গ্লাসকোস্মিথক্লাইন: ঘুষ-উপঢৌকন-নিষিদ্ধ ঔষধ বিক্রি

7427ea210a18135ec87318-300x239
॥ মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে মানুষ ॥
ডেস্ক রিপোর্ট : দুর্বল ব্যবস্থাপনা ও পাহাড় সমান দুর্নীতি দিয়ে ঘেরা বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাত। সরকারি স্বাস্থ্যখাতকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ব্যাঙের ছাতার মত গজিয়ে উঠেছে বেসরকারি ক্লিনিক-হাসপাতাল-মেডিকেল কলেজ।
চিকিৎসা সেবা এখন অনেকাংশেই ক্লিনিক ভিত্তিক হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই সব ক্লিনিক-হাসপাতালের চিকিৎসকরা আবার বিভিন্ন বৃহৎ ঔষধ কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধিতে পরিণত হয়েছে। অর্থের বিনিময়ে বেসরকারি বিভিন্ন চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের চিকিৎসকরা সংশ্লিষ্ট কোম্পানির ঔষধ কিনতে রোগীদের পরামর্শ দিচ্ছে। আর বিনিময়ে পাচ্ছে অর্থসহ নানান উপহার। চিকিৎসক ও ঔষধ কোম্পানির এই যোগসাজশে বিক্রি হচ্ছে অনিবন্ধিত ও নিষিদ্ধ ঔষধ। তবে কেবল বাংলাদেশেই নয়, চিকিৎসকের অবৈধ সুবিধা দিয়ে ঔষধ বিক্রির ব্যবসা চলে বিশ্ব জুড়েই।
সম্প্রতি যুক্তরাজ্যভিত্তিক ঔষধ উৎপাদন প্রতিষ্ঠান গ্লাসকোস্মিথ ক্লাইনের এক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে চীনের ডাক্তারদের ঘুষ প্রদানের প্রমাণ পেয়েছে চীনের পুলিশ। এছাড়া একই অপরাধের কারণে কোম্পানিটির বিরুদ্ধে অভিযোগ আনে যুক্তরাষ্ট্র। পরে যুক্তরাষ্ট্র সরকারকে ৩ বিলিয়ন ডলার জরিমানা দেওয়ার মাধ্যমে অভিযোগ থেকে মুক্তি পায় গ্লাসকোস্মিথ ক্লাইন।
চীনের বাজারে ঔষধ সরবরাহে বড় নাম গ্লাসকোস্মিথ ক্লাইন। দেশটির দুর্বল স্বাস্থ্যখাত ও চিকিৎসকদের দুর্নীতির মনোভাবকে কাজে লাগিয়ে কোম্পানিটি প্রতি বছর বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার হাতিয়ে নিচ্ছে। চীনা পুলিশের মতে, গ্লাসকোস্মিথ ক্লাইন কোম্পানির কর্মকর্তারা স্থানীয় চিকিৎসকদের মোটা অংকের অর্থ দিয়ে তাদের কোম্পানির ঔষধ সেবনের জন্য রোগীদের পরামর্শ দিতে বলে। আর কোম্পানির কর্মকর্তারা চিকিৎসকদের কয়েক বিলিয়ন ইয়েন ঘুষ দিয়েছে বলে প্রমাণ পেয়েছে চীনের পুলিশ।
কেবল চিকিৎসকদের নয়, একই সাথে বিভিন্ন হাসপাতালের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদেরও ঘুষ দিয়েছে কোম্পানিটি। চীনের পুলিশের মতে, এক বছরে চীনের বিভিন্ন হাসপাতালের ডাক্তার, কর্মকর্তা ও স্টাফদেরকে কোম্পানিটির ঘুষ দেওয়ার পরিমাণ ৩ বিলিয়ন ইয়েন। উল্লেখ্য, কোম্পানিটি ব্যক্তিভেদে ৭ হাজার ইয়েন বা তার বেশি ঘুষ দিত। ঘুষ প্রদানের এই অভিযোগে এক বৃটিশ রাষ্ট্রজনের বিরুদ্ধে অভিযোগও দায়ের করেছে পুলিশ।
বৃটেনভিত্তিক কোম্পানি গ্লাসকোস্মিথ ক্লাইনের বিরুদ্ধে ঘুষ দিয়ে ঔষধ বাজারজাত ও রোগীদের কাছে পৌঁছানর অভিযোগ এবারই প্রথম নয়। লেবানন, জর্ডান ও ইরাকেও একই অপরাধ করেছে কোম্পানিটি। কোম্পানির নিজস্ব সূত্র মতে, লেবানন ও জর্ডানে এক কর্মকর্তা স্থানীয় চিকিৎসকদের ঘুষ দেয়। বিনিময়ে চিকিৎসকরা কোম্পানিটির ঔষধ সেবনের জন্য রোগীদের পরামর্শ দেয়। ইরাকেও কোম্পানিটির বিরুদ্ধে একই অভিযোগ উঠেছে।
একই অভিযোগে ২০১২ সালে ২ জুলাই কোম্পানির বিরুদ্ধে ক্রিমিনাল চার্জ গঠন করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকার। দেশটির চিকিৎসকদের ঘুষ দিয়ে নিন্মমানের ঔষধ সরবরাহ করে আসছিল কোম্পানি। এছাড়া চিকিৎসকদের ঘুষ দিয়ে দেশটির বাজারে নিষিদ্ধ বিভিন্ন ঔষধ বিক্রির অভিযোগ তোলা হয় গ্লাসকোস্মিথ ক্লাইনের বিরুদ্ধে। রোগীদের জীবনের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ ঔষধ সরবরাহ ও চিকিৎসকদের ঘুষ প্রদানের কারণে মার্কিন সরকার কোম্পানিটি ৩ বিলিয়ন ডলার জরিমানা করে।
বাংলাদেশের ঔষধের বাজারেও কোম্পানির ঔষধ প্রচলিত। ১৯৭৩ সাল থেকে বাংলাদেশের বাজারে ঔষধের ব্যবসা করে আসছে কোম্পানিটি। বিভিন্ন রোগেও টিকা ও ঔষধ সরবরাহে বাংলাদেশের ঔষধ বাজারে অতি পরিচিত নাম গ্লাসকোস্মিথ ক্লাইন।
বাংলাদেশের চিকিৎসাসেবা খাতের সাথে যুক্ত অনেকের মতে, কোম্পানি অন্যান্য দেশের মত বাংলাদেশের চিকিৎসকদের উপঢৌকন প্রদান করে নিজেদের ঔষধ বিক্রি বাড়িয়ে চলেছে।
খাতটির সাথে সংশ্লিষ্টদের মতে, গ্লাসকোস্মিথ ক্লাইন বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতাল ও চিকিৎসকদের মাধ্যমে নিন্মমানের ঔষধ সরবরাহ করে। যা রোগীদের মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে ফেলতে পারে। চীন-যুক্তরাষ্ট্রের মত বাংলাদেশের সরকারের গ্লাসকোস্মিথ ক্লাইন সরবরাহকৃত ঔষধের মান ও চিকিৎসকদের ঘুষ প্রদানের বিরুদ্ধে তদন্ত করা উচিত বলে মনে করেন খাতটির সাথে যুক্তরা। নতুনদিন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *