বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বা হু-র এক রিপোর্টে ভারতের রাজধানী দিল্লি-কে বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহর বলে চিহ্নিত করা হলেও ভারতীয় কর্তৃপক্ষ তা মানতে অস্বীকার করেছে।
হু-র ওই রিপোর্টে বলা হয়েছে, বিশ্বের প্রায় ১৬০০ শহরের বাতাসের মান বিচার করে তারা দেখেছেন, দিল্লিতেই দূষণের মাত্রা সবচেয়ে বেশি।
এই রিপোর্টকে ভারত বিভ্রান্তিকর বলে বর্ণনা করলেও হু-র কর্মকর্তারা অবশ্য বলেছেন, দূষিত শহরের র্যাঙ্কিং করা নয়, বরং দূষণের বিরুদ্ধে সচেতনতা তৈরি করাই ছিল তাদের লক্ষ্য।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার যে রিপোর্টকে ঘিরে এই বিতর্ক, তাতে সমীক্ষা চালানো হয়েছিল ৯১টি দেশের মোট ১৬০০ শহরে।
তাতে দেখা গেছে, বাতাসে ভাসমান আড়াই মাইক্রোমিটারের চেয়েও ছোট কণা – যাকে পিএম ২.৫ বলা হয় – দিল্লিতে তার গড় পরিমাণ সর্বাধিক, ১৫৩।
অথচ ধোঁয়াশার জন্য কুখ্যাত চীনের রাজধানী বেইজিংয়ে এই পরিমাণ মাত্র ৫৬, আর লন্ডনে এই পরিমাণ দিল্লির ১০ ভাগের এক ভাগ।
এই রিপোর্ট প্রকাশিত হওয়ার পরই ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা সিস্টেম অব এয়ার কোয়ালিটি ওয়েদার ফোরকাস্টিং অ্যান্ড রিসার্চ – যারা দেশের বিভিন্ন শহরে বায়ুর মানের ওপর নজর রাখে – তারা দাবি করেছে তাদের হাতে যে তথ্য আছে তা হু-র বক্তব্যকে সমর্থন করে না, এবং এই রিপোর্ট পক্ষপাতদুষ্ট ও বিভ্রান্তিকর।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অবশ্য তাদের অবস্থান স্পষ্ট করে জানিয়েছে, কোন শহরের দূষণ কোথাকার চেয়ে বেশি, সেটা জানানো মোটেই তাদের লক্ষ্য ছিল না।
জেনেভায় হু-র জনস্বাস্থ্য বিভাগের প্রধান কর্মকর্তা নাডা ওসেইরান বলছিলেন, ”হু বিভিন্ন শহরের বায়ু দূষণের মাত্রা নিয়ে এই তথ্য সংকলন করেছে সচেতনতা বাড়ানোর লক্ষ্যে – যাতে কর্তৃপক্ষ এর প্রতিকারে ব্যবস্থা নেন।”
তিনি আরও বলেন, ”আমরা দূষণের মাত্রা নিয়ে শহরগুলোর কোনও র্যাঙ্কিংও করতে চাই না, তুলনাও করতে চাই না। তবে এটাও বলা দরকার, এর সব তথ্যই সংগৃহীত হয়েছে এসেছে বিভিন্ন দেশের সরকারি সূত্র থেকে, জাতীয় পর্যায়ে।”
কিন্তু দূষণের তালিকায় দিল্লির শীর্ষ স্থান নিয়ে যে বিতর্ক, সে ব্যাপারে এই শহরের পরিবেশবিদরা কী ভাবছেন?
দেশের শীর্ষস্থানীয় পরিবেশ গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর সায়েন্স অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টের অনুমিতা রায়চৌধুরী কিন্তু মানেন, মাত্র বছরকয়েক আগেও দিল্লির দূষণ পরিস্থিতিতে প্রভূত উন্নতি হয়েছিল।
তিনি বলছিলেন, ”বছর দশেক আগে সিএনজি-নির্ভর গণপরিবহন ব্যবস্থা চালু করে, দূষণ সৃষ্টিকারী শিল্পগুলোকে শহরের বাইরে বের করে, কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো বন্ধ করে বা পুরনো গাড়ি নিষিদ্ধ করে দূষণ প্রতিকারে বেশ সাফল্য মিলেছিল।”
কিন্তু মিস রায়চৌধুরী হু-র রিপোর্টে এতটুকুও বিস্মিত নন, কারণ সেই সব উদ্যোগের সুফল এখন সব আবার ধীরে ধীরে চাপা পড়ে গেছে।
তিনি বলেন, ”২০০৮ সাল থেকে বলা যেতে পারে পরিস্থিতির আবার অবনতি হতে শুরু করে, আর এখন তো আবার আমরা সেই প্রাক-সিএনজি দূষণের যুগেই ফিরে গেছি বলা যেতে পারে।”
দিল্লি বিশ্বের সবচেয়ে বিশ্বের দূষিত শহর কি না, তা হয়তো এখনও তর্কসাপেক্ষ।
কিন্তু হু-র হিসাব যেহেতু বলছে বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত ২০টি শহরের মধ্যে অন্তত ১৩টিই ভারতে – তাই র্যাঙ্কিংয়ের বিতর্কে না-ঢুকেও বোঝাই যাচ্ছে এ দেশের ছোট বা বড় মেট্রো শহরগুলোতে দূষণের অবস্থা কতখানি ভয়াবহ।– বিবিসি।