এবার অনুনোমদিত ‘ফিল্টার্ড পানি’ ব্যবসার কেলেঙ্কারিতে জড়াল ঢাকা ওয়াসা। আর চমকে ওঠার মতো এই তথ্য হাতেনাতে আজ বৃহস্পতিবার ধরা পড়ল খোদ ওয়াসারই ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে। সরেজমিনে দেখা গেল, ওয়াসারই একটি চক্র প্রতিদিন ৫০০ টাকার এক গাড়ি পানি বিনা রশিদে সরবরাহ করছে অবৈধ ‘ফিল্টার্ড পানি’ ব্যবসায়ীকে। আর ব্যবসায়ী সেই পানি সরাসরি জারে ভরে ‘ফিল্টার্ড পানি’ হিসেবে দোকান ও রেঁস্তোরায় বিক্রি করছে অন্তত ছয় হাজার টাকায়।
ঢাকা ওয়াসার ম্যাজিস্ট্রেট খলিল আহমেদের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালত আজ বৃহস্পতিবার দুপুর ১টার দিকে এক প্ল্যাটুন পুলিশসহ অভিযান চালান মিরপুর ১০ নম্বর গোল চত্বরের শাহ আলী মার্কেটের পেছনে ২/২০ সেনপাড়া এলাকায়। গোপন সূত্রে খবর ছিল, সেখানে একটি অবৈধ ‘ফিল্টার্ড পানি’র কারখানা রয়েছে। জনৈক পাপ্পু নামের স্থানীয় এক বখাটে হোমরা-চোমড়া এর হোতা। এর আগেও দুই দফায় সেখানে অভিযান চালিয়ে বিএসটিআইর অনুমোদনহীন তাঁর ‘ফিল্টার্ড পানি’র কারখানা বন্ধ করে দেওয়া হয়। কিন্তু এরপরও থেমে নেই।
সরেজমিনে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেল, সেনপাড়া হকার্স মার্কেটের পেছনে একটি মুরগির খামারের এক কোণে বিশাল একটি ভূগর্ভস্থ পানির ট্যাঙ্ক। সেখানে মিরপুর অঞ্চলের ওয়াসা বিভাগের (জোন-১০) একটি গাড়ি (নম্বর : ঢাকা মেট্রো ঢ-১১-০০-১৩) পাইপ দিয়ে পানি সরবরাহ করছে। গাড়ির ড্রাইভার বাবুল খান ম্যাজিস্ট্রেটের জিজ্ঞাসাবাদের জবাবে ওই পানি সরবরাহ করার জন্য কোনো টাকা আদায়ের রশিদ ও গেট পাস দেখাতে পারেননি। এমনকি তিনি কাকে পানি সরবরাহ করছেন সেই ব্যক্তিকেও তিনি ঘটনাস্থলে দেখাতে পারেননি। জিজ্ঞসাবাদের জবাবে ড্রাইভার বাবুল স্বীকার করে বলেন, ‘আমি প্রতিদিন এখানে পাপ্পুকে এক গাড়ি পানি দেই। ঘটনাস্থল থেকে এক গাড়ি পানির (পাঁচ হাজার লিটার) দাম ৫০০ টাকা বুঝে নেই। পরে পাপ্পুর নামের অফিস থেকে রশিদ দেওয়া হয়। উপরের বসরা আমাকে এই কাজ করতে নির্দেশ দিয়েছেন। তাই বাধ্য হয়ে করছি।’
আশপাশের কয়েকজন দোকানী ভ্রাম্যমাণ আদালতকে জানান, বেশ কয়েক বছর হলো, ওই পানির ট্যাঙ্ক থেকে ওয়াসার পানি পাইপ দিয়ে তুলে ২০ লিটারের বড় জারে ভরে ‘ফিল্টার্ড পানি’ হিসেবে ২৫ টাকা করে বিক্রি করা হয়। প্রতিদিন দুপুরে ওয়াসার গাড়ি এসে ট্যাঙ্কি ভর্তি করে দিয়ে যায়। আর ভোর সাড়ে ৫টার দিকে দুই ট্রাক ভর্তি খালি জার এসে সেই পানি ‘ফিল্টার্ড পানি’ হিসেবে বোতলজাত করে আশপাশের সব মার্কেটের দোকানে সরবরাহ করে। সন্ধ্যায়ও লাইন দিয়ে রিকশা ভ্যান এসে সেখান থেকে ‘ফিল্টার্ড পানি’ কিনে নিয়ে যায়।
ঘটনা তদন্ত করে ম্যাজিস্ট্রেট খলিল আহমেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ওয়াসার (জোন-১০) একটি দুষ্টচক্র এই অবৈধ পানি বিক্রির ব্যবসার সঙ্গে জড়িত হয়ে পড়েছে বলে মনে হচ্ছে। কারণ অভিযুক্ত ২/২০ সেনপাড়া ঠিকানাটি ওয়াসার কোনো গ্রাহকের নয়। গ্রাহক ছাড়া অন্য কাউকে এভাবে ওয়াসার পানি সরবরাহ করার নিয়ম নেই। তা ছাড়া এটি একটি অবৈধ ফিল্টার্ড পানি বিক্রির কারখানা। এটি এর আগে আমরা দুই দফা সিলগালা করে দিয়েছিলাম। এলাকাবাসী জানাচ্ছে, প্রতিদিন ওয়াসার গাড়ি এই অবৈধ ফিল্টার্ড পানি বিক্রেতাকে পানি সরবরাহ করছে। তিনি আরো বলেন, ওয়াসার ড্রাইভার বাবুলও কে পানি কিনছেন, তাঁকে শনাক্ত করতে পারেনি। তাঁর কাছে পানি বিক্রির কোনো রশিদও নেই, গেট পাসও নেই। সব মিলিয়ে মনে হচ্ছে, এই অবৈধ ব্যবসার সঙ্গে ওয়াসারই একটি দুষ্ট চক্র জড়িত হয়ে পড়েছে। বিষয়টি বিভাগীয় তদন্তের দাবি রাখে।
এদিকে ড্রাইভার বাবুল তরিঘড়ি করে তাঁর অফিস ওয়াসা জোন-১০ এ ফোন করে আরেক কর্মচারীর মাধ্যমে সেদিনের পানি বিক্রির রশিদ ও গেট পাস নিয়ে আসেন। তবে ভ্রাম্যমাণ আদালতে তিনি স্বীকারোক্তি দেন, জনৈক পাপ্পুর নামে রশিদ নিয়ে এলেও ওয়াসা কর্তৃপক্ষ এই টাকা পায়নি। ওয়ারলেস অপারেটর মো. আলী তাকে বলেছিলেন, পাপ্পুকে পানি দেওয়ার পর ঘটনাস্থল থেকে এই টাকা নিতে।
সবশেষ বৃহস্পতিবারই ভ্রাম্যমাণ আদালত ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক বরাবরে লিখিত অভিযোগে জানিয়েছে। অভিযোগে পুরো ঘটনাটির বিভাগীয় তদন্ত দাবি করা হয়।