কলকাতায় নুর হোসেনের বাড়ির সন্ধান দিলেন মহিলা কাউন্সিলার জান্নাতুল ফেরদৌস নীলা। পাশপাশি নুর হোসেনের বিভিন্ন অপকর্ম ও অপরাধের ফিরিসতি তুলে ধরলেন ডিবির তদন্ত কর্মকর্তাদের কাছে। গত রোববার প্রায় ২ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাকে তার বাড়ি পৌঁছে দেয়া হয়। তবে আবারো তাকে ডাকা হতে পারে বলে ডিবি কর্মকর্তারা জানান। তিনি এ সময় নারায়ণগঞ্জের চাঞ্চল্যকর সাত খুনের প্রধান আসামি নূর হোসেনের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।
নীলা পুলিশকে জানায়, নারায়ণগঞ্জ সিদ্ধিরগঞ্জের হাজার হাজার মানুষ নূর হোসেনের নির্যাতনের শিকার। মানসিক-শারীরিকভাবে অনেকেই পঙ্গু। বিচার চাইতে গিয়ে হামলা-মামলায় এলাকাছাড়া। কারণ থানা পুলিশ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, সিটি করপোরেশনসহ স্থানীয় প্রশাসনের শীর্ষ ক্ষমতাধররাও নূর হোসেনের কেনা ‘গোলাম’। নূর হোসেন অশিক্ষিত হলেও শিক্ষিত ক্ষমতাধরদের ম্যানেজে পটু ছিলেন। টাকার বিনিময়ে বিভিন্ন অনিয়মকে নিয়মে পরিণত করেছেন। প্রকাশ্যে মদের ব্যবসা করেছেন। দখল- উচ্ছেদ চালিয়েছেন ইচ্ছেমতো। হাইকোর্টে অগ্রিম রিট করে বছর ধরে অশ্লীল নৃত্য-যাত্রা চালিয়েছেন। জুয়ার আসর বসিয়ে অবৈধ ব্যবসা করেছেন। কাউন্টার বসিয়ে তুলেছেন চাঁদা। শিমরাইল ট্রাক টার্মিনালকে অপরাধের ঘাঁটি বানিয়েছিলেন। সব ধরনের মাদকের ট্রানজিট ছিল এই ট্রাকস্ট্যান্ড। যার অধিকাংশই পরিচালিত হয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাহারায়। এমনকি লোক দেখানো অভিযানে ৪ বস্তা ফেনসিডিল ধরে ৬৭ লাখ টাকা ঘুষ নিয়ে নিশ্চুপ থেকেছে ক্ষমতাধর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। মদ, জুয়া, যাত্রাসহ বিভিন্ন অপকর্মে এলাকাবাসী অতিষ্ঠ। যুব সমাজ ধ্বংসের মুখে। কিন্তু প্রতিবাদ করার সাহস ছিলনা কারো। কারণ নূর হোসেনের বিরুদ্ধে গেলেই তাকে পঙ্গুত্ব বরণ করতে হয়েছে। প্রাণ রক্ষায় ছাড়তে হয়েছে এলাকা।
নূর হোসেনের ক্ষমতার কাছে নারায়ণগঞ্জ সিদ্ধিরগঞ্জের অনেকেই জিম্মি। নূরের সব ধরনের অপরাধ কর্মকাণ্ডে প্রভাবশালীদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ম“ ছিল। আর টাকার বিনিময়ে ম্যানেজ থাকায় কেউই সিটি করপোরেশন, আইনশৃঙ্খলা কমিটিসহ কোনো বৈঠকেই নূর হোসেনের অপকর্ম নিয়ে কথা বলতেন না। এতে নূরের অনিয়ম-দুর্নীতি কমার পরিবর্তে ক্রমেই বেপরোয়াভাবে বেড়েছে। মোটা অংকের মাসোয়ারার বিনিময়ে সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে থাকা বেশ কয়েকজন নূর হোসেনকে উচ্চাভিলাষী স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন। তারা নূর হোসেনকে এমপি নমিনেশন পর্যন্ত দেয়ার প্রতিশ্র“তি দিয়েছিলেন। এমনকি বড় ধরনের অপরাধ করলেও কতিপয় এসব নেতার কাছে মিলেছে ‘ভালো মানুষের ছাড়পত্র’। তারা তদবির করে অপরাধ ধামাচাপা দিতেন। এসব অনিয়ম দেখতে দেখতে ক্ষমতার লোভে বিভোর হয়ে ওঠেন নূর হোসেন। অব্যাহতভাবে করতে থাকেন বড় বড় অপরাধ। এরই ধারাবাহিকতায় পুলিশ, র্যাব, সার্জেন্ট, ম্যাজিস্ট্রেটসহ সাধারণ মানুষদের পিটিয়ে জখম ও পঙ্গু করেছে নূর হোসেন ও তার বাহিনী। নূর হোসেন এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিল। সে ভিআইপি স্টাইলে চলাফেরা করেছে। রাস্তায় বেরুলে থেকেছে ১০-১৫টি গাড়ির বহর। তার পোষা বাহিনীর সদস্যরা অস্ত্র উঁচিয়ে বেপরোয়া চলাফেরা করেছে।
নীলা জানান, শনিবার দুপুরে জেলার গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) কর্মকর্তারা তাকে ফোন করে ডিবি কার্যালয়ে যেতে বলেন। তিনি গতকাল রোববার নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সংলগ্ন জেলা প্রশাসনের সার্কিট হাউসে গেলে সেখান থেকে ডিবির একটি টিম তাকে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে যায়। নীলা জানান, একজন ডিবি কর্মকর্তা তাকে প্রায় ২ ঘণ্টা নূরের নানা দিক ও অপকর্ম নিয়ে জানতে চান। এ সময় নূর সম্পর্কে যা যা জানি তার সবই বলেছি। ডিবিকে জানিয়েছি নূর হোসেন কীভাবে আমাকে ‘রক্ষিতা’ বানাতে চেয়েছিল। আর তা হতে চাইনি বলে সে আমার সুখের সংসার ভেঙেছে। ডিভোর্স দিতে হয়েছে প্রাণপ্রিয় স্বামীকেও।
এদিকে সূত্র দাবি করছে, সাত খুন মামলার প্রধান ও পলাতক আসামি নূর হোসেনের সঙ্গে সংরক্ষিত আসনের নীলার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। নূর হোসেনের অসংখ্য ঘটনার সাক্ষী ছিলেন তিনি। এ কারণে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকে নিয়ে যাওয়া হয়। প্রসঙ্গত জান্নাতুল ফেরদৌস নীলা নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ৪, ৫ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর। এ ছাড়া তিনি সিদ্ধিরগঞ্জ থানা যুব মহিলা লীগের রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত। আ স