ঢাকাকে ঘিরে বিএনপির আন্দোলন পরিকল্পনা

bnP-Logo
ডেস্ক রিপোর্ট : রাজধানী ঢাকায় শক্তিশালী আন্দোলনের নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে সমন্বিত একটি কর্মপন্থা নিয়ে কাজ শুরু করেছে বিএনপি। দলের থিঙ্কট্যাঙ্করা বিষয়টি নিয়ে কাজ শুরু করার পর তা বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ার দিকে এগোচ্ছে। পরিকল্পনার অংশ হিসেবে কয়েক দিনের মধ্যে ঢাকা মহানগর বিএনপি কমিটি ঘোষণা করা হবে। তারপর যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের কমিটি গঠনের মাধ্যমে দলকে ‘কঠোর’ আন্দোলনের জন্য উপযুক্ত করে তুলবেন বিএনপিপ্রধান খালেদা জিয়া।
জানা গেছে, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দুই উপদেষ্টা এবং সাবেক কয়েকজন সামরিক ও বেসামরিক আমলা দলের আগামী এক বছরের কর্মপন্থা তৈরি করেছেন। কীভাবে কাকে দিয়ে কোন কমিটি গঠন করা উচিত— তার একটি প্রতিবেদন খালেদা জিয়ার কাছে জমা দেয়া হয়েছে।
এ পরিস্থিতিতে পুনর্গঠন প্রক্রিয়ায় আরও গতি আনার লক্ষ্যে আজ শনিবার দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী পর্যায়— জাতীয় স্থায়ী কমিটির সঙ্গে বৈঠক হবে বলে জানিয়েছেন লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান। রাতে গুলশান কার্যালয়ে বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। এতে ঢাকা মহানগর কমিটি পুনর্গঠনসহ পুরো পুনর্গঠন প্রক্রিয়ায় আরও দ্রুত গতিতে এগিয়ে নেয়া এবং ইস্যুভিত্তিক কিছু কর্মসূচি প্রণয়ন নিয়ে আলোচনা হতে পারে বলে জানা গেছে। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান দৈনিক বর্তমানকে বলেন, দল পুনর্গঠন প্রক্রিয়া বিষয়টি রুটিন ওয়ার্ক। তবে অল্প সময়ের মধ্যে দল গুছিয়ে কঠোর আন্দোলনে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন খালেদা জিয়া। সে জন্য পুনর্গঠন প্রক্রিয়ায় বিশেষ নজর দেয়া হয়েছে।
সূত্র মতে, পুনর্গঠন প্রক্রিয়া শেষ হলে দলের প্রতিটি ইউনিটে বিএনপির নেতৃত্বে অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সমন্বয়ে আন্দোলনের জন্য একটি কমিটি গঠন করা হবে। ওই কমিটি স্ব স্ব ইউনিটে কর্মসূচি সফল করার নেতৃত্বে থাকবে। কেন্দ্র শুধু আন্দোলনের কার্যক্রম মনিটর করবে।
সম্প্রতি একাধিক ঘরোয়া বৈঠকে খালেদা জিয়া বলেছেন, দল গুছিয়ে এবার কঠোর আন্দোলনে যাবেন তারা। এ জন্য হোমওয়ার্ক করা হয়েছে। এবার যেনতেন আন্দোলন হবে না। সমন্বিত আন্দোলন হবে, যাতে সরকারের পতন হয়।
দলীয় প্রধানের এ বক্তব্যের সূত্র ধরে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক থিঙ্কট্যাঙ্ক বর্তমানকে বলেন, ঢাকা মহানগরসহ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের প্রত্যেকটি কমিটি নিয়ে তারা প্রতিবেদন তৈরি করে তা খালেদা জিয়ার কাছে পেশ করেছেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা মনে করি, ইস্যুভিত্তিক আন্দোলনের মাধ্যমে দলীয় স্বাভাবিক কার্যক্রম চালিয়ে যেতে হবে এখন। সরকারের নানা কর্মকা-ে জনগণ আরও ফুঁসে উঠবে। নানা অনিয়ম ও অত্যাচারে জনগণ যখন ঘর থেকে বের হয়ে আসার উপক্রম হবে, তখন সময় বুঝে বিএনপিকে আন্দোলনের ডাক দিতে হবে; যাতে আন্দোলনে জনগণের সম্পৃক্ততা থাকে।
দলের একাধিক জ্যেষ্ঠ নেতা জানিয়েছেন, প্রাথমিকভাবে খালেদা জিয়া চেয়েছেন, বিএনপির জ্যেষ্ঠ ও গুরুত্বপূর্ণ সব নেতা মুক্ত হয়ে আসুক। সে অনুযায়ী গুরুত্বপূর্ণ প্রায় সব নেতাই এখন মুক্ত। খুব বড় ধরনের ঘটনা না ঘটলে আপাতত হরতাল-অবরোধের মতো কোনো কিছুতে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত রয়েছে দলটির। কারণ এ ধরনের কর্মসূচি দিলে নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে আবার নতুন করে মামলা দেয়ার সুযোগ পাবে সরকার। এতে যেমন পুনর্গঠন প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হবে, তেমনি আগামীর আন্দোলন প্রস্তুতিতেও ভাটা পড়বে।
