আদালতে দাঁড়িয়ে র্যাব কর্মকর্তা ও মন্ত্রীর জামাই সাঈদ তারেক বললেন, র্যাবের ভাবমূর্তি ঢালাওভাবে নষ্ট করার জন্যে গণমাধ্যমে যে সব বক্তব্য আসছে তা সঠিক নয়। এসময় নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন তিনি। তবে তিনি সহ আরেক গ্রেপ্তারকৃত সামরিক কর্মকর্তার হাতে হাতকড়া ছিল না। আইনজীবিদের আপত্তির মুখে আদালত থেকে নিয়ে যাবার সময় তাদের হাতকড়া পরিয়ে পুলিশের গাড়িতে তোলা হয়। আদালতে এসময় তাদের দুজনকে বেশ কিছুটা বিমর্ষ লাগলেও তারা বেশ দৃঢ়তার সঙ্গেই পরিস্থিতি মোকাবেলা করেন। সাঈদ তারেক বলেন, র্যাবকে ঢালাওভাবে দোষারোপ করা হচ্ছে এবং র্যাবের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছে। তিনি এও বলেন, নারায়ণগঞ্জে সাত অপহরণ ও হত্যার চাঞ্চল্যকর ঘটনায় তারা জড়িত নন। ষড়যন্ত্রের শিকার। আমাদের মোবাইল ফোনের কললিস্ট যাচাই করে দেখা হোক, তাহলেই প্রমাণ হবে আমরা কোথায় ছিলাম।
নারায়ণগঞ্জে আলোচিত ৭ জনকে অপহরণের পর হত্যা করে শীতলক্ষ্যায় লাশ ইট বেঁধে ফেলে দেয়ার ঘটনায় সন্দেহভাজন দুই সাবেক সামরিক কর্মকর্তাকে শনিবার ভোররাতে পুলিশ গ্রেপ্তার করার পর আদালতে হাজির করা হলে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
শনিবার ভোররাতে ক্যান্টনমেন্ট থানার পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করেছে বলে এর আগে নিশ্চিত করেন নারাযণগঞ্জের পুলিশ সুপার খন্দকার মহিদ উদ্দিন। তবে তিনি আরেক সন্দেহভাজন সামরিক কর্মকর্তা লে. কমান্ডার এম এম রানা সম্পর্কে কিছুই জানেন না বলে বিবিসি বাংলাকে জানান। অনেকের ধারণা রানা পালিয়েছেন। কিন্তু সামরিক কর্তৃপক্ষ এ তিনজনকেই নিজ বাড়িতে থাকার নির্দেশ দিয়েছিল।
নারাযণগঞ্জের পুলিশ সুপার মহিদ উদ্দিন জানান, উচ্চ আদালতের নির্দেশনার আলোকে র্যাব-১১-এর সাবেক অধিনায়ক লে. কর্নেল তারেক সাঈদ মোহাম্মদ এবং মেজর আরিফ হোসেনকে গ্রেপ্তারের নির্দেশ যায় ক্যান্টনমেন্ট থানায়।
এরপর ভোরের আগেই তাদের গ্রেপ্তার করে নারায়ণগঞ্জে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্যে তাদের আদালতে আনা হয়।
তবে প্রত্যক্ষদর্শী একজন স্থানীয় সাংবাদিক জানিয়েছেন, দুই সাবেক র্যাব কর্মকর্তাকে বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট ও হেলমেট পরানো হলেও হাতে কোন হাতকড়া ছিল না। পরে আইনজীবীরা এ নিয়ে আপত্তি জানালে আদালতে খানিকটা উত্তেজনা সৃষ্টি হয়।
এর পর ম্যাজিস্ট্রেট নির্দেশ দেন গ্রেফতারকৃত দুই কর্মকর্তাকে হাতকড়া পরাতে হবে। এর পরই তাদের হাতকড়া পড়িয়ে দেয় পুলিশ।
আদালতে গ্রেফতারকৃতদের জন্য কোন আইনজীবী ছিল না। তবে লে. কর্নেল তারিক সাঈদ মোহাম্মদ আদালতে বলেন, তারা ওই অপহরণ ও হত্যার ঘটনার সাথে জড়িত নন।
স্থানীয় সাংবাদিক আসিফ হোসেন বলছিলেন, এ সময় জেলা আইনজীবীর নেতৃবৃন্দরা প্রতিবাদ করছিলেন। তাদের প্রতিবাদের কারণে আদালতের নির্দেশে পুলিশ তাদের হাতকড়া পরান।
আদালতে আসামীদের কোন আইনজীবী ছিল কিনা বিবিসি জানতে চাইলে তিনি বলেন, আসামীদের কোন আইনজীবী ছিলনা। লেফটেন্যান্ট কর্ণেল তারেক বলেছেন, তারা নির্দোষ। নিজেদেরকে নির্দোষ দাবি করেছেন। আদালতকে এক পর্যায়ে তারেক বলেছেন, গণমাধ্যমে র্যাব সম্পর্কে যে সব বক্তব্য আসছে, তাতে র্যাবকে ঢালাওভাবে দোষারোপ করা হচ্ছে এবং র্যাবের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছে।
তার জবাবে আইনজীবীরা বলেন, র্যাবের ভাবমূর্তির বিরুদ্ধে নয়, আপনি মানুষ খুন করেছেন, আপনার বিরুদ্ধে মিডিয়ায় লেখা হচ্ছে। এসময় আইনজীবীরা জানান, যে দড়ি দিয়ে বাধা হয়েছিল সেগুলো ইজ্জতের রশি আর যে গিট্টু দেওয়া হয় সেগুলো কমান্ডো গিট্টু।
এদিকে পুলিশের আদালত পরিদর্শক মি. রহমান বলছিলেন, তারেক সাঈদ যে বক্তব্য দিয়েছেন সেখানে সে উল্লেখ করেছেন যে, সত্য প্রকাশের জন্য রিমান্ডে যেতে তার আপত্তি নেই।
পুলিশের কোর্ট ইন্সপেক্টর হাবিবুর রহমান মিয়া বলেন, ৫৪ ধারায় গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিনের রিমান্ড চাওয়া হলে আদালত ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
গত ২৭ শে এপ্রিল দুপুরে ঢাকা-নারাযণগঞ্জ লিংক রোড থেকে নারাযণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম এবং জ্যেষ্ঠ আইনজীবী চন্দন সরকারসহ সাত ব্যক্তি অপহৃত হন। এর তিনদিন পর শীতলক্ষ্যা নদীতে ছয়জনের এবং তার একদিন পর আরও একজনের লাশ ভেসে ওঠে৷
কাউন্সিলর নজরুলের পরিবারের পক্ষে এ ঘটনায নারাযণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর নূর হোসেনকে প্রধান আসামি করে মামলা করা হয়৷
এরপর কাউন্সিলর নজরুল ইসলামের শ্বশুর শহীদুল ইসলাম কাছে অভিযোগ করে বলেন, র্যাবের তিন কর্মকর্তা ছয কোটি টাকার বিনিময়ে তার জামাতাসহ ছয় জনকে অপহরণ ও খুন করেছে।
এ ঘটনার পর সরকার বেশ সমালোচনার মুখে পড়ে। নানা ধরনের প্রক্রিয়াও চলেছে বেশ কয়েকদিন ধরেই।
সাত খুনের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠার পর এই তিন কর্মকর্তাকে বাধ্যতামূলক অবসর দেওযা হয়।
পরে এক রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে উচ্চ আদালত ১১ মে এই তিন কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেন।