বিজেপি সরকার : বাণিজ্য অপরিবর্তিত থাকলেও ঝুলে যাবে অনেক ইস্যু

ভারতের ১৬তম লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোটের নিরঙ্কুশ জয়ে দলটির প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী নরেন্দ্র মোদিকে অভিনন্দন জানিয়েছেন আওয়ামী image_91388_0-300x173লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রাজনৈতিক বিরোধী দল বিএনপি চেয়ারপাসন বেগম খালেদা জিয়া, সংসদে প্রধান বিরোধীদল জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ, জামায়াতে ইসলামীসহ অন্যান্য রানৈতিক দলও তাকে অভিনন্দন জানিয়েছে।

কংগ্রেসকে সব সময় আওয়ামী লীগ বান্ধব বলে মনে করা হয়। এই দলটির শোচনীয় পরাজয়ে আওয়ামী লীগ সরকার বেকায়দায় পড়বে কি না তা নিয়ে চলছে জল্পনা কল্পনা। বিএনপি মনে করছে, প্রতিবেশী প্রভাবশালী দেশে বন্ধু হারানোতে আওয়ামী লীগ কিছুটা দমে যাবে এবং এটা তাদেরও এক ধরনের পরাজয়।

তবে ভারতের নতুন সরকারের বৈদেশিক ও ব্যবসায়িক নীতিই এখন মূল বিবেচ্য বিষয়। উন্নয়ন ও বাণিজ্যের বিষয়ে বিজেপি বহু প্রতিশ্র“তি দিয়ে ক্ষমতায় আসছে। একারণে ব্যবসা-বাণিজ্যে বাংলাদেশ তাদের সঙ্গে সমস্যায় পড়বে বলে মনে করছেন না দেশের ব্যবসায়ী ও অর্থনীতিবিদরা। তবে খুব যে ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে এ ব্যাপারেও তারা আশাবাদী নন।

অর্থনীতিবিদদের পক্ষ থেকে নতুন সরকারকে ভালোভাবে দেখলেও তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি ও সীমান্ত সমস্যাগুলোর বিষয়ে ইতিবাচক অগ্রগতির কোনো আশা দেখছেন না তারা। তবে ব্যবসায়ী নেতারা মনে করছেন, সরকার রজনৈতিক একটি বিষয় হলেও নতুন সরকার দুই দেশের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সর্ম্পক বজায় থাকবে।

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান বাংলামেইলকে বলেন, ‘গত ১০ বছর ক্ষমতায় কংগ্রেস ছিল। এখন নতুন একটা পরিবর্তন হয়েছে। নতুন সরকার নতুন বৈদেশিক সম্পর্ক পরিবর্তন করতে পারে। তবে বাণিজ্যে আগে যে কোটামুক্ত সুবিধা ছিল তা থাকবে। তাতে কোনো পরিবর্তন আশা করছি না। কিন্তু যেগুলো সমস্যা আগে ছিল যেমন, পানি বণ্টন, তা হবে কি না সন্দেহ রয়েছে। এছাড়া ছিটমহল ও সীমান্ত হত্যা বন্ধের বিষয়ে আবার তাদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে হবে।’

তিনি আরো বলেন, ‘এছাড়া ভারতে যেসব বাংলাদেশি রয়েছে তাদের বিষয়ে নির্বাচনের আগে কথা উঠেছে। অবৈধ অভিবাসী বিষয়ে তারা আরো কঠোর হবে। তবে তা নির্ভর করবে আমদের আলাপ আলোচনার ওপর। আলোচনায় এসব ইস্যু আসবে। তবে এটা এখনো স্পষ্ট নয় তারা এসব বিষয়ে কতখানি কঠোর হবে। আমার মনে হয়, ক্ষমতায় যাওয়ার আগে ভোটের জন্য নেতারা যেভাবে বলে ক্ষমতায় গেলে তারা আর সে অবস্থায় থাকে না। তখন বাস্তব পরিস্থিতির আলোকে নমনীয় হয়ে থাকে। আমরা আশা করছি, পার্শ্ববর্তী দেশ হিসেবে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সুসম্পর্ক থাকা প্রয়োজন। সে হিসেবে তারা এ সম্পর্ক আরো উন্নতির লক্ষ্যে কাজ করবে।’

