তদন্ত একই বৃত্তে

Update Time : সোমবার, ১২ মে, ২০১৪
৩৬০ Time View

নারায়ণগঞ্জে সাত খুনের ঘটনায় জড়িতদের সন্ধানে পুলিশের নানামুখী প্রচেষ্টায় কার্যত কোনো সফলতা আসেনি। সন্দেহভাজন ২১ জনকে জিজ্ঞাসাবাদে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছেন বলে তদন্তসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা দাবি করেছেন। তবে নাগাল মেলেনি এজাহারভুক্ত একজন আসামিরও। এই অপহরণ ও হত্যার ঘটনায় র‌্যাব-১১-এর তৎকালীন তিন কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ প্রস্তুতি নিলেও গতকাল রাত পর্যন্ত তাঁদের হেফাজতে নেওয়া হয়নি। এদিকে গতকাল রাতে গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছে নিহত আইনজীবী চন্দন সরকারের পরিবার।

তদন্ত কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, অপহরণ ঘটনায় দায়ের করা মামলার প্রধান আসামি নূর হোসেনসহ এজাহারভুক্ত আসামিদের গ্রেপ্তারে নানা চেষ্টা চলছে। এ জন্য তাদের ঘনিষ্ঠজনদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। নজরদারি চলছে সর্বত্র। আর র‌্যাবের সাবেক তিন কর্মকর্তা পুলিশের নজরদারিতেই আছেন। যেকোনো সময় তাঁদের গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে হাজির করা হতে পারে। নূর হোসেনের কথিত গাড়িচালক মহিবুল্লাকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু হয়েছে।

অভিযুক্ত র‌্যাব সদস্যদের গ্রেপ্তার বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে নারায়ণগঞ্জের এসপি ড. খন্দকার মুহিদ উদ্দিন বলেন, অবসরে পাঠানো র‌্যাব-১১-এর তৎকালীন সিওসহ তিন কর্মকর্তাকে গতকাল রবিবার গ্রেপ্তারে ব্যবস্থা নেওয়ার আদেশ দিয়েছেন উচ্চ আদালত। আদালত যে আদেশ দেবেন, সেটা অবশ্যই পালন করতে হবে। এ নিয়ে আর কোনো কথা বলার সুযোগ নেই।

তদন্তের অগ্রগতি বিষয়ে পুলিশ সুপার জানান, সাত খুনের ঘটনায় বেশ কিছু অগ্রগতি আছে। নূর হোসেনসহ প্রকৃত খুনিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা অব্যাহত আছে। সর্বশেষ নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ থেকে নূর হোসেনের গাড়িচালক ও তাঁর শ্যালকসহ এ পর্যন্ত ২১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারা খুনের ঘটনায় জড়িত থাকার দায় অস্বীকার করেছে। তবে তাদের জিজ্ঞাসাবাদে মামলাসংশ্লিষ্ট অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। এত বড় ঘটনার তদন্ত এত অল্প সময়ে শেষ করা সম্ভব নয়। তবে পুলিশ সর্বোচ্চ ক্ষমতা প্রয়োগ করে বিষয়টি তদন্ত করছে। তদন্তের স্বার্থে গণমাধ্যমকে এখনই অনেক বিষয়ে খোলামেলা বলা সম্ভব নয়।

প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে স্বজনদের সাক্ষাৎ : নারায়ণগঞ্জে নিহত সাতজনের পরিবারের সদস্যরা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের আগ্রহ প্রকাশ করেছিল। এ বিষয়ে সম্মতি মেলায় গতকাল রাতে অ্যাডভোকেট চন্দন সরকারের পরিবার গণভবনে গিয়ে দেখা করেছেন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে।

এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জের অমানবিক ঘটনার সঙ্গে যে বা যারা জড়িত তাদের গ্রেপ্তারের সর্বাত্মক চেষ্টা চলছে।’ তিনি বলেন, ‘আমি ঘটনা শোনার পরই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছি, সুষ্ঠু তদন্ত করে প্রকৃত আসামিদের শনাক্ত ও তাদের গ্রেপ্তার করার।’

