নারায়ণগঞ্জের ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র-২ নজরুল ইসলামসহ সাতজনকে অপহরণের পর খুনের ঘটনায় র‌্যাব-১১-এর অধিনায়ক লে. কর্নেল তারেক সাঈদ মোহাম্মাদসহ তিন কর্মকর্তাকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে।

এই তিন কর্মকর্তা হলেন র‌্যাব-১১-এর সদ্য সাবেক অধিনায়ক লে. কর্নেল তারেক সাঈদ মোহাম্মাদ, মেজর আরিফ হোসেন ও নারায়ণগঞ্জ ক্যাম্পের সাবেক প্রধান লে. কমান্ডার এম এম রানা। এদের মধ্যে সেনাবাহিনীর দুজনকে অকালীন এবং নৌবাহিনীর একজনকে বাধ্যতামূলক অবসর দেওয়া হয়। তবে তারা অবসরের পর সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা পাবেন বলে জানা গেছে।

মঙ্গলবার সেনা সদর দপ্তর ও নৌবাহিনী সদর দপ্তর থেকে এ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। দুই বাহিনীর উচ্চপর্যায়ের সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। তবে র‌্যাব কর্মকর্তারা এ নিয়ে কোনো কথা বলতে চাননি।

গত ২৭ এপ্রিল দুপুরে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম ও জ্যেষ্ঠ আইনজীবী চন্দন সরকারসহ সাতজন ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোড থেকে অপহৃত হন। এর তিন দিন পর ৩০ এপ্রিল শীতলক্ষ্যা নদীতে একে একে ভেসে ওঠে সাতজনেরই মরদেহ। এ ঘটনায় নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নূর হোসেনকে প্রধান আসামি করে মামলা করে নজরুলের পরিবার।

গত রবিবার নজরুলের শ্বশুর শহীদুল ইসলাম সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেন, ছয় কোটি টাকার বিনিময়ে র‌্যাবের তিন কর্মকর্তা ওই সাতজনকে অপহরণ ও খুন করেছেন।

মঙ্গলবার রাতে সশস্ত্র বাহিনীর একটি উচ্চপর্যায়ের সূত্র জানায়, নারায়ণগঞ্জের ঘটনার পর গত ২৮ এপ্রিল নিজ নিজ বাহিনীতে ফেরত পাঠানো হয় ওই তিন কর্মকর্তাকে। এর পরই প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে এ-সংক্রান্ত নির্দেশ দেওয়া হয়। মঙ্গলবার তিন কর্মকর্তাকে অবসরে পাঠানোর বিষয়টি চূড়ান্ত হয়।

গত সোমবার মন্ত্রিসভা কমিটি ও আইনশৃঙ্খলা-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে নারায়ণগঞ্জের ঘটনা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। এ ঘটনার সার্বিক তদন্তে সাত সদস্যের কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।

একইভাবে পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) পাশাপাশি ওই ঘটনায় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগকে (সিআইডি) দিয়ে মামলা তদন্ত করতেও নির্দেশ দেন আদালত। র‌্যাবের সাবেক বা বর্তমান কোনো সদস্যের সম্পৃক্ততা রয়েছে কি না, সে বিষয়ে বিভাগীয় তদন্ত করতে র‌্যাবের মহাপরিচালককেও (ডিজি) নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এ ছাড়া, র‌্যাব সদস্যদের জড়িত থাকার অভিযোগ তদন্ত করতে র‌্যাবের পক্ষ থেকেও একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। চার সদস্যের কমিটির প্রধান হলেন র‌্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক আফতাব উদ্দিন আহমেদ।

এদিকে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘সরকার এই ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের খুঁজে বের করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। নারায়ণগঞ্জে অপহরণ ও খুনের ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত কাউকে ক্ষমা করা হবে না।’