সূত্র মতে, আন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দু ঢাকা মহানগরের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হবে। দু-একদিনের মধ্যে আবদুল আউয়াল মিন্টুকে আহ্বায়ক এবং হাবিব উন নবী সোহেলকে সদস্য সচিব করে কমিটি ঘোষণা করার কথা রয়েছে।
ওই কমিটি দেড় মাসের মধ্যে নগরীর সব থানা এবং ওয়ার্ড কমিটি গঠন করবে। এর পর ঢাকা মহানগরকে দুই ভাগে ভাগ করে অপেক্ষাকৃত তরুণ নেতৃত্ব আনা হবে। এতে সাবেক যুব নেতা ও ছাত্রদল নেতাদের প্রাধান্য থাকবে বলে জানা গেছে।
জানা গেছে, থিঙ্কট্যাঙ্করা খালেদা জিয়াকে পরামর্শ দিয়েছেন— ‘তারুণ্যনির্ভর দল গড়ে তুলতে। বয়সের ভারে ন্যুব্জ যারা তাদের উপদেষ্টা কমিটিতে নিয়োগ দিতে হবে।’ তাদের পরামর্শ ঠিক থাকলে দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটি থেকে অন্তত ৫ জন বাদ পড়বেন। সাংগঠনিকভাবে দক্ষ এমন অভিজ্ঞরা আসবেন দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের কমিটিতে। ভাইস চেয়ারম্যান, যুগ্ম মহাসচিব পর্যায়েও আসবে তরুণ নেতৃত্ব।
আন্দোলনে যাওয়ার আগে সারাদেশে সফর করে দাবির পক্ষে জনমত সৃষ্টির পরামর্শ দিয়েছেন দলীয় থিঙ্কট্যাঙ্করা। আগামী মাস থেকে জেলা সফরে বের হবেন তিনি। প্রথমে ঢাকার আশপাশের জেলাগুলোতে তার জনসভা করার কথা রয়েছে।
যুবদল ও ছাত্রদলের কমিটি নিয়েও কাজ করছেন থিঙ্কট্যাঙ্করা। বিভিন্ন পর্যায় থেকে খোঁজখবর নিয়ে খালেদা জিয়াকে পরামর্শ দিচ্ছেন তারা। জানা গেছে, যুবদলের কমিটির জন্য তিনটি ফরম্যাট তৈরি করা হয়েছে। এর একটি হচ্ছে— সভাপতি খায়রুল কবির খোকন, সাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জামান রতন এবং সাংগঠনিক সম্পাদক সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু। আরেকটিতে সভাপতি হিসেবে শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানির নাম রেখে বাকি দুটি পোস্টের জন্য রতন ও টুকুর নাম রাখা হয়েছে। তৃতীয় ফরম্যাটে কামরুজ্জামান রতন সভাপতি, সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু সাধারণ সম্পাদক এবং ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রশীদ হাবিবকে সাংগঠনিক সম্পাদক করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। অনেকেই অবশ্য মনে করেন, বর্তমান সাধারণ সম্পাদক সাইফুল আলম নীরবকে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে রাখতে চান।
জানা গেছে, ছাত্রদলের কমিটি গঠন নিয়ে শিক্ষক ও সাংবাদিকদের দুটি প্রতিবেদন জমা পড়েছে খালেদা জিয়ার হাতে। এ ছাড়া বিএনপির থিঙ্কট্যাঙ্করা বিভিন্ন পর্যায়ে খোঁজখবর নিচ্ছে। এ পর্যায়ে তিন মাসের জন্য একটি আহ্বায়ক কমিটি গঠনের বিষয়টি আলোচনা হচ্ছে। ওই কমিটি সারা দেশের কমিটি গঠন শেষে কেন্দ্রীয় সম্মেলন করে বিদায় নেবে। আহ্বায়ক হিসেবে বর্তমান সিনিয়র সহসভাপতি বজলুল করিম চৌধুরী আবেদের নামই শোনা যাচ্ছে।
স্বেচ্ছাসেবক দলের কমিটি নিয়েও আলোচনা হচ্ছে। জানা গেছে, হাবিব উন নবী সোহেল ঢাকা মহানগর কমিটিতে থাকলে, তার স্থালাভিষিক্ত হতে পারেন সাবেক ছাত্রনেতাদের একজন। আর সাধারণ সম্পাদক হতে পারেন বর্তমান সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল বারী বাবু। তবে কেউ কেউ বাবুকে সভাপতি করে কমিটি গঠনের পরামর্শ দিচ্ছেন। বর্তমান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *