বিগত কয়েক বছরে র্যাবের বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, নির্যাতন, জোরপূর্বক গুম এবং মানবাধিকার লঙ্ঘন সংক্রান্ত কাজের জন্য সুষ্ঠু বিচার করতে স্বাধীন তদন্ত কমিশন গঠন করার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আহবান জানিয়েছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)।
বুধবার মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরাবর পাঠানো একটি খোলা চিঠির মাধ্যমে র্যাবের মানবাধিকার লঙ্ঘন বিষয়ে এই আহবান জানানো হয়।
চিঠির প্রতিপাদ্য বিষয়ে জোর দিয়ে এইচআরডব্লিউ’র এশিয়া বিষয়ক পরিচালক ব্র্যাড এডামস বলেন, শুধুমাত্র নারায়ণগঞ্জ নয় বরং প্রতিটি ঘটনার জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে পদক্ষেপ নিতে হবে এবং প্রতিটি ঘটনার জন্য স্বাধীন তদন্ত কমিশন গঠন করতে হবে।
নিউইয়র্ক ভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থাটি বরাবরের ন্যায় এবারও র্যাব বাহিনী বিলুপ্ত করার আহবান জানায়। সেই সাথে অপরাধ ও সন্ত্রাসবাদ নিয়ন্ত্রণে র্যাবের পরিবর্তে নতুন বাহিনী গঠন করার আহবান জানানো হয়েছে। সংস্থাটির পক্ষ থেকে এমন একটি বাহিনী গঠন করার কথা বলা হয়েছে যারা প্রতিটি কাজের জন্য জবাবদিহিতা করতে সক্ষম হবে।
চিঠিতে নারায়ণগঞ্জের ঘটনার বিষয়ে উচ্চ আদালতের নির্দেশনার ব্যাপারেও কথা বলা হয়েছে। এদিকে র্যাব ও নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে সংঘটিত নারায়ণগঞ্জের চাঞ্চল্যকর সেভেন মার্ডারের ঘটনার পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছিলেন যে ঘটনার সাথে জড়িত ব্যক্তিদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে বিচারাধীন করার জন্য কঠোর নির্দেশনা দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ঘটনার পর উচ্চ আদালত সুষ্ঠু তদন্ত করার জন্য স্বাধীন তদন্ত কমিশন গঠন করার নির্দেশ দেন। সেই সাথে অপহরণ ও খুনের ঘটনার সাথে জড়িত সন্দেহে তিন র্যাব কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করার নির্দেশ দেন।
এই বিষয়ে ব্র্যাড এডামস বলেন, বিগত কয়েক বছরে শত অভিযোগের সত্ত্বেও সরকার র্যাবের বিরুদ্ধে তদন্ত করতে অনিহা প্রকাশ করে। কিন্ত নারায়ণগঞ্জ হত্যাকাণ্ডের পর সরকার তার কৌশল পরিবর্তন করে এবং দ্রুত পদক্ষেপ গঠন করে। সরকারের এমন দ্রুত পদক্ষেপের কারণে আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর অনিয়ম রোধে বেশ কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার আশা দেখা যাচ্ছে।
চিঠিতে বলা আরও বলা হয়েছে, অনেক আগে থেকেই সংস্থাটির পক্ষ থেকে বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য র্যাবকে দায়ী করা হয়েছে।
এছাড়া সাম্প্রতিক এইচআরডব্লিউ তথ্যে ৫ জানুয়ারির সাধারণ নির্বাচনের আগে ও পরে ১১ জন বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের খুনের বিষয়ে উল্লেখ করা হয়েছিল। এই ঘটনাগুলোর বিষয়ে বাংলাদেশের গণমাধ্যমে বেশ কয়েকটি রিপোর্ট প্রকাশ প্রসঙ্গেও বলা হয়েছে। সংস্থাটির তথ্যে বলা হয়েছে যে এই ধরনের ছয়টি ঘটনায় দেখা গেছে যে আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা প্রথমে আক্রান্তদের আটক করে এবং পরবর্তীতে আটককৃতদের গুলি করে হত্যা করা হয়। সুতরাং বর্তমান প্রেক্ষাপট অনুযায়ী র্যাব বাহিনীকে বিলুপ্ত করার সঠিক সময় এসেছে।
তথ্যে আরও বলা হয়েছে যে এর আগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া অপরাধ ও জঙ্গিবাদ নিয়ন্ত্রণের জন্য র্যাব গঠন করেছিলেন। র্যাবের কার্যক্রম দেখে খালেদা জিয়াও এখন র্যাব বাহিনী বিলুপ্ত করার জন্য সরকারকে আহবান জানিয়েছেন।
সুতরাং দীর্ঘসময় ধরে নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলো বন্ধ করার জন্য সঠিক সময় এসে গেছে। র্যাব বিলুপ্ত করে আলাদা একটি বাহিনী গঠন করা দরকার, যে বাহিনীটি আইনকানুন মেনে চলবে এবং জবাবদিহি করতে বাধ্য থাকবে। গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় ডেথ স্কোয়াডের কোনে জায়গা থাকতে পারে না।আ স
অনুবাদ : জুলকারনাইন জ্যাকি