ছাত্রী জিম্মি করে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনের অভিযোগ উঠেছে মহাখালীর দ্যা ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ প্রিভিলেন্স অ্যান্ড সোস্যাল মেডিসিন (নিপসম)Ñ এর রোগবিস্তার সংক্রান্ত বিদ্যা বিভাগের সহকারি অধ্যাপক ডা. রেজানূর করিম শামীমের বিরুদ্ধে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অধীনস্ত এই প্রতিষ্ঠানে পোস্ট গ্রাজুয়েশন কোর্সে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরা ওই শিক্ষকের অপসারণের দাবি জানিয়ে বুধবার থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্লাস বর্জন করেছেন।
শিক্ষার্থীরা বলছেনÑ ডা. শামীমকে অপসারণ না করা হলে আগামীতে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। এদিকে, এ ঘটনায় ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হলেও কমিটির আহ্বায়ক নিপসম পরিচালক অধ্যাপক ডা. সরোজ কুমার মজুমদার ও সদস্য কমিউনিটি মেডিসিন বিভাগের প্রধান (চলতি দায়িত্ব) অধ্যাপক ডা. শায়লার বিরুদ্ধেও উঠেছে অভিযোগ।
শিক্ষার্থীরা বলছেনÑ সরকারি প্রতিষ্ঠানের কোনো তদন্ত কমিটিতে প্রতিষ্ঠান প্রধান থাকেন না। কিন্তু পরিচালক কমিটি প্রধানের দায়িত্ব নিয়ে তদন্ত প্রভাবিত করতে আদাজল খেয়ে লেগেছেন। আর ওই দু’জনের কারণে ডা. শামীম রোগবিস্তার সংক্রান্ত বিদ্যা বিভাগের ছাত্রীদের জিম্মি করে তাদের সঙ্গে অবৈধ কাজের সাহস পায়। তবে ডা. সরোজ কুমার মজুমদার এ বিষয়ে কোনো কথা বলতে রাজি নন। পোস্ট গ্রাজুয়েশন কোর্স ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের জেনারেল মনিটর (জিএম) ডা. শাহ আলম সিদ্দিকী আমাদেরসময় ডটকমকে বলেন, ‘আমাদের দাবিÑ ডা. শামীমকে অপসারণ করে নিপসমে শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে হবে। তার কারণে ছাত্রীদের সম্ভ্রম যেমনি ভূলুণ্ঠিত হচ্ছেতেমনি প্রতিষ্ঠানেরও সম্মান যাচ্ছে। আমাদের দাবি আদায় না হলে পরিচালকের কার্যালয় ঘেরাও, অবস্থান, অনশন কর্মসূচি পালন করব।’ অনুসন্ধানে জানা গেছে, ডা. শামীম ২০১০ সালের দিকে নিপসমের ওই বিভাগে সহকারি অধ্যাপক পদে যোগদান করেন। এরপর কিছুদিন নিপসম সংলগ্ন জনস্বাস্থ্য পুষ্টি প্রতিষ্ঠান (আইপিএইচএন)Ñ এ কাজ করেন। এরপর আবার নিপসমে।
অভিযোগ পাওয়া গেছে, ২০১০ সাল থেকেই তিনি তার রোগবিস্তার সংক্রান্ত বিদ্যা বিভাগে পোস্ট গ্রাজুয়েশন কোর্সে ভর্তি হওয়া ছাত্রীদের নানা সুবিধার লোভ দেখিয়ে তার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনে বাধ্য করেন। বিগত প্রায় ৪ বছর ধরে নিপসমে ডা. শামীমের এই চরিত্র ওপেন সিক্রেট। সূত্র জানিয়েছে, ডা. শামীম ছাত্রীদের বলে থাকেন, ‘তার সঙ্গে সময় না কাটালে ব্যবহারিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ কিংবা ভাল নম্বর, হোস্টেলে সিট দেয়া হবে না। তাছাড়া দেড় বছরের পোস্ট গ্রাজুয়েশন কোর্স শেষ করতে পদে পদে হয়রানি হতে হবে। কখনো কখনো তিনি ছাত্রীদের উচ্চ বেতনের চাকুরি দেবার লোভ দেখিয়েও অবৈধ কাজে লিপ্ত হচ্ছেন।’ এসব কারণে বাধ্য হয়ে ছাত্রীরা সম্ভ্রম বিলিয়ে দিচ্ছেন এই শিক্ষকের কাছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রোগবিস্তার সংক্রান্ত বিদ্যা বিভাগের বেশ কয়েকজন ছাত্র আমাদেরসময় ডটকমের কাছে অভিযোগ করে বলেন, ‘আমরা অনেক সময় ডা. শামীমের অফিস কক্ষে গিয়ে ছাত্রীর সঙ্গে আপত্তিকর অবস্থায় বেশ কয়েকবার পেয়েছি, এতে প্রচণ্ড বিব্রতবোধ করেছি আমরা। শিক্ষক হয়ে প্রতিষ্ঠানে বসে এ ধরণের কাজ যে শিক্ষক করতে পারেন তিনি কী শিখাতে পারবেন?’