প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী মাহবুবুল হক শাকিল এ কথা জানিয়ে বলেন, প্রধানমন্ত্রী আবেগাপ্লুত হয়ে প্রয়াত চন্দন সরকারের স্ত্রী অর্চনা সরকারকে জড়িয়ে ধরেন এবং সান্ত্বনা দেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ঘটনার পরে সরকার নীরব বসে থাকেনি। নারায়ণগঞ্জের র‌্যাব, পুলিশ ও প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। শেখ হাসিনা বলেন, ‘একজন নির্বিবাদী কবিমানুষকে যারা হত্যা করেছে, তাদের খুঁজে বের করে শাস্তি নিশ্চিত করা হবে।’ ঘটনা-পরবর্তী সরকারের পদক্ষেপ কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করে প্রয়াতের পরিবারের সদস্যরা বলে, সরকার আন্তরিকভাবে প্রকৃত হত্যাকারীদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চালাচ্ছে। ‘প্রিয়জনের হত্যার বিচার আমাদের নেত্রীই করতে পারবেন’ উল্লেখ করে তারা বলে, ‘আপনি স্বজন হারানোর ব্যথার ভার বহন করছেন। আপনার পক্ষেই সম্ভব বিচার নিশ্চিত করা।’

অর্চনা সরকার প্রধানমন্ত্রীকে বলেন, চন্দন সরকার আইনজীবীর পাশাপাশি একজন কবিও ছিলেন। তিনি চন্দন সরকারের লেখা দুটি বই প্রধানমন্ত্রীকে উপহার দেন। অর্চনা সরকারের সঙ্গে মেয়ে ডা. সেজুতি সরকার, ডা. সুস্মিতা সরকার, সাথী সরকার ও সপ্তর্ষি সরকার, জামাতা ডা. বিজয় কুমার পাল, রণজিৎ দেবনাথ ও অমিত সিংহ এবং নাতনি রোদসী সরকার ছিলেন।

দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই : গতকাল দুপুরে জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে এসপি ড. খন্দকার মুহিদ উদ্দিন তদন্ত বিষয়ে নানা কথা বলেন। চন্দন সরকারের মোবাইলের ভিডিওচিত্র সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আমি একজন দায়িত্বশীল পদে থেকে যেকোনো মন্তব্য করতে পারি না। অনেক কিছুই এখনো অদৃশ্য রয়েছে। দৃশ্যমান হলে সেটা জানানো হবে।’ তিনি আরো বলেন, ‘কারা অপরাধীদের সহায়তা করতে পারে, আশ্রয় দিতে পারে এমন অনেক তথ্যের ওপর ভিত্তি করেই আমরা অভিযান চালাচ্ছি। সঠিক তথ্যের ওপর ভিত্তি করেই অভিযান চালানো হচ্ছে। এমন একটি বড় হত্যাকাণ্ডের মামলার সুরাহা করতে মাত্র ১২ দিন সময় যথেষ্ট নয়।’

আইনজীবীদের কর্মসূচি : সিনিয়র আইনজীবী চন্দন সরকারসহ সাত খুনের প্রতিবাদ ও খুনিদের গ্রেপ্তারসহ দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে অনির্দিষ্টকালের কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন নারায়ণগঞ্জের আইনজীবীরা। যার মধ্যে প্রতিদিন সকাল সাড়ে ৯টা থেকে সাড়ে ১০টা পর্যন্ত এক ঘণ্টা কর্মবিরতি, দুপুর ১২টা থেকে ১টা পর্যন্ত এক ঘণ্টা করে পর্যায়ক্রমে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল। গতকাল নারায়ণগঞ্জ আদালতে আইনজীবীদের মানববন্ধন চলাকালীন এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন।

এদিকে আইনজীবীদের কর্মসূচিতে সংহতি জানাতে গতকাল নারায়ণগঞ্জ আদালতে যান সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট আব্দুল বাসেদ মজুমদার, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ূন, অ্যাডভোকেট স ম রেজাউল করীম প্রমুখ।

গণশুনানির স্থান পরিবর্তন : নারায়ণগঞ্জে সাত খুনের ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটি গণশুনানির স্থান পরিবর্তন করেছে। নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের পরিবর্তে গণশুনানি অনুষ্ঠিত হবে সার্কিট হাউসে। আগামী ১২ ও ১৫ মে এই গণশুনানি সকাল ১০টা থেকে শুরু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তদন্ত সংশ্লিষ্টরা।