ঘনিয়ে আসছে ব্রাজিল বিশ্বকাপের সময়। দিন যতই ঘনিয়ে আসছে ততই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে এই বিশ্বকাপকে ঘিরে আঁকা একটি চিত্রকর্ম। চিত্রকর্মটিতে বেশ কিছু বার্তা দেওয়া হয়েছে।
গত ১০ মে ব্রাজিলিয়ান চিত্রশিল্পী পাওলো ইতো একটি স্কুলের দরজায় একটি ম্যুরাল আঁকেন। স্কুলটি ছিল সাও পাওলোর পম্পেইয়া জেলাতে। এক সপ্তাহ পর এটা বিশ্বজুড়ে হুলস্থূল ফেলে দেয়। ফেসবুকে এটা ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে।
ম্যুরালটি ব্রাজিলের একটা ফেসবুক পেজে শেয়ার করা হয় যেটা ৪০ হাজারেরও বেশি লাইক ও শেয়ার হয়েছে। এটা অবশ্য ক্রমেই বাড়ছে! আর বিভিন্ন পত্রিকা, ম্যাগাজিনে প্রকাশ হতে হতে এটা সবার কাছেই বেশ পরিচিতি পেয়েছে এরই মধ্যে।
ছবিতে দেখা যায়, একটা শিশু কাঁদছে। হাতে চামচ কিন্তু খাবারের কিছু নেই। সামনে রাখা প্লেটে একটা ফুটবল। এটা দুটো অর্থ করতে পারে। ফুটবল বিশ্বকাপ এগিয়ে আসছে, আর অপেক্ষা সইছে না। শিশু ক্ষুধা পেলে যেমন কাঁদে তেমন করে বিশ্বজুড়ে ফুটবল ভক্তরা অপেক্ষা করছে।
আর যে বার্তাটা শিল্পী দিচ্ছেন সেটা হলো, ব্রাজিলের দরিদ্র পরিবারগুলোর গল্প যাদের নিয়মিত খাবার জুটে না। একটি নড়বড়ে ঘরের ভাঙাচোরা টেবিলে হাতে কাটা চামচ ও ছুরি হাতে খাবারের জন্য অপেক্ষা করছে ক্ষুধার্ত শিশুটি। তার ডান চোখ দিয়ে পানি ঝরছে, বুকের হাড়গুলো দেখা যাচ্ছে, মুখে কয়েকটা দাঁত নেই। টেবিলে রাখা একটি গ্লাস। ওখানে পানি আছে কি নেই সেটা বুঝা যাচ্ছে না। আর খাবার প্লেটে খাবারের বদলে একটা ফুটবল! এখন যে প্রশ্নটা শিল্পী আমাদের দিকে ছুড়েছেন এটা পরিষ্কার। ক্ষুধার্ত শিশুর কাছে ফুটবল বিশ্বকাপ কি অর্থ দিতে পারে? তার সবচেয়ে বড় প্রয়োজন খাবার।
এ ছবিটা আরো দেখিয়ে দিচ্ছে, বিশ্বকাপের চকমকে আয়োজনের ফাঁকে ব্রাজিল তার দরিদ্রতা কত লুকিয়ে রেখেছে বা ঢেকে রেখতে চেয়েছে। যে জিনিসটা আরো পরিষ্কার করছে যে, গত কয়েক বছরে ব্রাজিল অনেক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে আবার একই সাথে দরিদ্রতার হারও বেড়েছে! বিশ্বকাপ আয়োজন করতে কয়েক বিলিয়ন ডলার খরচ করেছে যেটা অন্য জায়গায় ব্যবহার করতে পারতো।
সাও পাওলোর ঐ চিত্রশিল্পী এক সাক্ষাতকারে বলেন, ‘আমি জীবনে এত জনপ্রিয় কোনো চিত্র আঁকতে পারিনি।’
পথে পথে ছবি আঁকা ছিল যার কাজ সে পাওলো ইতো এ বিস্ময়কর জনপ্রিয়তায় বিস্মিত ও খানিকটা বিব্রতও বটে।
সেøট সাময়িকীর সোস্যাল মিডিয়া এডিটর জেরেমি স্টাল এর সাথে ফেসবুক চ্যাটে ইতো বলেন, ‘সত্য কথা হলো, ব্রাজিলে এত সমস্যা যে এটা ঠিক করা কঠিন কোথা থেকে শুরু করতে হবে। আমি এটা বলতে চাচ্ছি না যে, কেউ দরিদ্রতার বিরুদ্ধে লড়াই করছে না।’
তার আঁকা ম্যুরালটি নিয়ে তিনি বলেন ‘অবস্থা যে বেশি ভালো না এটা বিশ্ববাসীকে দেখানো উচিত, অন্ততপক্ষে আমাদেরকেই দেখানো উচিত!’
৭০ হাজার আসনবিশিষ্ট ইতাকুয়েরাও স্টেডিয়ামের বাইরে চিত্রটিকে প্রথমে রাখতে চেয়েছিলেন ইতো। পরবর্তীতে সে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেন এবং ঐ মধ্যবিত্ত অধ্যুষিত পম্পেইয়ার স্কুলটিকে সঠিক মনে করেন। বাকিটা ইতিহাস। ব্রাজিল বিশ্বকাপে এ ছবিটা বারে বারেই দর্শকদের মনে নাড়া দেবে। সাম্বা আর বিশ্বকাপ ঐতিহ্যের সাথে সাথে ব্রাজিলের দরিদ্রতার চিত্রও মনে দাগ কাটবে সারা বিশ্বের ফুটবলামোদীদের!
(সেøট সাময়িকীতে প্রকাশিত জেরিমি স্টালের প্রতিবেদন অবলম্বনে)