একের পর এক অভিযোগে র্যাব যখন কোনঠাসা ঠিক এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে অপরাধীরা বেপরোয়া হয়ে ছিনতাই, ডাকাতি, খুনের মত ঘটনা ঘটিয়ে যাচ্ছে। বেড়ে গেছে চাঁদাবাজী,দখলদারিত্ব সহ বিভিন্ন অপরাধ।
গত তিন দিনে র্যাবের টহল, চেকপোস্ট গতানুগতিক ভাবে কমে যাওয়ায় রাজধানীতে ৬ টি বড় ধরণের ছিনতাইয়ের ঘটনা ছাড়াও ফেনিতে প্রকাশ্যে গুলি করে আগুনে পুড়িয়ে হত্যার মত ঘটনা ঘটেছে। বিশেষজ্ঞ মহল মনে করছেন, একটি গ্রুপ যারা অপরাধের সঙ্গে জড়িত। তারাই র্যাবের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে র্যাবকে বিলুপ্ত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ওই মহলটির সুবিধা লাভের জন্য র্যাবের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। তারা আরো বলেন, পুরো র্যাব তো আর অপরাধে জড়িত নয়। কোন ব্যক্তি বিশেষের কারণে র্যাব বাহিনী যেমন বিলুপ্ত হতে পারে না তেমনি পুরো র্যাব বাহিনীকে জড়ানোও ঠিক নয়।
অন্যদিকে, র্যাবের বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত যত অপহরণ, গুমের অভিযোগ রয়েছে এবং যারা নিখোঁজ হয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে কোন না কোন অভিযোগ পাওয়া গেছে। এরা কেউ রাজনৈতিক ভাবে ফায়দা লুটছে আবার কেউ বা এলাকার আধিপত্য বিস্তারের জন্য বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। সম্প্রতি আলোচিত সাত খুনের ঘটনায় অভিযুক্ত প্রধান আসামী নুর হোসেন ট্রাক হেলপার থেকে কোটিপতি হয়েছেন। এলাকায় তার বিরুদ্ধে এহেন কোন অপরাধ নেই যা তিনি সংগঠিত করেননি। আবার নিহত নজরুলও তার চেয়ে কম ছিলেন না। তার বিরুদ্ধে রয়েছে বিস্তর অভিযোগ। নুর হোসেন এবং নিহত নজরুল ইসলাম দুজনই রাজনৈতিক ফয়দা লুটে আধিপত্য বিস্তার করে এলাকায় সব ধরণের অপরাধ কর্মকান্ড ঘটিয়ে যেতেন। তাই দখলদারিত্ব নিয়ে একে অপরের ছিল শত্রু। যে কারণে নজরুল ইসলাম খুন হওয়ার পরপরই অভিযোগ উঠে নুর হোসেনের বিরুদ্ধে। আর এ অভিযোগেই মামলার প্রধান আসামীও হন তিনি।
অন্যদিকে, র্যাবের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠে নুর হোসেনের মাধ্যমে ৬ কোটি টাকা ঘুষ খেয়ে র্যাব ৭ জনকে হত্যা করেছে। অবশ্য এ পর্যন্ত প্রত্যক্ষদর্শী যারা সরাসরি হত্যাকান্ড দেখেছেন এমন কাউকে পাওয়া যায়নি। এ পর্যন্ত রিমান্ডে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে মুখ খোলেনি গ্রেপ্তারকৃত র্যাবের সেই তিন কর্মকর্তা। তারা বরাবরই বলে আসছেন এ হত্যার সঙ্গে জড়িত নন। তাই প্রতিটি ঘটনার পেছনে শুধু র্যাবই জড়িত নয়। এর পেছনে সংশি¬ষ্ট এলাকার কতিপয় নেতা বা ব্যক্তি ম“ বা সহযোগীর অভিযোগ পাওয়া গেছে।
