নগরীর প্রায় অনেক জায়গায় রাস্তার পাশে ময়লা-আবর্জনার স্তূপ। এ কারণে বর্জ্যর দুর্গন্ধে নাকে রুমাল দিয়ে পথচারিদের চলাচল করতে হচ্ছে। নগরীর অলিগলিতে গৃহস্থালি বর্জ্য ছাড়াও রয়েছে চিকিৎসা বর্জ্য। চিকিৎসা বর্জ্য খোলামেলা পড়ে থাকায় দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। ঢাকা দুই সিটি করপোরেশনের বড় বড় কনটেইনার থাকার পরেও অতিরিক্ত আবর্জনা হওয়ায় কনটেইনাগুলো উপচেপড়ে যত্রতত্র আবর্জনা ।
দুই সিটি করপোরেশনের ৬০০ খোলা কনটেইনার রয়েছে। পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা এখান থেকে বর্জ্য আবর্জনা নিয়ে যাচ্ছে। কিন্ত ডাস্টবিন বা কনটেইনারগুলো রাস্তার মোড়ে রাখায় দুর্গন্ধ লেগেই আছে। এতে দুর্ভোগে পড়েন পথচারীরা। মারাত্মক যানজটে পড়ে মানুষের যখন হাসফাঁস অবস্থা,তখন এসব ডাস্টবিনের দুর্গন্ধে দুর্ভোগ চরমে ওঠে। জানা গেছে, ঢাকায় দূষিত শহরে উল্লেখ করার একটি অন্যতম কারণও এ আবর্জনা।
ঢাকার প্রায় সপাতালের বর্জ্য (ওষুধের শিশি, ব্যবহƒত স্যালাইন ব্যাগ, রক্তের ব্যাগ, ব্যবহƒত সুচ, সিরিঞ্জ, রক্ত ও পুঁজযুক্ত তুলা, গজ, ব্যান্ডেজ), মানব বর্জ্য, রাসায়নিক বিভিন্ন দ্রব্য। ঢাকা শহরে ছয় হাজার বড় ও ২৪ হাজার ক্ষুদ্র শিল্প রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠান থেকে দৈনিক বিপুল পরিমাণে কঠিন ও তরল বর্জ্য উৎপন্ন হয়। বেসরকারি সংস্থা প্রজেক্ট ইন এগ্রিকালচারাল রুরাল ইন্ডাস্ট্রি, সায়েন্স অ্যান্ড মেডিসিন (প্রিজম) সূত্রে জানা গেছে, ঢাকায় প্রতিদিন ৫০ টন চিকিৎসা বর্জ্য উৎপন্ন হলেও এর ব্যবস্থাপনার জন্য সরকারি কোনো তহবিল নেই। এর মধ্যে রাস্তায় পড়ে থাকে ৩০ টন বর্জ্য। গৃহস্থালি বর্জ্যরে মধ্যে ৯০ শতাংশ পচনশীল বলে তা সরিয়ে নেয়া যায়, কিন্তু চিকিৎসা বর্জ্যরে ক্ষেত্রে তা সম্ভব হয় না। কারণ এ বর্জ্যের মধ্যে বেশিরভাগ মেটাল বর্জ্য। শাঁখারীবাজারে ঢুকতেই সরু গলি। গলির এ মাথা থেকে ও মাথা নোংরা।
অনেক স্থানে ময়লার স্তূপ। ধানমন্ডি রাজধানীর অভিজাত এলাকা হিসেবেই পরিচিত। কিন্তু সেখানেও থা নোংরা।
অনেক স্থানে ময়লার স্তূপ। ধানমন্ডি রাজধানীর অভিজাত এলাকা হিসেবেই পরিচিত। কিন্তু সেখানেও রয়েছে আবর্জনার স্তূপ।৭/এ রোডের কেএফসির পাশেই রয়েছে বড় দুই-তিনটি উš§ুক্ত ডাস্টবিন। সেখানে সারা বছরই দুর্গন্ধ ছড়ায়। মোহম্মদপুরে টাউন হলে বহুদিন ধরে রয়েছে ডাস্টবিন। বছরের সব সময় সেটি বর্জ্যে পরিপূর্ণ থাকে। কামাল সার্ভিসের বিক্রয় কর্মী বলেন, গভীর রাতে ময়লা নেয়া হয়, কিন্তু পরিমাণে খুব কম। ফলে সারা বছরই ময়লা উপচে পড়ে। সেগুনবাগিচা শিল্পকলা একাডেমির সামনেও দুটি ডাস্টবিন উপচে পড়ছে। শিল্পকলা একাডেমির সামনের আবর্জনা সম্পর্কে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা জাভেদ ইকবাল বলেন, প্রতিদিন ময়লা পরিষ্কার করা হয়। গভীর রাতে পরিষ্কার করা হয় বলে সকালে আপনারা শেষ রাতের ফেলে যাওয়া ময়লা দেখেন। আমরা যদি ময়লা পরিষ্কার না করি, তবে ২ হাজার ৪০০ টন ময়লা যায় কোথায়।