্তরাঞ্চলের রাজশাহী, নওগাঁ ও রংপুর এই জেলাগুলোতে এই রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি দেখা যায়।
তিনি বলেন, এই রোগে আক্রান্ত ৩০ ভাগ রোগী মারা যান। আর যারা বেঁচে থাকেন তাদের মধ্যে ২০ থেকে ৩০ ভাগ মানুষ মানসিকভাবে কোনো না কোনো সমস্যা নিয়ে বেঁচে থাকেন। সব মিলিয়ে এটি আশঙ্কাজনক। তবে আশার কথা হচ্ছে এই রোগের জন্য টিকা আছে। টিকা দিলেই এই রোগ থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যায়।
যেহেতু টিকা আছে। সেক্ষেত্রে এই রোগটি প্রতিকারের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে কী ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে?
এমন প্রশ্নের জবাবে আইইডিসির প্রধান ডা. মাহমুদুর রহমান বলেন, আমরা তো সরকারের পক্ষ থেকে কাজ করি। আর যেহেতু আমরা বুঝতে পারছি এই রোগের প্রাদুর্ভাব কোথায় আছে এবং কারা বেশি এতে আক্রান্ত হয়। তো সব মিলিয়ে আমরা এখন বিষয়টি নিয়ে কথাবার্তা বলছি যে, এই রোগের জন্য আমরা কোনো কোনো এলাকায় টিকা ব্যবহার করতে পারি। তাহলে হয়তো আমরা এটি থেকে পরিত্রাণ পাবো।
তিনি বলেন, যেহেতু এটি মশাবাহিত রোগ। মশার কামড় থেকে বেঁচে থাকার জন্য যা যা প্রয়োজন তা করতে হবে। মশা যাতে জন্ম নিতে না পারে সে জন্য ব্যবস্থা নিতে হবে। তবে এই রোগের প্রাদুর্ভাব সাধারণত শহরের চেয়ে গ্রামেই বেশি দেখা যাচ্ছে। যে কারণে মশা খুব বেশি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয় না।
ডা. মাহমুদুর রহমান বলেন, শুকরের সঙ্গে এই রোগের জীবাণুর সম্পর্ক আছে। পাখি থেকেও এই রোগ ছড়িয়ে পড়তে পারে। তবে কীসে থেকে হচ্ছে সেটি খুব স্পষ্ট করে এখনই বলা যাচ্ছে না। আরো স্টাডি করলে হয়তো তা জানা যাবে।
তিনি বলেন, টিকা ব্যবহার করে এই রোগ নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য চিন্তাভাবনা চলছে। এ ব্যাপারে ডব্লিউএইচও-এর সঙ্গে আলোচনা চলছে। চলতি মাসের শেষে একটি আঞ্চলিক সভা রয়েছে। সেখানে কীভাবে বিষয়টি এগোনো যায় সে ব্যাপারে কিছু সিদ্ধান্ত আসতে পারে।
তিনি আরো বলেন, প্রতিবেশী দেশ ভারতে ২০০৫-০৬ সালে এই রোগের ব্যাপক প্রাদুর্ভাব হয়। তারা ইতোমধ্যে টিকা ব্যবহার শুরু করেছে। নেপালেও টিকা ব্যবহার হচ্ছে। আমরাও এই রোগের টিকার ব্যবহার শুরু করতে চাচ্ছি। বিবিসি