নারায়ণগঞ্জের আলোচিত সেভেন মার্ডারের ঘটনায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছে প্রতক্ষদর্শী একজন ও তার মেয়ে। ঘটনার দিন তথা ২৭ এপ্রিল দুপুরে বাবার মটরসাইকেলে করে তারা দুইজন নারায়ণগঞ্জ শহর থেকে লিংক রোড দিয়ে সাইনবোর্ডের দিকে যাচ্ছিলেন বলে জানান।
বৃহস্পতিবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে বন্দরের জাঙ্গাইল বটতলা এলাকার শহীদুল ইসলাম খোকন ও তার কলেজ পড়ুয়া মেয়ে রাবেয়া আক্তার আঁখি ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী প্রদান করে তাদের সামনে ঘটে যাওয়া পুরো ঘটনা বর্ণনা করেন।
নারায়ণগঞ্জ আদালত পুলিশের পরিদর্শক হাবিবুর রহমান বাবা-মেয়ের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী প্রদানের সত্যতা স্বীকার করেছেন। তবে আদালতে তারা কী বলেছেন তা জানাতে রাজি হননি।
জবানবন্দী দেয়ার পর বাবা ও মেয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসনের সার্কিট হাউজে হাইকোর্টের নির্দেশে গঠিত তদন্ত কমিটির কাছে স্বাক্ষ্য প্রদান করেন।
এর আগে গত ১৮ মে জামালউদ্দিন নামের এক প্রত্যক্ষদর্শী একই আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী প্রদান করে ঘটনার দিনের বর্ণনা দিয়েছিলেন।
তবে ১৭ মে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের পাওয়ার হাউজে গণশুনানীতে শহীদুল ইসলাম ঘটনার দিনের বর্ণনায় জানিয়েছিলেন তদন্ত কমিটি ও সাংবাদিকদের কাছে। সেদিন তিনি বলেছিলেন, গত ২৭ মে তার মেয়ের পরীক্ষা শেষে কলেজ থেকে মোটরসাইকেলে বাসায় ফিরছিলেন। দুপুর আনুমানিক দেড়টার দিকে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডে র্যাবের দুটি গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেন। সেখানে অন্য দুটি গাড়ি থেকে কয়েকজনকে ধরে র্যাবের গাড়িতে তোলা হচ্ছিল। সেদিন তিনি নারায়ণগঞ্জ শহরে একটি কলেজে আমার মেয়ের পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর তাকে নিয়ে বাড়িতে ফিরছিলাম। লিংক রোড দিয়ে মোটরসাইকেলের পেছনে মেয়েকে বসিয়ে তিনি নিজেই বাইক চালাচ্ছিলেন।
শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘কৌতূহলবশত আমি মোটরসাইকেল থামিয়ে একজন র্যাব সদস্যকে বলি কী হয়েছে এখানে? ওই র্যাব সদস্য অত্যন্ত রূঢ় আচরণ করে আমাকে বলেন, এই বেটা সামনে বাড়া। এরপর আমি ভয়ে সামনে চলে আসি, কিন্তু মনের মধ্যে কৌতূহলটি থেকেই যায়। আবারও মোটরসাইকেল থামিয়ে পেছনে তাকিয়ে ঘটনা দেখতে থাকি। তখন আমার মনে হলো আইনশৃক্সখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা যদি কোনো অভিযান চালিয়ে মাদক বা আসামি ধরে তাতে আমার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করার কথা না। তাই মনে সন্দেহ লাগলো। গাড়ি থেকে নেমে আরেকটু সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। দেখলাম র্যাবের কয়েকজন সদস্য রাস্তার মাঝখানে থাকা গাড়িগুলোর দুই পাশে অস্ত্র তাক করে দাঁড়িয়ে আছে। যেন বিশেষ কোনো অভিযান চলছিল। মাঝখানে সাদা প্যান্ট ও গেঞ্জি পরা একজন একটি ছোট অস্ত্র হাতে প্রাইভেটকার থেকে হাইয়েস গাড়িতে কয়েকজন লোক উঠাচ্ছেন। যদি কেউ গাড়িতে উঠতে অনীহা প্রকাশ করে, তখন সাদা গেঞ্জি পরা লোকটি তার হাতে থাকা ছোট পিস্তল দিয়ে মাথায় আঘাত করেন। অল্প সময়ের মধ্যেই তারা কাজ সারেন। হাইয়েস গাড়িটি সাইনবোর্ড এলাকার দিকে চালিয়ে যায়। আমিও আমার মোটরসাইকেল চালিয়ে ওই গাড়ির পিছু নেই। কিন্তু হাইয়েস গাড়ির গতির সঙ্গে তাল মেলাতে পারিনি। অনেক পেছনে পড়ে যাই। এরপর গাড়িটি কোথায় গেছে বলতে পারি না। যে সাতজন মারা গেছে তারাই যে ওই জায়গা থেকে অপহরণের শিকার হয়েছেন সেটা তো আমি জানতাম না। এখন ঘন ঘন টেলিভিশনে ঘটনাটা দেখার পর মনে হলো এই ঘটনা তো ওই ঘটনা।’ বাংলামেইল