একাত্তরে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আটক জামায়াতের নায়েবে আমির আব্দুস সুবহানের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের চতুর্থ সাক্ষ্যি রুস্তম আলী তার সাক্ষ্য দিয়েছেন।
সাক্ষ্যে তিনি বলেছেন, যুক্তিতলা স্কুল মাঠে আমাদের বন্দিদেরকে লাইনে দাঁড়িয়ে সুবহান মাওলানা নিজে তার হাতে থাকা পিস্তল দিয়ে আমাকে দুই বার গুলি করে । এই গুলির একটি আমার বাম হাতে ও অপরটি আমার বুকে বিদ্ধ হয়।
বুধবার চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-২ তে এই সাক্ষ্য শেষ হয়। রাষ্ট্রপক্ষে সাক্ষীর জবানবন্দি করান প্রসিকিউটর সুলতান মাহমুদ সীমন।
এসময় আসামীপক্ষে উপস্থিত ছিলেন অ্যাডভোকেট এস এম শাহজাহান।
সাক্ষী রুস্তম আলী তার সাক্ষ্যে বলেন, ১৯৭১ সালের পূর্ব থেকে আমি পাকসি বাজারে জয়নউদ্দিনের দোকানে কাজ করতাম। ১৯৭১ সালের ১৩ এপ্রিল সকাল ৭টায় জয়নউদ্দিন, তার জামাই এবং আমি কিছু বকেয়া টাকা আদায়ের জন্য সারাঘাটে যাই।
ওই সময় আবদুস সোবহান আমাদেরকে দেখতে পেয়ে পাকিস্তান আর্মি ও বিহারীদের দিয়ে আমাদেরকে ঘিরে ফেলে এবং এক পর্যায়ে আটক করে আমাদেরকে যুক্তিতলা জামে মসজিদের সামনে নিয়ে যায়। সেখানে নিয়ে একটি গাড়িতে আটক অবস্থায় টুলু (ইসরাইলের মা), ইসরাইল ও তার চাচাকে দেখতে পাই। মসজিদের সামনে আর্মিদের গাড়ি দাঁড়ানো ছিল। সেই গাড়িতে করে আমাদেরকে যুক্তিতলা স্কুলের মাঠে নিয়ে যাওয়া হয়। ওই গাড়িতে মাওলানা সুবহান ছিলেন।
রুস্তম আলী আরো বলেন, গাড়ি থেকে নামানোর পর দেখি পাকিস্তানি আর্মি ও বিহারীরা আরো কয়েকজনকে সেখানে ধরে নিয়ে এসেছে। তাদের মধ্যে যুক্তিতলা গ্রামের হারেস উদ্দিন ও ইসমাইলকে চিনতে পারি, অন্য একজনকে চিনতে পারিনি। আমাদের সবাইকে স্কুলের মাঠে লাইন দিয়ে দাঁড় করিয়ে দেয়া হয়। জয়নউদ্দিনের জামাইয়ের হাতে একটি থ্রি ব্যান্ডের রেডিও ছিল। মাওলানা সুবহান ওই রেডিওটি কেড়ে নিয়ে ভেঙে ফেলে। আমরা দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় হারিস উদ্দিন ও ইসমাইল দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করে। তখন সুবহান তার হাতে থাকা পিস্তল দিয়ে ওদেরকে লক্ষ্য করে গুলি করে। গুলিতে ইসমাইল দৌড়ে একটি সাঁকোর কাছে গিয়ে পড়ে যায়। এ অবস্থায় সুবহানের নির্দেশে পাকিস্তানি আর্মি ও বিহারীরা তাকে সেখানে গুলি করে হত্যা করে।
এরপর সুবহান আবার আমাদেরকে লাইনে দাঁড়াতে বলেন। একপর্যায়ে সুবহান মাওলানা নিজে তার হাতে থাকা পিস্তল দিয়ে আমাকে দুই বার গুলি করে । এই গুলির একটি আমার বাম হাতে ও অপরটি আমার বুকে বিদ্ধ হয়। আমার বুকের তিনটি হাড় ভেঙ্গে যায়। এরপর তার নির্দেশে পাকিস্তানি আর্মিরা বেয়নেট তিয়ে আমার বাম চোয়ালে আঘাত করে। তখন আমি মাটিতে লটিয়ে পড়ি আমার কোনো হুঁশ-জ্ঞান ছিল না।
তিনি বলেন, এদিন বিকেল ৪টা সাড়ে ৪টার দিকে আমার একটু হুঁশ হয়। যুক্তিতলা গ্রামের কোরবান আলী ও তার সাথের লোকজন আমাকে, ইনরাইলকে ও তার মা টুলুকে গুলি বিদ্ধ অবস্থায় যুক্তিতলা থেকে চার মাইল দূরে রুপপুর তরিকুল ডাক্তারের কাছে নিয়ে যায়। কোরবান আলী জীবিত আছেন, ডাক্তার তরিকুল বর্তমানে মৃত। আমাদেরকে রুপপুর নিয়ে আসার পর কোরবান আলী বলেছিলেন, তোমাদেরকে যদি না নিয়ে আসতাম তাহলে তোমরা মরেই যেতে। তোমরা ছাড়া জয়নউদ্দিন ও তার জামাইসহ ওখানে যারা ছিল তাদের সবাইকে মেরে ফেলা হয়েছে। এরপর সাক্ষী রুস্তম আলী চিকিৎসার জন্য ভারতে চলে যায় বলে সাক্ষ্যে উল্লেখ করেন।
সাক্ষ্য শেষে তাকে জেরার জন্য ১২ মে দিন ধার্য করে ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম মুলতুবি করা হয়।