নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে মালামাল সরবরাহ না করেই ২ কোটি টাকা গায়েব !

noakhaliমোফাজ্জল হোসেন টিপু, নোয়াখালী প্রতিনিধি :
২৫০ শয্যা বিশিষ্ট নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের সিসিটিভি, সিকিউরিটি সিষ্টেম ও ওটি ইকুইপমেন্ট স্থাপনের জন্য বরাদ্ধকৃত ২ কোটি টাকা কাগজেপত্রে  ঠিক রেখে কতিপয় অসাধু ব্যক্তি যোগ সাজসে পুরো টাকা উত্তোলন করে নিয়ে যায়। এমনকি ভ্যাট ও আয়কর প্রদানের ভুয়া চালান প্রস্তুত করে রাখে।
নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের একটি সূত্রে জানা যায়,স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যান মন্ত্রনালয়ের প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে  চলতি অর্থ বছরে অর্থ মন্ত্রনালয় বিশেষ ব্যয় খাতে বরাদ্ধকৃত ৩০ কোটি টাকার অব্যয়িত অর্থ হতে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে সিসিটিভি, সিকিউরিটি সিষ্টেম ও ওটি ইকুইপমেন্ট স্থাপনের জন্য দুই কোটি টাকা বরাদ্ধ দেয়। সে প্রেক্ষিতে হাসপাতাল তত্বাবধায়ক প্রয়োজনীয় মালামাল সরবরাহের নিমিত্তে দরপত্র আহবান করে। ১৮-০৮-১৩ তারিখে দরপত্র খোলা ও দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির সভা অনুষ্ঠিত  হয়। পরে ২০-১০-১৩ তারিখে  এ্যাক্টওয়ে টেকনোলজি (বিডি)লিঃ এর অনুকূলে তত্বাবধায়ক কর্তৃক কার্যাদেশ প্রদান  করে। কার্যাদেশ অনুযায়ী ওটির জন্য জার্মানীর তৈরী ২টি অবজারভেশন টেবিল,চায়নার তৈরি ৩পিস পেশেন মনিটর,সিঙ্গাপুরের তৈরি ১ প্যাকেজ আউটডোর ফার্মেসী ডিসপ্লে , চায়নার তৈরি ২৪ পিস ৭০০ টিভিএল ভিসুয়েল লেন্স সিসি ক্যামেরা, চায়নার তৈরি ৮ পিস হাইডেন সিসি টিভি ক্যামেরা, নেটওয়ার্ক ইন্টারফেস ডিভাইস (১৬ চ্যানেল ডি ভি আর সিসিসি টিভির জন্য) ২পিস,মালয়েশিয়ার তৈরি ২ পিস ডেক্সটপ কম্পিউটার, চায়নার তৈরি ১.৫ টন ২পিস এয়ার কন্ডিশন, আমেরিকার তৈরি ১ প্যাকেজ পিএ৬৫বিএ্ক্স (২৫০সেট),এভাবে ৪৬ আইটেম ২ কোটি টাকার মালামাল সরবরাহ ও ফিটিং এবং প্রশিক্ষন প্রদান করার কথা। নিয়োজিত ঠিকাদার ০২-০২-১৪ তারিখে মালামালগুলো নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের ষ্টোরে জমা দিয়েছে মর্মে চালান দাখিল করে। যাতে মালামাল বুঝিয়ে পেয়েছে বলেও ০৩-০২-১৪ তারিখে ষ্টোর কিপার, মূল্যায়ন কমিটির অন্যান্য সদস্য এবং হাসপাতাল তত্বাবধায়ক স্বাক্ষর করেন।
পরবর্তীতে এ্যাক্টওয়ে সরবরাহকৃত মালামালের ১কোটি ৯৯ লক্ষ ৯৮ হাজার ৪৬৪ টাকার বিল দাখিল করলে হাসপাতাল তত্বাবধায়ক ১১-০৩-১৪ তারিখে বিল পাশ করেন। অপরদিকে দাখিলকৃত বিলের মোট অংকের ৪ শতাংশ ভ্যাট আয়কর ট্রেজারি চালানের মাধ্যমে সরকারি তহবিলে জমা করার কথা। কিন্তু ট্রেজারি চালান লিখেছে ঠিকই কিন্তু  তা ব্যাংকে জমা  না করে হাসপাতাল তত্বাবধায়ক তাতে স্বাক্ষর করে ফাইলে রেখেছে। এতে সরকারি তহবিলের প্রায় ১৬ লক্ষ টাকাও কারো পকেটস্থ হয়। সরেজমিনে দেখা যায়, ২ কোটি টাকা মূল্যের সিসিটিভি,সিকিউরিটি সিষ্টেম ও ওটি ইকুপমেন্ট স্থাপনের ৪৬ আইটেম সরবরাহ করা হয়েছে বলে মালামাল বুঝিয়ে পেয়েছে বলে ষ্টোর কিপার, দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির সদস্য এবং তত্বাবধায়ক স্বাক্ষর করেছে ও বিল পরিশোধ করেছে। তা বাস্তবে বিপরীত। হাসপাতালে দুইটি টিভি ছাড়া অন্য কোন আইটেম দৃশ্যমান নয়। কোন প্রকার সিসি ক্যামেরা, পিএবিএক্স নেই, ওটিরঅবজারভেশন টেবিলও নেই। এ ব্যাপারে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের তত্বাবধায়কের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, আমি এখানে যোগদানের পূর্বেই ঘটনাটি ঘটেছে। ব্যাপারটি সম্পর্কে তেমন কিছু জানিনা। তবে হাসপাতালে ২টিভি ছাড়া অন্য কিছু দৃশ্যমান নয়। বিস্তারিত জানার পরে এ ব্যাপারে বলা যাবে।
হাসপাতালে অনুসন্ধানে গেলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে কর্মচারী জানায়, উল্লেখিত দূর্নীতি ও জালিয়াতির ঘটনায় (আর, এম, ও ) সাহেব মুখ না খুলতে সেকশানের সকল পিয়নকে খামের মধ্যে ২ হাজার টাকা করে সম্মানি ভাতা দিয়েছেন। এছাড়াও র্দীর্ঘ ৫ বছরে রোগিদের ঢাইড থেকে শুরু করে বিনামূল্যে ঔষধ সহ সকল বিষয়ে কোটি কোটি টাকার দূর্নীতির মহৎসব হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *