ঢাকা বিভাগের জেলা, আর খুলনা বিভাগের সীমান্তবর্তী জেলাগুলো সাগরের সঙ্গে সম্পর্কিত। তারপরেও গোপালগঞ্জের পানি এখন লবণাক্ত। পৌরবাসী পান করছে মাত্রাতিরিক্ত লবণাক্ত পানি।
পৌরসভা কর্তৃপক্ষ পানের অযোগ্য লবণাক্ত পানি সরবরাহ করায় গোপালগঞ্জে দেখা দিয়েছে সুপেয় পানির তীব্র সংকট । সরবরাহকৃত পানি খাবার ও রান্নাবান্নার কাজে ব্যবহার করতে পারছে না পৌরসভার বাসিন্দারা। দুই মাস ধরে লবণাক্ত পানি সরবরাহ করায় বিপাকে পড়েছেন গোপালগঞ্জের দু’লাখ পৌরবাসী।
এ পরিস্থিতির কারণে গত বৃহস্পতিবার থেকে পৌর কর্তৃপক্ষ কোটালীপাড়া থেকে ট্রাকে করে বিশুদ্ধ পানি এনে সরবরাহ করছে। প্রতিদিন মাইকিং করে শহরের বিভিন্ন সড়কের মোড়ে মোড়ে ২৪ হাজার লিটার পানি বিতরণ করছে। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকায় অতিরিক্ত টাকা দিয়ে বিভিন্ন কোম্পানির পানি কিনে নিচ্ছে পৌরবাসী।
শুষ্ক মৌসুমের শুরুতে গোপালগঞ্জ পৌরসভার পানি সরবরাহ বিভাগ চাহিদা মাফিক পানি সরবরাহ করতে পারছে না। আর সরবরাহকৃত পানি লবণাক্ত হওয়ায় ওই পানি পৌরবাসীর খুব একটা কাজে আসছে না। তবে পৌরসভার ট্রাকের পানি মানুষের অন্তত ২৫ ভাগ চাহিদা পূরণ করছে।
বিশুদ্ধ খাবার পানি সংগ্রহ করতে মানুষ শহরের বিভিন্ন স্থানের ডিপ টিউবওয়েলের ধর্ণা দিচ্ছেন। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষ খাবার পানির সন্ধানে কলসি, ড্রাম, বালতিসহ বিভিন্ন পাত্র নিয়ে কয়েক কিলোমিটার দূরের টিউবওয়েলের পানি সংগ্রহ করছে। পানি সংগ্রহ করতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা তাদের লাইনে দাঁড়াতে হচ্ছে। শহরের নিচুপাড়া, উদয়ন রোড, মিয়াপাড়ার সেমি ডিপ টিউবওয়েলের পানি সংগ্রহ করে অধিকাংশ মানুষ পান করছে। এছাড়া পৌরসভার গাড়ি পানি সরবরাহ শুরু করলে মুহুর্তের মধ্যে মানুষ জড়ো হয়ে পানি সংগ্রহ করছে। আবার অনেকে পানি না পেয়ে ফিরেও যাচ্ছেন।
মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মানুষ স্থানীয়ভাবে বোতলজাত করা পানি কিনতে বাধ্য হচ্ছে। গোপালগঞ্জে গড়ে ওঠা বিভিন্ন ওয়াটার রিফাইন কোম্পানি এ সুযোগে রমরমা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে।
গোপালগঞ্জ পৌর পানি সরবরাহ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, মধুমতি নদী থেকে পানি উত্তোলনের পর তা ধাপে ধাপে পরিশোধিত করে পৌরবাসীর জন্য সরবরাহ করা হয়। মার্চ মাসের মাঝামাঝি সময়ে উজানের পানি প্রবাহ কমে যাওয়ায় মধুমতি নদীতে সামুদ্রিক জোয়ারের লবণ পানি ঢুকে পড়েছে। পানি লবণমুক্ত করে সরবরাহ করার কোন ব্যবস্থা না থাকায় বাধ্য হয়েই লবণ পানি সরবরাহ করা হচ্ছে।
শহরের গেটপাড়ার গৃহবধূ কোমেলা বেগম বলেন, পৌরসভার সরবরাহকৃত পানিতে লবণ। মাঝে মধ্যে লবণ বাড়ে আবার কমে। এ পানি পান করতে ভাল লাগছে না। বাধ্য হয়েই সেমি ডিপ টিউবওয়েল থেকে পানি নিচ্ছি। দুই দিন ধরে পৌরসভার গাড়ি থেকে পানি দেয়ায় সেখান থেকেও পানি নিচ্ছি।
বেদগ্রামের বাসিন্দা শমসের আলী বলেন, পৌরসভা কোটালীপাড়া থেকে ডিপের পানি এনে সরবরাহ করছে। এতে পানির অভাব কিছুটা দূর হয়েছে। লবণাক্ত পানি পান করে পেটের পীড়াসহ পরিবারে পানিবাহিত রোগ দেখা দিয়েছে। বিশুদ্ধ পানি কিনে খাওয়ার অবস্থা আমাদের নেই। এর মধ্যে পৌরসভার ট্রাকে করে পানি সরবরাহের উদ্যোগ খুব ভালো।
গোপালগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. সিরাজুল ইসলাম বলেন, লবণ পানি হৃদরোগীদের জন্য ক্ষতিকারক। তিনি সবাইকে এ পানি পান না করার জন্য পরামর্শ দেন। এ পানি পান করলে বিভিন্ন রোগ দেখা দিতে পারে বলেও জানান তিনি।
স্থানীয় নিলয় ড্রিংকিং ওয়াটার কোম্পানির মালিক মো. শামীম খান বলেন, গোপালগঞ্জে বিশুদ্ধ পানির চাহিদা এখন অনেক বেড়ে গেছে। দিনরাত রিফাইন মেশিন চালিয়ে, অতিরিক্ত কর্মচারী নিয়োগ দিয়ে চাহিদামত বিশুদ্ধ খাবার পানি সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না। আমাদের উৎপাদিত পানি মধ্যবিত্ত শ্রেণীর লোকজন কিনে নিচ্ছে।
গোপালগঞ্জ জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী বিধান চন্দ্র দে বলেন, মার্চ মাস থেকে গোপালগঞ্জে পানিতে লবণ সমস্যা দেখা দেয়। চলে জুন মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত। এ অবস্থা নিরসনের জন্য শহরের বাইরে ৮টি গভীর নলকূপ স্থাপনের প্রকল্প হাতে নিয়ে কাজ শুরুর পর দেখা গেছে পানির স্তর ভালো নেই। এ কারণে এ প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়নি।
গোপালগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মো. রেজাউল হক সিকদার রাজু বলেন, পৌরসভার গাড়িতে কোটালীপাড়া থেকে বিশুদ্ধ খাবার পানি এনে প্রতিদিন ৪ ট্রাক পানি পৌরবাসীকে দেয়া হচ্ছে। মধুমতির নদীর পানি লবণ হয়ে গেছে। এ কারণে লবণ পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। পৌর পানি সরবরাহের কারণে যে প্ল্যান্ট রয়েছে তা দিয়ে পানির লবণ দূর করা সম্ভব নয়। লবণ দূরীকরণ প্ল্যান্ট খুবই ব্যয়বহুল। বৃষ্টির ওপর নির্ভর করা ছাড়া আপাতত কোনো পথ নেই। ভবিষ্যতে আমরা ডিপের রিজার্ভার করতে পারলে এ সমস্যা নিরসনে সক্ষম হব।বা। ট্রি