তেমনি র্যাব-১১ এর ৫ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে লাকসাম উপজেলা বিএনপি সভাপতি সাইফুল ইসলাম হিরু এবং পৌরসভা বিএনপি সভাপতি হুমায়ুন কবির পারভেজকে অপহরণের পর হত্যার অভিযোগ উঠেছে। তাদের পরিবারের দাবি র্যাব-১১ এর সেই সিও তারেক সাঈদের নেতৃত্বে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে অপহরণ করে হত্যা করা হয়েছে। এ ব্যাপারে সংশি¬ষ্ট আদালতে একটি মামলাও দায়ের হয়েছে। কিন্তু অনুসন্ধানে জানা যায়, লাকসাম উপজেলা বিএনপি সভাপতি সাইফুল ইসলাম হিরু ছাত্র জীবনে জাতীয়পার্টির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। সেই সুবাধে হিরু ১৯৮৬ সালে জাতীয় পার্টির এমপি হন। অবশ্য নির্বাচন নিয়ে তখন বির্তকিত ছিল। পরবর্তীতে ২০০০ সালের দিকে তিনি বিএনপিতে যোগদান করেন। তখন জাতীয় নির্বাচনে কর্নেল অব. এম আনোয়ারুল আজীম বিএনপি থেকে নমিনেশন পান। তার হাত ধরে তিনি বিএনপিতে যোগ দেন। সেই সুবাধে তিনি উপজেলা বিএনপি’র সভাপতি পদও পেয়ে যান। এরপর আনোয়ারুল আজীমকে হাতে নিয়ে বিএনপিতে একক আধিপত্য বিস্তার করেন। ২০০১ শেষের দিকে লাকসাম পৌর সভা নির্বাচন হয়। ওই নির্বাচনে বিএনপি’র ত্যাগী নেতা মজির আহমেদ দলটির হয়ে পৌরসভা নির্বাচন করেন এবং পৌরসভা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এরপরই আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে শুরু হয় হিরু এবং মজির আহমেদের মধ্যে দ্বন্দ্ব। পরবর্তীতে বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালীন সময় পদ পদবি নিয়ে উভয় পক্ষ বেশ কয়েকবার রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে লিপ্ত হন। ক্ষমতা থাকাকালীন সময় কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের দপ্তর সম্পাদক শফিকুর রহমানকে দৌলতগঞ্জ বাজারে এবং বিএনপি নেতা স্বপন সাহা ও বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা গোলাম মাওলা একই ভাবে শারীরিক ভাবে হিরুর ক্যাডাররা লাঞ্ছিত করেন। তখন তিনি এলাকায় ‘লাল বাহিনী’ নামে একটি বাহিনী করেন। তাদের বেশ কিছু অপরাধকর্মকান্ড ঘটানোর পর এলাকাবাসী তাকে ‘পেন্টাগণ’ নাম উপাধি দেয়। এরপর থেকেই লাকসাম ও কুমিল্লায় কোন অপরাধ কর্মকান্ড ঘটলে একবাক্যে ‘পেন্টাগণ’ ক্ষ্যাত হিরুকেই দোষারোপ করা হতো।
পরবর্তীতে কেয়ারটেকার সরকার আশার পরপরই হিরু ব্যাংককে পালিয়ে গিয়ে আত্মগোপন করেন। এরপর ২০০৮ সালে নির্বাচনের পর পরিবেশ স্বাভাবিক হলে তিনি দেশে ফিরে বিএনপি’র হাল ধরেন। ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে বর্তমান এমপি কুমিল্লা-৯ আসনের তাজুল ইসলাম নির্বাচিত হন। ২০১১ সালে বিএনপি’র সম্মেলনে আবারো মজির আহম্মেদের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পরেন হিরু। ওই সম্মেলনে সাইফুল ইসলাম হিরু উপজেলা বিএনপি সভাপতি এবং হুমায়ুন কবির পারভেজ পৌরসভা বিএনপি সভাপতি নির্বাচিত হন। ২০১৩ সালে স্থানীয় ২ সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে কয়েকটি অভিযোগ পেলে লাকসাম আদালত তদন্তের জন্য স্থানীয় ভূমি কমিশনারকে দায়িত্ব দেন। কিন্তু সাইফুল ইসলাম হিরু এবং মজির আহম্মেদ দুই পক্ষে অবস্থান নেয়ায় ঘটনা অনেক দূর গড়ায়। এরি জের ধরে দৌলতগঞ্জ বাজারে হিরু এবং মজিরের ক্যাডারদের মধ্যে রক্তক্ষয়ি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। হিরু এসময় তার ক্যাডার দিয়ে মজিরের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, সোহাগ মৎস্য খামারে হামলা চালিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। এতে মজিরের ৪টি গাড়িসহ বেশকিছু মালামাল পুড়ে যায়। এরপর থেকেই বড় ধরণের দ্বন্দ্ব শুরু হয় দুজনার মধ্যে।
