উপজেলা নির্বাচনকে ঘিরে রাজনৈতিক সহিংসতায় জামায়াত-শিবিরের পরিকল্পনাকারী, সংগঠক এবং ইন্ধনদাতাদের গ্রেপ্তারের জন্য একটি তালিকা চূড়ান্ত করেছে সরকার। এর মধ্যে বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে, বাকিরা পলাতক। তবে তালিকাভুক্ত অনেকেই শ্রমিক পরিচয়ে ইরাক, সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে পাড়ি জমাচ্ছে বলে একটি গোয়েন্দা সংস্থার তথ্য। পাশাপাশি ইরাকসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে মোটা বেতনে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে জামায়াত নিয়ন্ত্রিত বেশকিছু প্রতিষ্ঠান প্রতারণা করছে বলেও অভিযোগ। এ বিষয়ে গোয়েন্দা সংস্থাটি তদন্ত করছে।
গোয়েন্দ সূত্রে জানা যায়, গত জানুয়ারিতে রাজধানীর ফরিকরাপুলের একটি প্রতিষ্ঠান মোটা অংকের চাকরির প্রলোভন দিয়ে ৪০ জন কর্মীকে ইরাকে পাঠায়। বিনিময়ে তাদের প্রত্যেকের কাছ থেকে ৩ থেকে ৫ লাখ টাকা করে নেয় প্রতিষ্ঠানটি। কিন্তু ইরাকের বিমানবন্দরে ৩ দিন আটক থাকার পর দেশে ফিরতে বাধ্য হয় তারা।
ওই ঘটনা তদন্ত করতে গিয়ে বেরিয়ে আসে আরো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। গুলশান-২ এর ৩৪ নম্বর রোডে অবস্থিত ‘ক্যারিয়ার ওভারসীজ’ নামে ওই প্রতিষ্ঠানটি ইরাকসহ মধ্যপ্রাচ্যে শ্রমিক পাঠানোর কথা বলে প্রতারণা করে। সেই সঙ্গে তারা অন্যদের সঙ্গে ২ থেকে ৩ জন করে জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীও মধ্যপ্রাচ্যে পাঠিয়ে দিচ্ছে। তালিকাভুক্ত ওই নেতাকর্মীরা আইনশৃক্সখলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখ এড়াতে ছেটে ফেলেন দাঁড়ি-গোফ। শুধু তাই নয় তাদেরকে ইমিগ্রেশন পার করি দেয়ার জন্য হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কর্মরত ইমিগ্রেশন পুলিশের কতিপয় কর্মকর্তা-কর্মচারীকে দেয়া মাসোহারাও।
তদন্ত করতে গিয়ে গোয়েন্দা সংস্থাটি ইরাক গমেনেচ্ছুদের বেশ কয়েকজনার ভিসা কপি ও ম্যান পাওয়ার ক্লিয়ারেন্স বিশ্লেষণ করে। তাতে দেখা যায় ভিসাগুলো গত বছরের মার্চের। যা ইরাকের ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ থেকে ইস্যু করা। যার মেয়াদ ইস্যু তারিখ থেকে তিন মাস। সেই হিসাবে ২৬ মার্চের ভিসার মেয়াদ ২৫ জুনের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা। ভিসাগুলোর মেয়াদ বাড়ানো হলে নিয়মানুযায়ী আলাদা নম্বর এবং ইস্যু তারিখ থাকবে। এক্ষেত্রে পুরনো ভিসা নম্বর ইস্যু তারিখের ভিসা ২০১৪ সালের মার্চে ইরাকি দূতাবাস থেকে দেয়া হয়েছে। গোয়েন্দা সংস্থা অনুসন্ধান করে দেখেছে এর সঙ্গে ইরাকি দূতাবাসের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা জড়িত।
গোয়েন্দা সংস্থাটির একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করা শর্তে বাংলামেইলকে বলেন, ‘যেসব প্রতিষ্ঠান শ্রমিক ঠকায় না
তার অসাধু কিছু প্রতিষ্ঠানের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এই শ্রমিক ঠকানো বন্ধের পাশাপাশি তালিকাভুক্ত জামায়াত-শিবির কর্মীরা যেন দেশ ছেড়ে পালাতে না পারে এটাই এখন আমরা অনুসন্ধান করে দেখছি।’
এদিকে গোয়েন্দাদের কাছ থেকে তথ্য পেয়ে কিছুদিন আগে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা আইনশৃক্সখলা বাহিনীর কর্তা-ব্যক্তিদের নিয়ে বিশেষ বৈঠক করেন। দেশের বিভিন্ন কারাগার থেকে মুক্ত হওয়া শিবির ক্যাডারদের ব্যাপারে বিশদ আলোচনা হয় ওই বৈঠকে। শিবির ক্যাডার গ্রেপ্তার ও নাশকতা প্রতিরোধসহ বেশকিছু সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
সিদ্ধান্তগুলো হচ্ছে- সারাদেশের থানা, পুলিশ ফাঁড়ি ও গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোতে নজরদারী বৃদ্ধি, মুক্ত হওয়া ক্যাডারদের তালিকা দ্রুত সম্পন্ন করা, যুদ্ধাপরাধীদের রায়ের আগের দিন থেকে শুরু করে অন্তত ১৫ দিন কঠোর নিরাপত্তা বলবৎ রাখা, শিবিরের ‘সুইসাড স্কোয়াড’কে চিহ্নিত করা, পুলিশের উপর হামলাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার করা ইত্যাদি।
বৈঠকে উপস্থিত থাকা পুলিশের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলামেইলকে বলেন, ‘এবার শিবিরের বিরুদ্ধে সরকার আরো হার্ডলাইনে। শিবির নাশকতামূলক কর্মকা- চালানোর চেষ্টা করছে। যারা তালিকাভুক্ত তার যেনো কোনোভাবেই পালিয়ে যেতে না পারে সেদিকেও নজরদারী রয়েছে।’ বাংলামেইল