নারায়ণগঞ্জ সাত খুন ও অপহরণের ঘটনায় পালিয়ে থাকা সাবেক র্যাব কর্মকর্তা এম এম রানাকে ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। শনিবার দিবাগত রাত দেড়টার দিকে তাকে ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট এলাকা থেকে আটক করে আইনশৃক্সখলা রক্ষাকারী বাহিনী। গ্রেপ্তারের পর পুলিশ তাঁকে নিয়ে নারায়ণগঞ্জের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছে। গ্রেপ্তারের উদ্দেশ্যে রাত ১২টার পর বিভিন্ন জায়গায় অভিযান শুরু করে পুলিশ। রাত দেড়টার দিকে রানাকে ক্যান্টনমেন্ট এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। চাকরি হারানো নৌবাহিনীর সাবেক কর্মকর্তা রানাকে ধরতে বনানী থানায় চাহিদাপত্র বা অধিযাচনপত্র (রিকুইজিশন) পাঠায় নারায়ণগঞ্জ জেলা গোয়েন্দা পুলিশ।
নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার খন্দকার মহিদ উদ্দিন গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে রানাকে ক্যান্টনমেন্ট এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাকে রাতেই নারায়ণগঞ্জে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। সেখানে জেলা পুলিশ লাইনে রাখা হবে। এরপর রোববার সকালে রানাকে আদালতে হাজির করা হবে।
এর আগে শনিবার ভোরে একই ঘটনায় অভিযুক্ত র্যাব-১১ এর সাবেক অধিনায়ক লে. কর্নেল তারেক সাঈদ মোহাম্মদ ও মেজর আরিফ হোসেনকে গ্রেফতার করা হয়। এরপর তাদের শনিবার বেলা পৌনে ৩টার দিকে নারায়ণগঞ্জের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট চাঁদনী রূপমের আদালত নেয়া হয়। আদালতে রিমান্ডের আবেদন করা হলে তাদের পাঁচদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।
গত ২৭ এপ্রিল দুপুরে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোড থেকে অপহূত হন নারাযণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম, জ্যেষ্ঠ আইনজীবী চন্দন সরকারসহ সাতজন। এর তিন দিন পর ৩০ এপ্রিল ছয়জনের এবং পরদিন আরও একজনের লাশ শীতলক্ষ্যা নদীতে ভেসে ওঠে। এ ঘটনায় নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নূর হোসেনকে প্রধান আসামি করে মামলা করে নজরুলের পরিবার। ৪ মে নজরুলের শ্বশুর শহীদুল ইসলাম ওরফে শহীদ চেয়ারম্যান সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেন, ছয় কোটি টাকার বিনিময়ে র্যাবের তিন কর্মকর্তা ওই সাতজনকে অপহরণ ও খুন করেছেন।
সাত খুনের ঘটনার পর র্যাব-১১-এর এই তিন কর্মকর্তাকে নিজ নিজ বাহিনীতে ফেরত নেওয়া হয়৷ তারপর তাঁদের অবসরে পাঠানো হয়। ১১ মে হাইকোর্ট তাঁদের গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেন৷ অবশেষে তিনজনই গ্রেপ্তার হয়েছেন।
উল্লেখ্য নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের প্যানেল মেয়র ও কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম এবং আইনজীবী চন্দন সরকারসহ সাতজনকে অপহরণের পর হত্যার ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠে র্যাব-১১ এর তিন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। এরমধ্যে দুই কর্মকর্তা র্যাব-১১ এর কমান্ডিং অফিসার লে. কর্নেল (অব.) তারেক সাঈদ মাহমুদ ও মেজর (অব.) আরিফ হোসেন গ্রেফতার হলেও নারায়ণগঞ্জ ক্যাম্পের দায়িত্ব নিয়োজিত লে. কমান্ডার (অব.) মাসুদ রানাকে গতকাল শনিবার পর্যন্ত নৌ বাহিনী ও পুলিশ খুঁজে পায়নি। গত শুক্রবার গভীর রাতে ঢাকা সেনানিবাস থেকে লে. কর্নেল (অব.) তারেক সাঈদ মাহমুদ ও মেজর (অব.) আরিফ হোসেনকে ক্যান্টনমেন্ট থানায় সোপর্দ করা হয়।