‘ঘুষি মারতে মারতে বলতে থাকে, হয় আমার সঙ্গে, না হয় কবরে থাকবি। চশমার ওপরে ঘুষি মারে, কাচ ভেঙে যায়। নাকে ঘুষি মারে, বুঝতে পারি নাক দিয়ে রক্ত পড়ছে। ঘটনার আকস্মিকতায় আমি হতবাক হয়ে যাই।’
মারধরের শিকার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউটের (আইবিএ) বিবিএ প্রথম বর্ষের ছাত্রী কাঁদতে কাঁদতে কথাগুলো বলছিলেন। গত ১৫ এপ্রিল সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির বারান্দায় ওই ছাত্রীকে মারধর করেন বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রোফেশনালের প্রথম বর্ষের ছাত্র তামহীদ এশাদ।
ঘটনার দিনই ওই ছাত্রীর বড় ভাই বাদী হয়ে তামহীদের নামে গুরুতর জখম করার অপরাধে শাহবাগ থানায় মামলা করেন। ওই ছাত্র বর্তমানে আদালত থেকে আগাম জামিনে আছেন। তাই আতঙ্ক আর নিরাপত্তাহীনতায় আছেন বলে দাবি মেয়ের পরিবারের।
ঘটনার পরপরই মেয়েটিকে প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে এক্স-রের পর চিকিৎসকেরা জানান, তাঁর নাকের ভেতরে একটি হাড় ভেঙে গেছে। পরে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সহায়তায় স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হলে সেখানকার চিকিৎসকেরাও একই কথা জানান।
মুখে আঘাতের ক্ষত এখন আর নেই মেয়েটির। তবে মনের ক্ষত সারেনি। বললেন, ঘটনার পর ৪ মে ক্লাস করতে প্রথম তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে যান। সকালে মা বিশ্ববিদ্যালয়ে দিয়ে আসেন, পরে এক বন্ধু বাসায় দিয়ে যান। তাঁর অভিযোগ, এত বড় ঘটনা ঘটানোর পরও ছেলেটির মধ্যে অপরাধবোধ নেই। ফেসবুকে ভুয়া অ্যাকাউন্ট খুলে আজেবাজে কথা ছড়াচ্ছে।
মেয়েটির মায়ের অভিযোগ, ছেলেটি মুঠোফোনে ফোন করে মেয়েকে বিরক্ত করে। তিনি জানান, ছেলে ও মেয়ে দুজনই ক্যাডেট কলেজে পড়াশোনা করেছেন। ক্যাডেটদের একটি অনুষ্ঠানে গিয়ে ২০১২ সালে তাঁদের পরিচয়। এরপর তাঁদের মধ্যে ভালো লাগার সম্পর্ক গড়ে ওঠে। তবে ছেলের আচরণ, পারিবারিক ইতিহাস জানার পর গত বছরের জুন থেকে তাঁর মেয়ে আর সম্পর্ক রাখতে চাননি। এর পরও ছেলে বিভিন্ন সময়ে মেয়েটিকে বিরক্ত করেছেন বলে মা দাবি করেন। তাঁর অভিযোগ, ‘এখন ছেলের বাবা সওদা করতে চাচ্ছেন। জানতে চান, আমি কী চাই?’
এসব অভিযোগের বিষয়ে ছেলের বাবা পোশাকশিল্প কারখানায় কর্মরত ইলিয়াছ হোসেন বলেন, ‘সেই মেয়েই আমার ছেলেকে সম্পর্ক করতে বাধ্য করে। দুই বছর ধরে তাদের মধ্যে সম্পর্ক। মেয়ে আইবিএতে ভর্তি হতে পারলেও আমার ছেলে পারেনি। এরপর মেয়ে আমার ছেলেকে ছেড়ে আরেক ছেলের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলে। ঘটনার দিন সেই মেয়ে ও তার সঙ্গে থাকা দুই ছেলে আমার ছেলেকে টিজ করে। সে বেশি উত্তেজিত হয়ে প্রথমে এক ছেলেকে মারে, তারপর মেয়েটিকে মারে।’ ছেলেকে উসকে দেওয়ার কারণে এমন আচরণ করেছে বলেও বাবা দাবি করেন।
বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত মেয়ের মা বললেন, নিরাপত্তার কারণে তিনি মেয়েকে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে রাখার চিন্তা-ভাবনা করছেন। আর ছেলের বিশ্ববিদ্যালয়েও লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। তিনি ছেলেটির দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাইলেন। প্রথম আলো
Leave a Reply