ডেস্ক রিপোর্ট : নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র ও কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম এবং আইনজীবী চন্দন সরকারসহ ৭ হত্যাকা-ের নেপথ্যের একের পর এক তথ্য বেরিয়ে আসছে। পূর্ব বিরোধের জের ধরে কাউন্সিলর নজরুলকে নূর হোসেন ২০০০ সাল থেকে ৫ দফা হত্যার জন্য হামলা চালালেও সফল হননি। এই বিরোধকে কাজে লাগান সিদ্ধিরগঞ্জের দুই প্রভাবশালী নেতা। তারা নূর হোসেনকে দিয়ে নজরুলকে সরিয়ে দেয়ার ফন্দি করেন। নজরুল মরে গেলে নূর হোসেনও ফেঁসে যাবেন, তারপর এলাকার রাজা বনে যাবেন তারা। এই স্বপ্ন বাস্তবায়নে নজরুলকে হত্যার প্রাথমিক পরিকল্পনা করে তারা এ নিয়ে নূর হোসেনের সঙ্গে বৈঠক করেন। পরে এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত হয় নানা পক্ষ।
নিহত সাত জনের পরিবার, মামলার বাদী সেলিনা ইসলাম ও নজরুলের শ্বশুর শহীদ চেয়ারম্যান এসব তথ্য জানান। তারা বলেন, নজরুল নিহত হবার পর ও নূর হোসেন পালিয়ে যাওয়ায় ওই দুই নেতাই এখন এলাকা নিয়ন্ত্রণ করছে।
নূর হোসেন সিদ্ধিরগঞ্জসহ আদমজী ইপিজেড, সড়ক ও জনপথ বিভাগ, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডর ঠিকাদারী, চুন কারখানা, ইটভাটা, পরিবহনের চাঁদা আদায়, মাদক ব্যবসা ও অস্ত্র বেচাকেনাসহ অপরাধ সাম্রাজ্যে একক আধিপত্য বিস্তার করে আসছিল। স্থানীয় দলীয় কিছু নেতাকে নূর হোসেনের বাসায় গিয়ে নিয়মিত চাঁদার ভাগের জন্য বসে থাকতে হতো। এদের মধ্যে ওই দুই প্রভাবশালী নেতা ট্রাক চালকের হেলপার থেকে কোটি কোটি টাকার মালিক বনে যাওয়ায় নূর হোসেনের ওপর ক্ষুব্ধ ছিল। তাই তারা নজরুল-নূর হোসেন দ্বন্দ্ব কাজে লাগান। নূর হোসেনও মনে করত নজরুল ব্যতীত সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকায় তাকে কেউ কিছু করতে পারবে না।
পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী ২৭ এপ্রিল কোর্টে হাজিরা দিতে গেলে ফেরার পথে নজরুলকে অপহরণ করা হয়। ওইদিন কোর্ট থেকে হাজিরা শেষে বিকালে ফতুল্লা স্টেডিয়ামের কাছে শিবু মার্কেটে গেলে আগে থেকে মাইক্রোবাস নিয়ে থাকা র্যাবের পোশাক পরিহিত সশস্ত্র ব্যক্তিরা নজরুলকে অপহরণ করে। তার সঙ্গে থাকা আরো ৪ জনকে গাড়িতে তুলে নেয়। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী আইনজীবী চন্দন সরকার ও তার গাড়ি চালককে তুলে নেয় অপহরণকারীরা।
গতকাল বৃহস্পতিবার সরেজমিনে সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকায় গিয়ে ব্যবসায়ী, যানবাহন শ্রমিক, বাসিন্দা ও বিভিন্ন পেশার লোকজনের সঙ্গে আলাপকালে তারা বলেন, কাউন্সিলর নজরুল হত্যাকা-ের মোটিভ আয়নার মত পরিষ্কার। নূর হোসেনের পরিকল্পনায় নজরুলকে হত্যা করা হয়েছে এটা পরিষ্কার। তবে এর পেছনে আছেন দুই জন। যারা এক ঢিলে দুই পাখি মেরেছে। নূর হোসেন কোটি কোটি টাকা খরচ করে নানায়ণগঞ্জের এমপি হওয়ার জন্য চেষ্টা করেছিল। এই দাম্ভিকতা হূদয়ে কাঁটার মতো বিঁধে দুই জনের। এলাকাবাসী জানান, ৭ জনকে অপহরণ ও লাশ গুম করার আগ পর্যন্ত ঘটনায় ব্যবহূত দুই মাইক্রোবাস ওই দুই নেতার একজনের বাসায় প্রবেশ করেছিল।
মামলার বাদী সেলিনা ইসলাম বিউটি বলেন, ওই দুই নেতার নাম এজাহারে উল্লেখ করা হলে পুলিশ তাদের নাম বাদ দিয়ে নতুন করে এজাহার লিখতে বাধ্য করে। এদের একজন আগে থেকে আদমজী এলাকায় ঠিকাদারী ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করে আসছিলেন। সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকার ওই দুই নেতাকে গ্রেফতার করলে ৭টি হত্যাকা-ের অনেক তথ্য বের হয়ে পড়বে। তাদের একজন সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকায় এখনও ঘুরে বেড়াচ্ছে এবং অপরজন আত্মগোপনে রয়েছে। আওয়ামী লীগের এক সিনিয়র নেতার পুত্র ও নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ঠিকাদার আবু সুফিয়ানকে গ্রেফতার করলে হত্যা মিশনের জন্য ৬ কোটি টাকা কাদের দিয়েছিল তা বেরিয়ে আসবে।ইত্তেফাক