বাহরাম খান ও মামুন মিয়া, নারায়ণগঞ্জ থেকে : একের পর এক নতুন অভিযোগ বেরিয়ে আসছে র্যাব-১১ এর সাবেক সিও (কমান্ড অফিসার) তারেক সাঈদের বিরুদ্ধে। এবার তার বিরুদ্ধে দুই কোটি টাকা চাওয়ার অভিযোগ তুলেছেন তিন মাস সাত দিন আগে অপহৃত মোহাম্মদ ইসমাইলের স্ত্রী মোসাম্মৎ জ্যোৎস্না ও তার ভাই মোহাম্মদ হান্নান। এখনও পর্যন্ত উদ্ধার হননি ঈসমাইল।
মঙ্গলবার বিকেল চারটার দিকে নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপারের সঙ্গে দেখা করে বেরিয়ে আসার পর এই প্রতিবেদকের কথা হয় ইসমাইলের স্ত্রী মোসাম্মৎ জ্যোৎস্না ও ভাই মোহাম্মদ হান্নানের।
মোহাম্মদ হান্নান দ্য রিপোর্টের কাছে অভিযোগ করে বলেছেন, ‘গত ৭ ফেব্রুয়ারি আমার ভাই মোহাম্মদ ইসমাইল তার বন্ধু হিরণের (মাজহারুল ইসলাম) গাড়িতে করে নারায়ণগঞ্জের দিকে আসছিল। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের আশিক নার্সারির সামনে থেকে তুলে নেয় র্যাবের লোকেরা। অপহরণের ১৫-১৬ দিন পর একটি সূত্র আমাদের জানায়, র্যাবের কাছে ভাই (ইসমাইল) আছে। তখন র্যাবের কাছে গেলে তৎকালীন সিও তারেক আমাদের দুই কোটি টাকা নিয়ে আসতে বলেন। ’
এই বিষয়ে মাজহারুল ইসলাম হিরণের কাছে জানতে চাইলে তিনি দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘আমি আর ইসমাইল মিলে সিদ্ধিরগঞ্জের মিজমিজি এলাকায় যাচ্ছিলাম। আনুমানিক রাত সাড়ে আটটার (৭ ফেব্রুয়ারি) দিকে বড় একটি হাই-এইস মাইক্রো ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের আশিক নার্সারির সামনে আমাদের গাড়ির গতিরোধ করে ইসমাইলকে তুলে নেয়। এ সময় আমার শরীরে আঘাত করে।রাস্তা দিয়ে যাওয়া গাড়ি থামাতে চাইলে অপহরণকারীরা নিজেদের র্যাব সদস্য পরিচয় দিয়ে কাউকে থামাতে দেয়নি।
’মোহাম্মদ হান্নান বাদী হয়ে গত ৯ ফেব্রুয়ারি সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় ছয়জনকে বিবাদী করে একটি মামলা করেন। মামলা নং- ৬। আসামিরা হলেন, মো. মোশারফ, নাছির উদ্দিন, কাইয়ুম, মো. সেলিম, মামুন ও কাউছার। এদের সবাই সোনার গাঁ থানার কুতুবপুর গ্রামের অধিবাসী। এজাহারে উল্লিখিত এ সব আসামির সঙ্গে ইসমাইলের ‘বিভিন্ন’ বিষয় নিয়ে বিরোধ চলছিল বলে অভিযোগ করা হয়।
র্যাবের (র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন) বিরুদ্ধে অভিযোগ করছেন কিন্তু মামলায় তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ নেই কেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে মামলার বাদী মোহাম্মদ হান্নান বলেন, ‘আমরা র্যাবের নামেও মামলা করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তৎকালীন সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ওসি আবদুল মতিন মামলা নেননি। তিনি বলেছিলেন, র্যাবের বিরুদ্ধে মামলা করা যাবে না। এরপর আমরা বাধ্য হয়ে র্যাবকে বাদ দিয়েই মামলা করি।’
এরপর আপনারা কি করলেন- এমন প্রশ্নের জবাবে ইসমাইলের স্ত্রী মোসাম্মৎ জ্যোৎস্না বলেন, ‘প্রথম ১৪-১৫ দিন র্যাবের অফিসে গেলে রিসিপশন থেকেই আমাদের বের করে দিত। ভেতরে ঢুকতে দিত না। কিন্তু একটি সূত্রের মাধ্যমে টেলিফোন পাওয়ার পর একটি চিরকুট পায় আমার দেবর হান্নান। সেই চিরকুটে কাচঁপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ফজলুল হকসহ র্যাবের সঙ্গে দেখা করতে বলে। সেই অনুযায়ী র্যাব-১১ এর ইপিজেড এর অফিসে গেলে আমাদের সিও (তারেক সাঈদ) সাহেবের রুমে নিয়ে যায়। তারেক সাঈদ আমাদের দেখেই বলে- ও তোমরা ইসমাইলের লোক। ইসমাইল তো খুব ডেঞ্জার লোক। ওর এই অবস্থাই হবে।’
জ্যোৎস্না আরও বলেন, এরপর আমি উনার পায়ে ধরে অনেক কান্নাকাটি করি। তিনি দুই কোটি টাকা নিয়ে আসতে পারলে আমার স্বামীকে ছাড়বে বলে জানান। কিন্তু আমরা এক কোটি টাকা দিতে চেয়েছিলাম। এই টাকাতে তিনি রাজি হননি।’
এই বিষয়ে কাঁচপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ফজলুল হকের সঙ্গে কথা বলতে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
অপহৃত ইসমাইলের স্ত্রী ও ভাইয়ের কাছে তাদের বর্তমান চেষ্টার কথা জানতে চাইলে তারা জানান, আলোচিত সাত হত্যাকাণ্ড হওয়ার আগ পর্যন্ত র্যাবের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ ছিল। কিন্তু এরপর আর কোনো যোগাযোগ নাই। কি করব বুঝতে পারছি না। তিন-চারদিন আগেও বর্তমান এসপি সাহেবের কাছে আসছিলাম। আজকে আবার আসলাম।
এসপি সাহেব কি বলেছেন? জবাবে মোহাম্মদ হান্নান বলেন, এসপি বলছেন, বর্তমানে তারা সেভেন মার্ডার নিয়ে ব্যস্ত। আমাদের আশ্বাস দিয়েছেন তিনি বিষয়টা দেখবেন।
এর আগের এসপির (সৈয়দ নূরুল ইসলাম) সঙ্গে দেখা করেছিলেন?-এমন প্রশ্নে হ্যাঁ সূচক জবাব দিয়ে ইসমাইলের স্ত্রী বলেন, আগের এসপি সাহেবের কাছে কোনো সহযোগিতা পাইনি। তিনি বলছিলেন- র্যাব তো জিজ্ঞাসাবাদের জন্য অনেককে আটক করে। আপনার স্বামীকেও হয়ত আটক করেছে। দেখবেন ছেড়ে দিবে।
নিখোঁজ ইসমাইলের স্ত্রী ও ভাই বুধবার নারায়ণগঞ্জে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করবেন বলে জানান।দি রি