আলোর মুখ দেখল না পর্যটননগরী কক্সবাজার বিমানবন্দর আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার প্রকল্প। প্রায় পাঁচ বছর আগে প্রক্রিয়া শুরু হলেও সব কাজ এখনো কাগজে-কলমেই সীমাবদ্ধ। চীনের সঙ্গে সর্বশেষ গত মাসে বৈঠকটি কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়াই শেষ হয়। ফলে বিগত মহাজোট সরকারের অগ্রাধিকারভিত্তিক এ প্রকল্পের অপমৃত্যু ঘটতে যাচ্ছে বলে মনে করছেন কর্মকর্তারা।
বিমানবন্দর উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন হবে, তা এখন আর বিশ্বাস করতে চান না কক্সবাজাররবাসীও। অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘হচ্ছে হবে’ শুনতে শুনতে আমরা ক্লান্ত। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে পর্যটনশিল্পের বিকাশ, সমুদ্রসীমা রক্ষা, যুদ্ধবিমানের জরুরি অবতরণ, গভীর সমুদ্রবন্দরের প্রয়োজনীয়তাসহ কক্সবাজারের সার্বিক উন্নয়ন গতিশীল হতো। সেই সঙ্গে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের আকর্ষণ বাড়ত। সূত্র জানায়, দুই বছর ধরে দেন-দরবারের পরও ঐকমত্যে পৌঁছতে পারেনি বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) ও চীন। গভর্নমেন্ট টু গভর্নমেন্ট (জিটুজি) পদ্ধতিতে এ প্রকল্প নিয়ে বৈঠকের পর বৈঠক হলেও সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারেনি কোনো পক্ষই। চীনের কিছু শর্ত ও প্রস্তাবে সব সম্ভাবনা ক্ষীণ হয়ে যায়। ফলে এখন চরম অনিশ্চয়তায় পড়েছে এ প্রকল্প। সিভিল এভিয়েশন গত সপ্তাহে এক চিঠিতে চীনের কোম্পানিকে সাফ জানিয়ে দেয়, প্রকল্পটি নিয়ে অগ্রসর হওয়ার আর কোনো উপায় নেই। প্রকল্পের একজন কর্মকর্তা জানান, এখন এমন অবস্থা যে, কঙ্বাজার বিমানবন্দরের আধুনিকায়ন কাজ করতে হলে নতুন দরপত্র ডাকতে হবে। সেক্ষেত্রে সব নতুন করে করতে হবে। স্বাভাবিক গতিতে কার্যক্রম চালিয়ে দরপত্র ডেকে কার্যাদেশ দিতেই সময় লাগবে আট মাস। এরপর কাজ শুরুতে আরও কমপক্ষে ২৬ মাস লাগবে। শেষ করতে লাগবে আরও কমপক্ষে তিন বছর। ফলে বর্তমান সরকারের আমলে পুরো কাজ শেষ করা সম্ভব নয়। জানা গেছে, ২০০৯ সালে নেওয়া প্রকল্পটি শুধু রানওয়ে সম্প্রসারণের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। পরে পর্যটনের উন্নয়নের কথা ভেবে মহাজোট সরকার বিমানবন্দরটি আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার উদ্যোগ নেয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১১ সালের ৩ এপ্রিল কক্সবাজার সফরে গিয়ে এটিকে অগ্রাধিকার প্রকল্প হিসেবে ঘোষণা দেন। কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০১৩ সালের জুনে। সূত্র জানায়, প্রকল্পটি বার বার হোঁচট খেয়েছে। ২০১১ সালের মে মাসে প্রথম দরপত্রে তুরস্কের একটি প্রতিষ্ঠান মাত্র ৫০০ কোটি টাকায় কক্সবাজার বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করতে রাজি হয়। কিন্তু সরকারের ক্রয়সংক্রান্ত কমিটি তাতে অনুমোদন দেয়নি। এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের কাজ নিয়ে মন্ত্রণালয়ের উদাসীনতায় তখন সমালোচনার সৃষ্টি হয়। পরে জিটুজি পদ্ধতিতে চীনের সরকারি প্রতিষ্ঠান এভিক সরাসরি প্রস্তাব দেয়। এভিক ২০১২ সালের আগস্টে দৌড়ঝাঁপ শুরু করে। কিন্তু প্রকল্প ব্যয় ও আর্থিক সহায়তার সুদ নিয়ে তাদের প্রস্তাবকে ‘অন্যায্য’ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। প্রতিষ্ঠানটির প্রস্তাব ছিল প্রকল্পের ব্যয় কিছুতেই দুই হাজার কোটি টাকার নিচে আনা সম্ভব নয়। বেবিচক সূত্র জানায়, আমন্ত্রণ জানানো হলে এভিক প্রতিনিধি গত বছর ১১ নভেম্বর ঢাকায় আসে। বেবিচক দলিলাদি চূড়ান্ত করে। কিন্তু এভিক প্রতিনিধি এ বিষয়ে কোনো আলোচনা বা দেন-দরবার না করেই ঢাকা ত্যাগ করেন। পরে এভিককে আবারও আমন্ত্রণ জানানো হয়। তাদের প্রতিনিধি গত ১১ মার্চ ঢাকায় আসেন। তখন সরকারের অনুমোদিত প্রস্তাব মূল্যায়ন ও আলোচনা ত্বরান্বিত করার তাগিদ দেওয়া হয়। চারটি কারিগরি সাব-কমিটি গঠন করা হয়। প্রতিটি কমিটি এভিককে চূড়ান্ত প্রস্তাব, যেমন ডিজাইন স্পেসিফিকেশন, বিওকিউ, কস্ট ইস্টিমেট ও টাইম ফ্রেম দেওয়ার জন্য জোর অনুরোধ জানায়। এভিক সেভাবে অঙ্গীকারও করে। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি গত ২ এপ্রিল পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দাখিল না করে আংশিক প্রস্তাব দেয়। এ নিয়ে দর কষাকষিও চলে। এভিক উদাহরণ টেনে যুক্তি দেখায়, বাংলাদেশের অন্যান্য জিটুজি প্রকল্পে এভাবেই অসম্পূর্ণ প্রস্তাবের ওপর ভিত্তি করে কাজ হচ্ছে।
যা হওয়ার কথা : বর্তমানে বিমানবন্দরের রানওয়ের দৈর্ঘ্য ছয় হাজার ৭৭৫ ফুট। এটি ৯ হাজার ফুটে উন্নীত করার কথা রয়েছে। আর প্রস্থ ১৫০ থেকে বাড়িয়ে ২০০ ফুট করা হবে। রানওয়ের লাইটিং ফ্যাসিলিটিজ ও নেভিগেশন এইড বাড়ানো হবে। দূরত্ব পরিমাপক সরঞ্জাম, ডপলার ওমনি ডিরেকশন রেঞ্জ, অগ্নিনির্বাপক যান কেনা ও রানওয়ের ধারণক্ষমতাও বাড়ানো হবে। আন্তর্জাতিক অবতরণ ব্যবস্থা ও স্বয়ংক্রিয় মেট্রোলজিক্যাল পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে। প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়ে আধুনিক টার্মিনাল ভবন, ট্যাক্সিওয়ে, অ্যাপ্রোচ ও বোর্ডিং ব্রিজসহ লাইটিং ব্যবস্থা স্থাপন করা হবে।বা প্র