তারা আরো বলেন, ‘ডা. শামীম আমাদের রীতিমতন হুমকি দিয়ে বলেন, তার কুকীর্তির কথা কোথাও ফাঁস করলে শিক্ষার্থীদের ব্যবহারিক পরীক্ষায় নম্বর কম দেয়াসহ নানা উপায়ে হয়রানি করে শিক্ষাজীবন ক্ষতিগ্রস্ত করবেন।’ অনুসন্ধানে জানা গেছে, প্রায় ৪ বছর ধরে নিপসমে ডা. শামীম ছাত্রীদের সঙ্গে অবৈধ কাজে লিপ্ত থাকলেও পরিচালক দেখেও না দেখার ভান করে দিন পার করেছেন। বিগত সময়গুলোতে তিনি ডা. শামীমের বিরুদ্ধে নূন্যতম কোনো ব্যবস্থাও গ্রহণ করেননি। তবে এবার নিপসমের ৮টি বিভাগের ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের পোস্ট গ্রাজুয়েশন কোর্সের ১২০ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ৯৫ ভাগ শিক্ষার্থী ডা. শামীমের অনৈতিক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ালে বিপাকে পড়েন পরিচালক অধ্যাপক ডা. সরোজ কুমার মজুমদার, শিক্ষার্থীরা তার কাছে এসবের প্রতিকার চেয়ে লিখিত অভিযোগপত্রও দেন। যাতে প্রায় ৯৫ভাগ শিক্ষার্থীর সাক্ষর রয়েছে। তবে ডা. শামীমের লালসার শিকার ওই শিক্ষাবর্ষের ৫জন ছাত্রী রয়েছেন, যারা বর্তমানে ডা. শামীমের পক্ষে অভিযোগ প্রদানকারীদের কাছে উকালতি করছেন, এমনকি তার কিছু হলে তাদের ভাল হবে না বলে হুমকি দেয়ার অভিযোগও পাওয়া গেছে। সূত্র জানিয়েছে, শিক্ষার্থীদের চাপের মুখে তড়িঘড়ি করে গত সোমবার পরিচালক ৩ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন। যার প্রধান তিনি নিজেই, অপর দুই সদস্য কমিউনিটি মেডিসিন বিভাগের প্রধান (চলতি দায়িত্ব) অধ্যাপক ডা. শায়লা ও রোগবিস্তার সংক্রান্ত বিদ্যা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. আনিসুর রহমান।
কিন্তু কবে তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন পেশ করবেÑ তা কাউকে না জানানোর কারণে কমিটির কর্মকাণ্ড নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। একইসঙ্গে প্রতিষ্ঠান প্রধান হয়ে কেন তিনি নিজেই কমিটির প্রধান হলেনÑ তা-ও শিক্ষার্থীদের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা জানান, সরকারি প্রতিষ্ঠানের কোনো ঘটনা তদন্তে প্রতিষ্ঠান প্রধান তদন্ত কমিটির প্রধান পদে থাকেন না। কিন্তু সরোজ কুমার মজুমদার থেকেছেন। যা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। কমিটির প্রধান হবার মতন এ প্রতিষ্ঠানে যোগ্য ব্যক্তি অনেকেই রয়েছেন। কিন্তু পরিচালক তাদের কাউকে রাখেননি। ওদিকে, কমিটির সদস্য ডা. শায়লার বিরুদ্ধেও অভিযোগ করেন শিক্ষার্থীরা। তারা বলছেন, পরিচালক ও ডা. শায়লা ওই শিক্ষকের বিশেষ খাতিরের মানুষ। না হলে এতো বছর অবৈধ কাজ করার পরও পরিচালক জেনে কেন তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেননি?
তারা আরো জানান, প্রতিটি তদন্ত কমিটি গঠনের সময় সময়সীমা বেঁধে দেয়া হয় যে, কত কর্ম দিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন পেশ করা হবে। কিন্তু এই কমিটি এমন কিছু করেনি। তাই তারা এই কমিটির উপর আ¯’া রাখতে পারছেন না। জেনারেল মনিটর (জিএম) শিক্ষার্থী ডা. শাহ আলম সিদ্দিকী বলেন, ‘যদি পরিচালকের মাধ্যমে এর সুরাহা না হয়, তাহলে আমরা আমাদের ডিন তো বটেই, একইসঙ্গে স্বাস্থ্যখাতের উচ্চ পর্যায়ের সকলকে জানাতে বাধ্য হব। এছাড়া আমাদের সামনে কোনো উপায় নেই।’ সার্বিক বিষয়ে জানতে বৃহস্পতিবার নিপসম পরিচালক অধ্যাপক ডা. সরোজ কুমার মজুমদারের অফিস কক্ষে গেলে তিনি এ বিষয়ে কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করে বলেন, ‘এখন তদন্ত চলছে, কিছু বলতে পারব না।’ তদন্ত কমিটি কবে গঠন হয়েছে, কারা কারা আছেনÑ জানতে চাইলেও তিনি এড়িয়ে যান। অভিযুক্ত শিক্ষক ডা. শামীমের মোবাইলে কয়েকবার কল দেয়া হলে তিনি লাইন কেটে দেন। – আ স