॥ চিঠি চালাচালি চলছে ॥
ডেস্ক রিপোর্ট : হাইকোর্টের নির্দেশের পর র্যাবের চাকরিচ্যুত তিন কর্মকর্তাকে গ্রেফতারের বিষয়টি নিয়ে স্বরাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মধ্যে চিঠি চালাচালি চলছে। তাদের ৫৪ ধারায় গ্রেফতার করা হতে পারে। নারায়ণগঞ্জের সাত খুন ঘটনায় প্রধান আসামি নূর হোসেন কোথায় আছে তা নিয়েও ধূম্রজালের সৃষ্টি হয়েছে। র্যাবের তিন কর্মকর্তার গ্রেফতার বিষয়ে কথা বলছেন না কোন কর্মকর্তাই।
পুলিশের আইজি হাসান মাহমুদ খন্দকারের কাছে তিন র্যাব কর্মকর্তা কবে গ্রেফতার হচ্ছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, আইনী প্রক্রিয়া চলছে। হাইকোর্টের আদেশ অনুসরণ করে গ্রেফতার-প্রক্রিয়া চালানো হচ্ছে। তবে কবে কখন র্যাবের তিন কর্মকর্তাকে গ্রেফতার করা হচ্ছে সে বিষয়ে কোন মন্তব্য করবেন না বলে জানিয়েছেন আইজি হাসান মাহমুদ খন্দকার।
তদন্তের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে চাকরিচ্যুত র্যাবের তিন কর্মকর্তাকে হস্তান্তর করার জন্য চিঠি দেয়া হয়েছে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়কে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় তাদেরকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে চিঠি দিয়ে হস্তান্তর প্রক্রিয়ার মাধ্যমে গ্রেফতার করা হবে বলে জানা গেছে। তবে মঙ্গলবার রাত আটটা পর্যন্ত র্যাবের তিন কর্মকর্তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে কি না সেই ব্যাপারে পুলিশের কোন কর্মকর্তাই মুখ খুলছেন না।
নারায়ণগঞ্জ জেলার পুলিশ সুপার ড. খন্দকার মহিদ উদ্দিনের কাছে র্যাবের তিন কর্মকর্তাকে গ্রেফতার করা হচ্ছে জানতে চাইলে তিনি জানান, আমরা এই ব্যাপারে চিকন সুতার মধ্য দিয়ে হাঁটছি। তিনি বলেন, বোঝেন তো বিষয়টি খুবই স্পর্শকাতর। তবে গ্রেফতারের ব্যাপারে দিনক্ষণ বলতে অস্বীকৃতি জানিয়ে পুলিশ সুপার বলেন, হাইকোর্টের গ্রেফতার আদেশ আমাদের কাছে পৌঁছানোর পর আমরা র্যাবের তিন কর্মকর্তাকে গ্রেফতারের প্রক্রিয়া শুরু করেছি।
রবিবার র্যাবের চাকরিচ্যুত তিন কর্মকর্তাকে গ্রেফতারে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিতে স্বরাষ্ট্র সচিবকে নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট। র্যাব-১১-এর সেই তিন কর্মকর্তা হলেন সাবেক অধিনায়ক লে. কর্নেল তারেক সাঈদ মোহাম্মদ, মেজর আরিফ হোসেন ও নারায়ণগঞ্জ ক্যাম্পের সাবেক প্রধান লে. কমান্ডার এমএম রানা। নারায়ণগঞ্জে সাত খুনের ঘটনায় সেনাবাহিনীর দুজনকে অকালীন এবং নৌবাহিনীর একজনকে বাধ্যতামূলক অবসর দেয়া হয়েছে। বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার ও বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ একটি রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে এ আদেশ দেয়। দ-বিধি বা বিশেষ ক্ষমতা আইনে তাদের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ পাওয়া না গেলে ৫৪ ধারায় গ্রেফতার করতে বলা হয়েছে।
মঙ্গলবার বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া সিদ্ধিরগঞ্জে গিয়ে সাত খুনের স্বজনদের সঙ্গে দেখা করে অভিযোগ করেছেন, নারায়ণগঞ্জের সাত খুনের প্রধান আসামি নূর হোসেনকে কলকাতায় পাঠিয়ে দিয়েছে র্যাব। এর আগে র্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক কর্নেল জিয়াউল হাসান সংবাদমাধ্যমে সাক্ষাতকারে বলেছেন, প্রধান আসামি নূর হোসেন কলকাতায় পালিয়ে গেছে। বর্তমানে কলকতায় আছে। নূর হোসেন কোথায় আছে তা নিয়ে ধূম্রজালের সৃষ্টি হয়েছে। নূর হোসেন আদৌ বেঁচে আছে নাকি প্রকৃতপক্ষেই কলকাতায় চলে গেছে তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ২৭ এপ্রিল ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিঙ্ক রোড থেকে দিনে-দুপুরে আইনশৃক্সখলা বাহিনীর পরিচয়ে নাসিকের ২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলাম, এ্যাডভোকেট চন্দন সরকার, গাড়িচালক জাহাঙ্গীর, শেখ রাসেল জাতীয় শিশু কিশোর সংগঠনের সিদ্ধিরগঞ্জ থানা কমিটির সহসভাপতি তাজুল ইসলাম, ৭ নম্বর ওয়ার্ডের যুবলীগ কর্মী মনিরুজ্জামান স্বপন, লিটন ও গাড়িচালকসহ সাতজনকে অপহরণ করা হয়। অপহরণকারীরা সাতজনকে নির্মমভাবে খুন করে নারায়ণগঞ্জের বন্দর থানার কলাগাছিয়া ইউনিয়ন এলাকার শীতলক্ষ্যা নদীরত বস্তাবন্দী করে তাতে ইটভর্তি করে বিশেষ ধরনের রশি দিয়ে বেঁধে পানিতে ডুবিয়ে দেয়। শীতলক্ষ্যা নদীতে সাত লাশ ভেসে ওঠার পর তাদের প্রধান আসামি নূর হোসেন র্যাবকে ৬ কোটি টাকা দিয়ে খুন করিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন স্বজনরা।
নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, নিরাপত্তার প্রশ্নে কঠোর গোপনীয়তায় সাংবাদিকদের দৃষ্টি এড়িয়ে, সময় গভীর রাতে যানজটমুক্ত কোন এক সময়ে র্যাবের চাকরিচ্যুত তিন কর্মকর্তাকে ঢাকার সেনানিবাসের লগ এরিয়া থেকে নারায়ণগঞ্জে নিয়ে আসা হবে। জনকণ্ঠ