সাত খুনের ঘটনায় অভিযুক্ত নারায়ণগঞ্জ র্যাবের সাবেক কর্মকর্তা লে. কমান্ডার এম এম রানাকে সাত দিনের রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করার আদেশ দিয়েছেন আদালত। রোববার বিকেলে নারায়ণগঞ্জ বিচারিক হাকিম কে এম মহিউদ্দিনের এ আদেশ দেন।
এর আগে নারায়ণগঞ্জ ক্যাম্পের সাবেক প্রধান লে. কমান্ডার এম এম রানাকে বিচারিক হাকিম আদালতে নেয়া হয়। তাকে ৫৪ ধারায় গ্রেফতার দেখিয়ে ১০ দিনের চায় পুলিশ। শুনানি শেষে আদালত সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
শুনানি চলাকালে রানার বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে আইনজীবী সাখাওয়াত হোসেন বলেন, “আইনের রক্ষক হয়ে সে পেশাদার খুনির মতো টাকার বিনিময়ে সাতজন মানুষের লাশ ফেলে দিয়েছে।”
এম এম রানা নিজেকে নির্দোষ দাবি করে বলেন, ঘটনার দিন তিনি নারায়ণগঞ্জ এলাকায় ছিলেন না।
শনিবার রাত দেড়টার দিকে নৌবাহিনীর গোয়েন্দা বিভাগের কর্মকর্তারা তাকে ক্যান্টনমেন্ট থানা পুলিশের হাতে তুলে দেন। এরপর রাতেই তাকে নারায়ণগঞ্জে নেয়া হয়।
নৌবাহিনীর গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, সেনাবাহিনীর দুই কর্মকর্তাকে গ্রেফতারের পর রানাকে পুলিশের হাতে তুলে দেয়া হয়। এর আগে নারায়ণগঞ্জ পুলিশ রানাকে গ্রেফতারের জন্য রিকুইজিশন দেয় ক্যান্টনমেন্ট থানা পুলিশকে। সেখান থেকে পুলিশ কর্মকর্তারা রানাকে গ্রেফতারের ব্যাপারে আলোচনা করেন। এরপর রাতে তাকে পুলিশের হাতে তুলে দেয়া হয়। এতদিন রানা কোথায় ছিলেন সে ব্যাপারে কর্মকর্তারা কিছুই বলেননি। রানা র্যাব-১১-এর কোম্পানি কমান্ডার ছিলেন। ২০১৩ সালের জুলাই মাসে তিনি র্যাবে যোগ দেন। এর পর থেকে ক্রাইম প্রিভেনশন কোম্পানি কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন।
এর আগে শুক্রবার দিবাগত গভীর রাতে গ্রেফতারের পর রিমান্ডে নেয়া হয় র্যাব-১১-এর সাবেক অধিনায়ক লে. কর্নেল তারেক সাঈদ মোহাম্মাদ ও মেজর আরিফ হোসেনকে৷ নারায়ণগঞ্জে সাতজনকে অপহরণ ও খুনের ঘটনায় চাকরি হারানো এই দুই সেনা কর্মকর্তাকে ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ ধারায় গ্রেফতার করা হয়েছে।
শুক্রবার দিবাগত গভীর রাতে ঢাকা সেনানিবাসের বাসা থেকে র্যাবের সাবেক দুই কর্মকর্তাকে আটক করে পুলিশ৷ দুপুরে তাদের নারায়ণগঞ্জের আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ড চাওয়া হলে আদালত পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন৷
গ্রেফতার হওয়া সেনা কর্মকর্তা তারেক সাঈদ মোহাম্মাদ ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনামন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরীর জামাতা। ৫ মে সেনা ও নৌবাহিনী এই তিন কর্মকর্তাকে অকালীন ও বাধ্যতামূলক অবসর দেয়।
গত ২৭ এপ্রিল কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম অপহৃত হওয়ার পর তার স্ত্রী সেলিনা ইসলাম কাউন্সিলর নূর হোসেনসহ ছয়জনকে আসামি করে ফতুল্লা থানায় মামলা করেন। ৩০ এপ্রিল লাশ পাওয়ার পর সেই মামলাটি হত্যা মামলায় রূপান্তরিত হয়। এ ছাড়া লাশ পাওয়ার পর ১১ মে আইনজীবী চন্দন ও তার গাড়িচালক ইব্রাহিমকে অপহরণ ও হত্যার অভিযোগে চন্দন সরকারের জামাতা বিজয় কুমার পাল অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে ফতুল্লা থানায় আরেকটি মামলা করেন।
৪ মে নজরুলের শ্বশুর শহীদুল ইসলাম ওরফে শহীদ চেয়ারম্যান সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করে বলেন, র্যাবের তিন কর্মকর্তা ছয় কোটি টাকার বিনিময়ে সাতজনকে অপহরণের পর খুন করেন।