ডেস্ক নিউজ, আজকের সময় :
ফেনীতে দিনদুপুরে শ’ শ’ লোকের সামনে কুপিয়ে, গুলি করে আক্রমণের পর ফুলগাজীর উপজেলা চেয়ারম্যান
একরামুল হক একরামকে আগুনে পুড়িয়ে মারে দুর্বৃত্তরা। শ’ শ’ মানুষ ঘটনাটি প্রত্যক্ষ করলেও কেউ এগিয়ে যায়নি তাদের বাঁচাতে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, একরামকে বহনকারী গাড়িটিতে চালকসহ পাঁচ জন ছিলেন। আগুন দেয়ার পর চারজন কোনভাবে বেরিয়ে এলেও গাড়ির ভেতর থেকে বেরিয়ে আসতে পারেননি একরাম। বন্ধু সৌদিপ্রবাসী দেলোয়ারসহ একই গাড়িতে ফেনী সদর থেকে ফুলগাজীতে যাচ্ছিলেন তারা। নৃশংস এই ঘটনায় অল্পের জন্য প্রাণে রক্ষা পান দেলোয়ার হোসেন। তবে তার সারা শরীরে অসংখ্য জখম হয়েছে। দুর্বৃত্তরা তাকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে আহত করেছে। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ফেনী থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। হাসপাতালে ঘটনার বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, আমরা ফেনী ডায়াবেটিক হাসপাতাল থেকে বের হয়ে ফুলগাজীর উপজেলা চেয়ারম্যান একরামুল হক একরামসহ যাচ্ছিলাম ফুলগাজীর দিকে। আমাদের সঙ্গে দৈনিক ফেনী প্রতিদিনের সাংবাদিক ফরহাদ, ফুলগাজী সদর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান শম্ভু ও গাড়িচালক মামুন ছিলেন। আমরা ফেনী রেললাইন পার হওয়ার পরে ফারুক হোটেল পার হয়েছি, তখনই চারদিক থেকে আমাদের ওপর আক্রমণ শুরু হয়। এসময় পাঁচটি মোটরসাইকেল আমাদের মাইক্রোবাসকে ঘিরে ধরে। সঙ্গে সঙ্গে আশেপাশে অন্যরা দা, কিরিচ দিয়ে আক্রমণ করে। আমরা কিছু বুঝে উঠতে পারছিলাম না। কেন আমাদের ওপর হামলা চালানো হচ্ছে। সেকেন্ডের ভেতর আমাদের ড্রাইভার গাড়ির নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে একটি অটোরিকশাকে ধাক্কা দেয়। এরপর ফুটপাথের ওপর উঠে গাড়িটি আটকে যায়। সেখান থেকে গাড়ি আর কোনদিকে যাচ্ছিল না। এরপর আমাদের এলোপাতাড়ি কিরিচ দিয়ে কোপ, লাঠি, হকিস্টিক দিয়ে মারধর, পিস্তল দিয়ে অনবরত গুলি করেছে। আমার পিঠে ডাক্তাররা অন্তত এক শ’ সেলাই দিয়েছে। আমার গাড়িচালকের অবস্থা ভাল না। আর আমার বন্ধু তো মারাই গেছে। অন্য দুই জনের কি অবস্থা তা জানি না। কেউ বলে তারা মারা গেছে, কেউ বলে বেঁচে আছে। তিনি বলেন, যখনই গাড়ির গ্লাস ভাঙছে তখনই গাড়িতে আগুন দিয়েছে। পেট্রল ছড়িয়ে সামনে ও পিছন থেকেও আগুন দেয়। দুই দিকে আগুন দেয়ার জন্য আমি ও আমার বন্ধু উপজেলা চেয়ারম্যানকে বের করতে পারিনি। চেষ্টা করেছিলাম অনেক তাকে বের করার জন্য। কিন্তু গাড়ির দরজা ফেঁসে যাওয়ায় দরজা খোলা যায়নি। আমি নিজে দরজার গ্লাস ভাঙার দিক দিয়ে কোনমতে বের হয়ে আসি। দেলোয়ার হোসেন বলেন, কম হলেও দু’শ’ লোক ছিল সেখানে। কারও কারও গায়ে ফেনী কলেজের ইউনিফর্ম ছিল। সবাই ইয়াং ছিল। যে গুলি করেছে তাকে আমি সরাসরি দেখেছি। তাদের নাম আমি জানি না। কিন্তু প্রত্যেককেই দেখলে চিনবো।
তিনি বলেন, বের হয়ে আসার পর আবার আমাকে মেরেছে। আমার মানিব্যাগ রেখেছে, আমি দিয়ে দিয়েছি। আমার মোবাইল চেয়েছে, বলছি মোবাইল আমার গাড়ির ভেতরে রয়ে গেছে। পকেটের টাকা-পয়সা সব নিয়ে গেছে। আমি চিৎকার করছিলাম। আমার সামনেই আমার বন্ধুসহ গাড়িটা দাউ দাউ করে জ্বলছিল। সবাই আমাকে বলছিল যে, গাড়ি বার্স্ট করতে পারে, সরে আসেন। কিন্তু আমি বলছি আমার বন্ধুকে না বের করা পর্যন্ত আমি বের হবো না। পরে আমাকে উদ্ধার করে ডায়াবেটিক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসার পর তারা ঢাকা মেডিকেল কলেজে রেফার্ড করে। এদিকে চালক মামুনের ফুফা জসিম জানান, মামুনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য পান্থপথের একটি হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করা হয়েছে।
–
সূত্র : দৈনিক মানবজমিন