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকা ার ৪০০ টন কঠিন বর্জ্য হয়। জাভেদ ইকবাল আরও বলেন,বর্জ্য অপসারণের জন্য আরও যানবাহন প্রয়োজন। প্রতিদিন প্রায় ১ হাজার ৮০০ টন বর্জ্য অপসারণ করা হয়। আর এলাকাবাসী যদি আমার কাছে সরাসরি অভিযোগ করে, তাহলে সমস্যার সমাধান আরও ত্বরিত গতিতে হয়।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ সূত্রে জানা যায়, প্রতিদিন ১ হাজার ৬০০ টন বর্জ্য অপসারণ করা হয়। প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা ক্যাপ্টেন বিপন সাহা বলেন, রাজধানীতে পরিত্যক্ত স্থান না পাওয়ায় রাস্তায় কনটেইনার রাখা হয়। তিনি আরও বলেন, বর্জ্য নিয়ে মানুষের সচেতনতা বাড়ানোর জন্য আমরা ৭৫টি স্কুলে ক্যাম্পেইন কর্মসূচি পরিচালনা করছি।
ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এলাকার ৯০টি ওয়ার্ডে কাজ করছেন প্রায় আট হাজার পরিছন্নতা কর্মী। কিন্তু জনবল স্বল্পতায় সঠিকভাবে তাদের কাজ মনিটর হচ্ছে না। ডিসিসি’র ৪০০টি বর্জ্য অপসারণ ট্রাক রয়েছে। এসব গাড়ি চালানোর জন্য আছেন ৩০০ চালক। এদিকে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও সংক্রমণ প্রতিরোধ সংক্রান্ত বিভিন্ন মেডিকেল ও ক্লিনিকের ওপর করা রিসার্চ, ট্রেনিং অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট (আরটিএম ইন্টারন্যাশনাল) এক গবেষণা রিপোর্টে উল্লেখ করে, ৯০ ভাগ স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র সংক্রমণ প্রতিরোধের সব নিয়ম মানছে না। ৫২ দশমিক ৮ শতাংশ কিছু নিয়ম মানছে। একটি বেসরকারি সংস্থার জরিপে জানা গেছে, ৪০০টি প্রতিষ্ঠান থেকে ১০ টন বর্জ্য নেয়। রাজধানীর ১ হাজার ৭০০- এর বেশি হাসপাতাল, ক্লিনিকসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে প্রতিদিন ৫০ টন বর্জ্য উৎপন্ন হয়। এর মধ্যে চার ভাগের এক ভাগ ক্ষতিকর। ঢাকার বড় কয়েকটি হাসপাতালে বর্জ্য ফেলার ডাস্টবিন রয়েছে। এর মধ্যে কালো রঙের ডাস্টবিনে সাধারণ বর্জ্য, হলুদ রঙের ডাস্টবিনে সংক্রমণ বর্জ্য (ড্রেসিং, গজ, পুঁজ, রক্ত) এবং লাল ডাস্টবিনে মেটাল বর্জ্য (সুই, সিরিঞ্জ, কাঁচি, ব্লেড), সবুজ রঙের ডাস্টবিনে রিসাইকেল করা যায়, এমন বর্জ্য ফেলতে হয়। কিন্তু সরেজমিন দেখা গেছে, শতকরা ৫ ভাগ হাসপাতাল তা পুরোপুরি মানে। পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের চেয়ারম্যান আবু নাসের খান বলেছেন, রাস্তার পাশে বর্জ্য থাকায় শুধু যে স্বাস্থ্যের ক্ষতি হয় তা-ই নয়, পরিবেশকেও মারাত্মকভাবে দূষিত করে। প্রিজমের কর্মসূচি সমন্বয়কারী তড়িৎ কান্তি বিশ্বাস বলেন, আমাদের অনেক হাসপাতালের সঙ্গেই চুক্তি রয়েছে। সবাই যে সারা বছর বর্জ্য দেয় তা নয়; হাসপাতালের কর্মচারীরা বর্জ্য দিতে গড়িমসি করে। যেসব হাসপাতাল আমাদের সঙ্গে বর্জ্য দেয়ার চুক্তি করেছে আমরা তাদের বর্জ্য বিষয়ক বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দেই। সুইপার থেকে শুরু করে কর্মকর্তা ও চিকিৎসকদেরও প্রশিক্ষণ দেই। ঢাকা শহরের পরিবেশ দূষণরোধে সরকার বিশ্বব্যাংকের আর্থিক সহায়তায় র্৪কর্তা ও চিকিৎসকদেরও প্রশিক্ষণ দেই। গুর কাজ হাতে নিয়েছে।