স্থানীয়দের ধারণা, এই সংঘর্ষের জের ধরে জমির হোসেন হয়তো তাদের অপহরণ করে থাকতে পারে। শোনা গেছে, বিভিন্ন দিন থেকে জমির হোসেন হিরুকে ঘায়েল করার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিল। এরপর থেকে স্থানীয় জেলা বিএনপি নেতা আবুল কালাম ওরফে চৈতি কালাম ও আব্দুর রহমান বাদলের সঙ্গে হাত মেলান তিনি। শোনা গেছে, হিরুকে ঘায়েল করার জন্য এই তিনজন মিলে বিভিন্ন সময় পরিকল্পনা করে আসছিল। অবশ্য পরে কালাম এবং বাদল জমিরের সঙ্গ ত্যাগ করলে জমির একাই আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা চালায়। একপর্যায়ে তারা হিরুর বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেয়ার জন্য উঠে পরে লাগেন। এরপর ২০১৩ এর ১৪ নভেম্বর রাত বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার মিল এলাকা থেকে তিনি অপহরণ হন। গত ৬ মাস ধরে হিরু এবং পারভেজ নিখোঁজ রয়েছেন। তারা বেঁচে আছেন না মেরে ফেলা হয়েছে তা এখনও জানেন না তার পরিবার। সূত্র জানায় অপহরণের পেছনে হয়তো কারো হাত থাকতে পারে। স্থানীয় ভাবে কথিত আছে মজির আহম্মেদের শ্বশুড় বাড়ির এক আত্মীয় র্যাবের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তা থাকায় তার মাধ্যমে তাদের অপহরণের পর হত্যা করে লাশ গুম করে ফেলেছেন। তারা অপহরণ হওয়ার পরই লাকসাম থানায় হিরু ও হুমায়ুনের স্বজনদের পক্ষ থেকে একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়। পরে র্যাব-১১ এর তৎকালীন সিও লে.কর্নেল তারিক সাঈদ, মেজর আরিফ এবং এমএম রানার বিরুদ্ধে কুমিল¬া জুডিশিয়াল আদালতে মামলা করেন। বর্তমানে তা তদন্তাধীন। তবে র্যাব বলেছে এ ঘটনার সঙ্গে তাদের কোন সম্পৃক্ততা নেই। আর এ ধরণের কোন লোক তাকে ধরে আনেননি। তাদের অপহরণের বিষয় নিয়ে র্যাবের কাছে যে অভিযোগ করা হয়েছে তার উপর নির্ভর করে কাজ করে যাচ্ছে।
তাই এ ধরণের অধিকাংশ ঘটনার পেছনে কোন না কোন যোগসূত্র রয়েছে। তবে র্যাবকে হয়তো কোন না কোন গোষ্ঠি সম্পৃক্ত করে এ ধরণের ঘটনা ঘটানোর উৎসাহ জোগায়। তারা কেউ প্রভাবশালী কেউ বা কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত। অথচ এ ধরণের যে সব ঘটনার জš§ নিয়েছে এর অধিকাংশ ক্ষেত্রে এলাকার রাজনৈতিক আধিপত্য, দখলদারিত্ব, চাঁদাবাজীসহ ৪ ধরণের কারণ জড়িত। কোনও কোন ক্ষেত্রে নিজেদের দোষ অন্যের ঘাড়ে চাপিয়ে পার পেয়ে যাচ্ছে কতিপয় সুবিধাভোগী ব্যক্তি বিশেষ। তারাই চাচ্ছে র্যাবকে সমালোচিত করে তাদের ফায়দা হাছিল করতে। আর এসব সমালোচনার জš§ যাতে আর না নেয় সে কারণে হয়তো র্যাবের কর্মপরিধির বাইরে কোন অভিযান,চেকপোস্ট,টহল দিবে না। আর এ সুযোগই কাজে লাগাতে ব্যস্ত অপরাধীরা।আ স