নূর হোসেনের গোডাউনে অভিযান; মাদক, অস্ত্র উদ্ধার

anigif-noorনারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ প্রশাসনের বড় ধরনের রদবদলের পরই সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইল ট্রাক টার্মিনালস্থ চাঞ্চল্যকর ৭ হত্যা মামলার প্রধান আসামী নূর হোসেনের মাদক আস্তানায় হানা দিয়ে বিপুল পরিমান মাদক দ্রব্য উদ্ধার করেছে পুলিশ।

শুক্রবার বিকেল ৪ টায় জেলা অতিরিক্ত সহকারী পুলিশ সুপার জাকারিয়া ও জীবন কান্তির নেতৃত্বে পুলিশ নূর হোসেনের অফিসের পিছনে সামছুদ্দিনের মালিকানাধিন টিন সেট ৪ টি দোকানে এ অভিযান চালায়। দোকান গুলো দখল করে নূর হোসেন মাদকের আস্তানা বানিয়েছে। এ আস্তানায় পুলিশ পাহারায় চলতো মাদক বিক্রি। তবে কোন মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করতে পারেনি বলে পুলিশ জানায়।

অভিযানের নেতৃত্বদানকারী সহকারী পুলিশ সুপার জাকারিয়া গণমাধ্যম কর্মীদের জানায়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে নূর হোসেনের অফিসের পিছনে সামছুদ্দিন নামে এক লোকের নির্মানাধিন টিন সেট ৪ টি দোকানে অভিযান ও তল্লাসী চালিয়ে ১৮ বস্তা ফেনসিডিল, ৯ বোতল বিদেশী মদ, ২ কার্টন বিয়ার, ২ টি দা ও ৩ টি বড় ছুরি উদ্ধার করা হয়েছে। এসব মাদক দ্রব্য গুলো পরিত্যক্ত অবস্থায় পাওয়া গেছে। এক দোকান থেকে ২ ও আরেক দোকান থেকে ১৬ মোট ১৮ বস্তায় ২৮ বোতল ফেনসিডিল রয়েছে। কাইকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি বলে তিনি জানান।

স্থানীয়রা জানায়, চাঞ্চল্যকর ৭ হত্যা মামলার প্রধান আসামী সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি ও ৪ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর নূর হোসেন স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করে মাদক ব্যবসা পরিচালনা করতো। এ মাদক আস্তানা পাহারা দেওয়ার জন্য প্রতিদিন থানা পুলিশের একটি টিম নূর হোসেনের অফিসের সামনে টিউটি করেছে। মাদকের আস্তানাটি নূর হোসেনের অফিস থেকে মাত্র ২০ গজ দূরে। এখানে পুলিশের সামনেই প্রকাশ্যে মাদক বিক্রি করা হতো। এ মাদক বিক্রির সিংহ ভাগ টাকাই চলে যেতো জেলা পুলিশ প্রশাসনের বড় কর্তাদের পকেটে।

গত ২৭ এপ্রিল প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলাম ও এ্যাডভোকেট চন্দন সরকারসহ ৭ জনকে অপহরণের পর হত্যা করার ঘটনায় নূর হোসেনকে প্রধান আসামী করে মামলা করা হয়। গ্রেফতার এড়াতে নূর হোসেন ও তার বাহিনী এলাকা ছেড়ে আতœগোপনে চলে যায়। নূর হোসেনের এ মাদক আস্তানার খবর জেলা পুলিশ প্রশাসনের সকল কর্মকর্তা অবগত থাকলেও নূর হোসেন পালিয়ে যাওয়ার পরও কোন অভিযান চালায়নি। বৃহস্পতিবার জেলা পুলিশ প্রশাসনে বড় ধরনের রদবদল করার পরই শুক্রবার পুলিশ অভিযান পরিচালনা করে।

নারায়ণগঞ্জের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি নূর হোসেন আন্তঃজেলা ট্রাক চালক ইউনিয়নের সিদ্ধিরগঞ্জ শাখারও সভাপতি। শিমরাইল ট্রাকস্ট্যান্ডে তার আধিপত্য ছিল বলে এলাকাবাসী জানান।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সূত্রগুলো থেকে জানা যায়, কাঁচপুরে শীতলক্ষ্যা নদী দখল করে বালু-পাথরের ব্যবসা, উচ্ছেদে বাধা, পরিবহনে চাঁদাবাজিসহ নানা কারণে বারবার আলোচনায় এসেছেন নূর হোসেন। অভিযোগ রয়েছে, কাঁচপুর ও সিদ্ধিরগঞ্জে চাঁদাবাজি, নদী দখল, মাদক ব্যবসাসহ অনেক কিছুরই নিয়ন্ত্রক তিনি ও তাঁর লোকজন। তাঁর বিরুদ্ধে সিদ্ধিরগঞ্জ ও ফতুল্লা থানায় ছয়টি হত্যা মামলাসহ ২২টি মামলা রয়েছে।
এর আগে গত ৩ মে নূর হোসেনের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে একটি মাইক্রোবাস ও ১২ জনকে আটক করে পুলিশ। এসব ঘটনার পর থেকে বাড়িতে কেউ নেই। এ ছাড়া নূর হোসেনের বিভিন্ন আস্তানায় কয়েক দফা হামলা চালায় জনতা। এর পর থেকে তাঁর পরিবারের সদস্যরা পালিয়ে আছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *