তিস্তার বুক চিরে নিজেদের ভূখন্ডে অন্তত তিনটি বড় বড় ড্যাম নির্মাণ করেছে ভারত। এর মধ্যে গজলডোবা দিয়ে প্রতিদিন নিজেদের দিকে পানি সরিয়ে নিচ্ছে তারা। নির্মাণ করা হয়েছে ৩০টিরও বেশি পানি বিদ্যুৎ প্রকল্প। এসব প্রকল্পের আশে পাশে আছে আবার ছোট ছোট জলাধার। তাই বাংলাদেশ সীমান্তের প্রবাহ দিয়ে পানি আসতে আসতে নদী শুকিয়ে কাঠ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসব কারণে অদূর ভবিষ্যতে ব্যাপক পানি সমস্যায় ভুগতে হবে বাংলাদেশকে।
তিস্তা নদীটির উৎপত্তি ভারতের সিকিম রাজ্যের চিতামরোদে। সব মিলিয়ে এর গতিপথ ৩৬৬ কিলোমিটার। সিকিমের পাহাড়ি পথ আর পশ্চিমবঙ্গে এর প্রবাহ আড়াই’শ কিলোমিটার। এখানে নদীর বুক চিরে অন্তত তিনটি বড় বড় ড্যাম নির্মাণ করেছে দেশটি। এসব ড্যামকে কেন্দ্র করে ৩১টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে। তবে সবচেয়ে বড় কাজটা তারা করেছে বাংলাদেশের সীমান্তের ঠিক কাছাকাছি জলপাইগুড়ির গজলডোবায়। নদীর গতিপথ আটকে এই ড্যাম দিয়ে নিজেদের দিকে পানি সরিয়ে নেয় ভারত। নিয়ে যাওয়া হয় তাদেরই একটি নদী মহানন্দার মোহনায়।
ফলাফল গজলডোবা থেকে ৬৫ কিলোমিটার দূরে বাংলাদেশে তিস্তার পানির জন্য হাহাকার। বাংলাদেশ পানি সম্পদ পরিকল্পনার সাবেক মহাপরিচালক প্রকৌশলী মো. ইনামুল হক বলেন, গজলডোবা থেকে পানি সরিয়ে নিচ্ছে ভারত। তিস্তা বেসিং থেকে মহানন্দা বেসিং এ নিয়ে যাচ্ছে। আর মহানন্দা বেসিং থেকে প্রত্যাহারটা মূলত হচ্ছে গজলডোবা থেকে। আর আমরা যদি তিস্তার পাশে পুকুর করে রাখি তার পরেও সেই পানি শুকিয়ে যাবে।
নেই পানি, তাই অচল তিস্তার সেচ প্রকল্প। প্রায় সাড়ে ৬ লাখ হেক্টর জমিতে সেচের স্বপ্ন কেবল কাগজে কলমেই সীমাবদ্ধ থাকছে। বুয়েটের পানি প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. ম. আব্দুল মতিন বলেন, আমরা ১৫ হাজার হেক্টর জমির সেচের পানি পাচ্ছি না। আমাদের নূন্যতম ৪ হাজার কিউসেক পানি দরকার। সেখানে আমরা পাচ্ছি দু থেকে আড়াই’শ কিউসেক।
তবে তিস্তার পানি চেয়ে এই সরকারের গত মেয়াদেও অনেক দৌড়ঝাঁপ করেছে। তার পরেও শুষ্ক মৌসুমে পানি না পাওয়া একটা বড় মাথা ব্যথার কারণ হিসাবে দেখা দিয়েছে।
পানি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি রমেশ চন্দ্র সেন বলেন, আমরা কিন্তু কূটনৈতিক প্রজ্ঞার পরিচয় দিয়ে ইতিমধ্যে অনেকগুলো সই করেছি। শুধু পারিনি তিস্তা পানি চুক্তির অনুসাক্ষরটাকে বাস্তব করতে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং আমাদেরকে সরি বলেছে। বলেছেন আগামীতে আমরা ক্ষতায় আসতে পারলে অবশ্যই বিষয়টি দেখবো।
সম্প্রতি ভারত থেকে বলা হচ্ছে শুকনো মৌসুমে ভারতেই পানির অভাব। তারপরও ওপারে সচল বড় বড় সেচ প্রকল্পগুলো। চ্যানেল ২৪