তবে বিজেপি সরকার ব্যবসাবান্ধব হবে বলে তিনি মনে করেন। ভারতের নতুন সরকারের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্যের দিকে থেকে তেমন কোনো সমস্যা তিনি দেখছেন না। সমস্য যা হতে পারে তার মধ্যে তিস্তার পানি বণ্টন ও সীমান্ত সমস্যা।

দিল্লির নতুন সরকারের বিষয়ে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি শাহাজাহান খান বলেন, ‘নতুন সরকারকে ভালোই দেখতেছি। সবাই ভালো দেখছে। তারা ব্যবসা-বাণিজ্যের কথা বলেইতো ক্ষমতায় আসছে। তারা একটি বড় রাষ্ট্র। তাদের উন্নতি হলে আমাদের উন্নয়নের সম্ভাবনা থাকে। আমি যতদুর জানি ভারতের পররাষ্ট্র নীতি আর সরকারি নীতি এক নয়। বাংলাদেশের সঙ্গে তাদের যে সম্পর্ক তা আরো ভালো হবে বলে আশা করছি।’

বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বাংলামেইলকে বলেন, ‘প্রথমত হলো, পলিটিক্যাল কোনো বিষয়ে আমার মন্তব্য নেই। আমরা ব্যবসায়ীরা কোনো রাজনীতি করি না। ভারত আমাদের বন্ধু দেশ এবং বৃহৎ রাষ্ট্র। ছোট দেশ হিসেবে সার্ক ও বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) আওতায় আমাদের যেসব সহযোগিতা এবং সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার কথা সেগুলো পাবো বলে আশা করছি।’

তবে ব্যবসায়ী এ নেতা শুল্ক ও ট্যারিফ সমস্যার কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘ভারতের সঙ্গে আমাদের কোটামুক্ত সুবিধা থাকলেও আন্তঃরাজ্যে যে ডিউটি (শুল্ক) সমস্যা রয়েছে তা যেন প্রত্যাহার করা হয়।’

ভারতের নতুন সরকারকে স্বাগত জানিয়ে বিজিএমইএসহ সভাপতি শহিদুল্লাহ আজিম বাংলামেইলকে বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক কেমন যাবে তা নির্ভর করে তাদের বাণিজ্যিক পলিসির ওপর। তারা তাদের ব্যবসায়িক পলিসি পরিবর্তন করলে করতে পারে। আর নির্বাচনী প্রতিশ্র“তির বিষয়টি রাজনৈতিক। তবে আমরা ব্যাবসায়ীরা চাই দুই দেশের ভালো সম্পর্ক। ঠিক আগের মতো থাকলেই আমরা খুশি। ভালো হলেতো কথাই নাই।’

তবে ব্যবসা-বাণিজ্যের বাইরে তিস্তার পানিবণ্টন, সীমান্ত হত্যা, ছিটমহল বিনিময় ইত্যাদি বিষয়গুলোর সহসা মীমাংসা হয়ে যাওয়ার কোনো সম্ভাবনা দেখছেন না কেউই।

২০১১ সালে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং বাংলাদেশ সফর করেন। সেবারই তিস্তার পানিবণ্টন ও ছিটমহল বিনিময় নিয়ে দুটি চুক্তি সই হওয়ার কথা ছিল। তবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বেঁকে বসায় তা হয়নি।

এর আগে ১৯৯৯ সালের ১৯ জুন এক দিনের সফরে ঢাকা আসেন তৎকালীন বিজেপি সরকারের প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ি। ওই সময় তিনি ও তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঢাকা-কলকাতা সরাসরি বাস সার্ভিস উদ্বোধন করেন।

কিন্তু তখনকার বিজেপি সরকারের আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্প নিয়ে প্রতিবেশী দেশ এবং খোদ ভারতেও আপত্তি আছে। এবারো তারা হয়ত এ প্রকল্প এগিয়ে নিতে চাইবে। ফলে এ বিষয়টিতে বিজেপি সরকার ভেতরে বাইরে প্রতিবোধের মুখে পড়বে এটা প্রায় নিশ্চিত। বাংলামেইল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *