রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি : রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে এক নেতার ‘অসুস্থতার’ কথা বলে হামলা চালিয়ে পরীক্ষা বন্ধ করে দিয়েছেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদুল্লাহ কলা ভবনে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগে এ ঘটনা ঘটে।
এদিকে ‘অসুস্থ’ ছাত্রলীগ নেতার পদ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ভিন্ন বক্তব্য দিয়েছেন।
বিভাগ সূত্রে জানা যায়, পরীক্ষার সূচি অনুযায়ী আজ সকাল সাড়ে নয়টা থেকে বিভাগের মাস্টার্সের ৫০৫ নম্বর কোর্সের পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল। বৌদ্ধপূর্ণিমা উপলক্ষে ক্যাম্পাস বন্ধ থাকলেও দ্রুত পরীক্ষা শেষ করার জন্য বিভাগের একাডেমিক বৈঠকে গতকাল পরীক্ষা গ্রহণের সিদ্ধান্ত হয়। দুদিন আগে নোটিসের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের এ সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়। তবে ছাত্রলীগের নেতা ও বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান ‘অসুস্থতার’ কথা বলে পরীক্ষা পেছাতে অনুরোধ করেন। তবে এ বিষয়ে লিখিত আবেদন না করায় বিভাগের পক্ষ থেকে পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।
বিভাগের শিক্ষার্থী ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকাল সাড়ে নয়টার দিকে মাস্টার্সের পরীক্ষা ছিল। পরীক্ষা শুরুর আধা ঘণ্টা আগে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি রানা চৌধুরী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুর রহমান ও পরিবেশ-বিষয়ক সম্পাদক মুস্তাকিম বিল্লাহর নেতৃত্বে ১৫-২০ জন নেতা-কর্মী কলা ভবনে গিয়ে পরীক্ষার জন্য নির্ধারিত ২০৪ নম্বর কক্ষে তালা ঝুলিয়ে দেন। এঁদের মধ্যে রানা ও মাহবুবুর পরীক্ষার্থী হলেও মুস্তাকিমসহ বেশ কয়েকজন বহিরাগত। ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা চলে গেলে তালা ভেঙে নির্ধারিত সময়ে পরীক্ষা গ্রহণ শুরু করেন শিক্ষকেরা। ১০৯ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে আজ ২৫-৩০ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেন। বাকিরা পরীক্ষায় অংশ না নিয়ে বিভাগের ভবনের সামনে অবস্থান করছিলেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, পরীক্ষা শুরুর প্রায় এক ঘণ্টা পর সাড়ে ১০টায় ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা হলে গিয়ে পরীক্ষা বন্ধ করতে শিক্ষকদের চাপ দিতে শুরু করেন। এ সময় কক্ষের একটি জানালার দুটি কপাটের কাচ ভাঙচুর করেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। শিক্ষকরা বাধা দিতে গেলে ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটে। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও মতিহার থানার ওসি এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন এবং পরীক্ষা বন্ধ করে দেওয়া হয়।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি রানা চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের সহপাঠী বন্ধু অসুস্থ হওয়ায় পরীক্ষা পেছানোর অনুরোধ করি। আমরা কোনো ভাঙচুর করিনি।’
ছাত্রলীগের সভাপতি মিজানুর রহমানের দাবি, ‘সহপাঠী অসুস্থ থাকায় অনেক শিক্ষার্থী পরীক্ষা দিতে চায়নি। কিন্তু শিক্ষকরা জোর করে পরীক্ষা নেন। শিক্ষার্থীরা এর প্রতিবাদ জানিয়েছে। এখানে ছাত্রলীগের কোনো সম্পৃক্ততা নেই।’
ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের সভাপতি সৈয়দা নূরে কাছেদা খাতুন বলেন, ‘পরীক্ষার হলে ১৫-২০ জন উগ্র শিক্ষার্থী হামলা চালায়। এ সময় তারা শিক্ষার্থীদের ওপর চড়াও হয়। বাধা দিলে শিক্ষকদেরও তারা ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। পরে বাধ্য হয়ে আমরা পরীক্ষা বন্ধ করে দিয়েছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘গত রোববার অসুস্থতার কথা বললে আমি লিখিত আবেদন দিতে বলি। কিন্তু লিখিত আবেদন না দেওয়ায় পরীক্ষা বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব হয়নি।’ বেশির ভাগ শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ না করা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘অনেককেই ভয়ভীতি দেখিয়ে পরীক্ষার হলে আসতে দেওয়া হয়নি।’
মেহেদী হাসানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি দাবি করেন, গত তিন দিন ধরে তিনি জ্বর ও ডায়রিয়ায় ভুগছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর তারিকুল হাসান বলেন, ‘কিছু শিক্ষার্থীর সঙ্গে পরীক্ষা দেওয়া নিয়ে শিক্ষকদের একটু ঝামেলা হয়েছিল। তবে এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে। এ বিষয়ে শিক্ষকদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
পদ নিয়ে বিতর্কে মেহেদী হাসান : ছাত্রলীগের নেতা মেহেদী হাসানের পরীক্ষায় অংশ না নেওয়া নিয়ে তুলকালাম কাণ্ড ঘটে গেলেও তার পদ নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের মেহেদী হাসান নামের ওই নেতাকে সংগঠনের সহসভাপতি দাবি করেছেন ছাত্রলীগের সভাপতি মিজানুর রহমান। তবে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম তৌহিদ আল হোসেন বলেন, ‘ওই শিক্ষার্থী সংগঠনের কোনো পদে নেই। ছাত্রলীগের নাম ভাঙিয়ে সে অপকর্ম করছে। কমিটিতে যে মেহেদী হাসান আছেন, তিনি সমাজকর্ম বিভাগের।’