ফ্লাইওভার বানাও ফ্লাইওভার ভাঙ

2_9543মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভার নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল চলতি বছরের ডিসেম্বর মাসে। কিন্তু নির্মাণ কাজ শেষ হওয়া তো দূরের কথা, নকশা জটিলতায় এখনো কোথাও কোথাও চলছে ভাঙ্গা-গড়ার খেলা। ফলে কোটি কোটি টাকার ব্যয় বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। কয়েক দিনের ব্যবধানে মগবাজার রেল গেইটের পাশ্বর্ে, মৌচাক ও এফডিসি এলাকা মিলিয়ে ১৪৭টি পাইলের মধ্যে ১২২টির পাইল কলাম ভেঙে ফেলা হয়েছে। আরও ১৪টি পাইল কলাম ভেঙে ফেলার প্রক্রিয়া চলছে। এ ছাড়া ৩৫টি পাইলের দৈর্ঘ্য ২৩ ইঞ্চি থেকে বেড়ে ৪৮ ইঞ্চি করা হয়েছে। আর পরিত্যক্ত হয়েছে ১২টি পাইল। পাইলের অবস্থান পরিবর্তনে ফ্লাইওভারের পিলারের অবস্থান ও দূরত্বেও পরিবর্তন আসবে। নকশা সংশোধনের এমন জটিলতায় বাধাগ্রস্ত হচ্ছে রাজধানীর মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভার নির্মাণ কাজ। এসব কারণে প্রকল্পটির বাস্তবায়নের সময়ও প্রায় তিন বছর বাড়াতে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান সরকারকে চিঠি দিয়ে অনুরোধ জানিয়েছে। পাশাপাশি এই সড়কে চলাচলকারী সাধারণ মানুষ প্রতিনিয়ত যানজটে পড়ে দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। গত ১৬ মাসে কোথাও কাজ হয়েছে মাত্র ২৫ থেকে ২৬ শতাংশ নির্মাণ কাজ। আবার কোথাও পাঁচ ভাগের বেশি হয়নি। প্রকল্পের কাজ শুরুর দুই বছরের মধ্যে উড়াল সড়কের নির্মাণ কাজ শেষ করার কথা ছিল। নকশা সংশোধন করে পুরো ফ্লাইওভারের নির্মাণ কাজ শেষ করতে ২০১৬ সাল লাগবে বলে মনে করছে সংশ্লিষ্টরা। বর্তমানে উড়াল সড়কের নকশা সংশোধনে কাজ করছে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়-বুয়েট। এক্ষেত্রে পাইলের জন্য মাটি কেটে দেখা হচ্ছে নিচে কোনো পরিসেবা সংযোগ লাইন আছে কি না। এরপর ওই স্থানে পাইল করার অনুমোদন দিচ্ছে বুয়েট। তবে মাটি কেটে পরিসেবা সংযোগ লাইন দেখা গেলে তা বন্ধ করে পাশর্্ববর্তী স্থানে আবার গর্ত করা হচ্ছে। এভাবে চলছে পাইলের নকশা পরিবর্তনের কাজ। জানতে চাইলে এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলী ওয়াহিদুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ফ্লাইওভারের নকশা পরিবর্তনে একটি কমিটি রয়েছে। তারা এ বিষয়ে কাজ করছে। প্রকল্পের নকশা চূড়ান্ত হওয়ার পর ব্যয় বৃদ্ধির প্রস্তাব চূড়ান্ত করে মন্ত্রিসভায় অনুমোদনের জন্য পাঠানো হবে। এছাড়া বিদেশি দাতাদের অনুমোদনেরও প্রয়োজন হবে। কিন্তু নির্মাণ কাজ শুরুর পরপরই প্রকল্প এলাকা ও আশপাশের ভূ-গর্ভস্থ বিভিন্ন পরিসেবা সংযোগ লাইনের কারণে ফ্লাইওভারের পাইলিংয়ের কাজ বাধাগ্রস্ত হয়। এসব পরিসেবা সংযোগ লাইন অপসারণে সেবাদানকারী সংস্থাগুলোকে চিঠি দেওয়া হলেও কোনো লাভ হয়নি। এ ছাড়া প্রকল্প এলাকার সড়ক খুব ব্যস্ত ও অপ্রশস্ত হওয়ায় সংযোগ লাইনগুলো অপসারণ বেশ জটিল। ফলে বাধ্য হয়ে নকশাতেই কিছুটা পরিবর্তন আনতে কাজ করেছে বুয়েট কর্তৃপক্ষ। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের (এলজিইডি) তত্ত্বাবধানে যৌথভাবে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে দেশি-বিদেশি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান। প্রকল্পের দুটি প্যাকেজের (ডবি্লউ-৫ ও ডবি্লউ-৬) কাজ করছে চীনের মেটালারজিক্যাল কনস্ট্রাকশন ওভারসিজ কোম্পানি ও দেশীয় তমা কনস্ট্রাকশন।অন্য প্যাকেজের (ডবি্লউ-৪) কাজ করছে ভারতের সিমপ্লেঙ্ েইনফ্রাসটাকচার লিমিটেড ও দেশীয় নাভানা কনস্টাকশন। তবে নকশা সংশোধনের কারণে উভয় প্রতিষ্ঠানই প্রকল্পের ব্যয় বাড়াতে এলজিইডির কাছে চিঠি দিয়েছে বলে জানান এলজিইডির এই শীর্ষ কর্মকতা। প্রকল্প ব্যয় ও সময় বাড়ানোর বিষয়টি স্বীকার করে তমা কনস্ট্রাকশন লিমিটেডের এমডি আতাউর রহমান ভূঁইয়া বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সংশোধিত নকশা পেতে দেরি হওয়ায় কাজের গতি কমেছে। এতে ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। এ অবস্থায় প্রকল্প ব্যয় দ্বিগুণ করতে এলজিইডিকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। মগবাজার থেকে মৌচাক পর্যন্ত ৬ নম্বর প্যাকেজের কাজ এবং মৌচাক থেকে কাকরাইল-আবুল হোটেল পর্যন্ত কাজের পাইলিংয়ের জন্য চুক্তির সময় ওয়াসা, তিতাস ও ডিপিডিসি তাদের বিভিন্ন পাইপ লাইনের একটা নকশা দেয়। কিন্তু কাজ করতে গিয়ে দেখা যায়, যেখানে পাইপ লাইন নেই বলে দেখানো হয়েছে সেখানে কোনো না কোনো পাইপ লাইন রয়েছে। মাটির তলায় গর্ত করতে গিয়ে দেখা যায় ওয়াসা, তিতাস এবং ডিপিডিসি যে আন্ডারগ্রাউন্ডে থাকা বিভিন্ন পাইপ লাইনের ম্যাপ সরবরাহ করেছে তা সঠিক নয়। যেখানে দেখানো হয়েছে ওয়াসার লাইন নেই সেখানে কোথাও কোথাও ড্রিল করতে গিয়ে পানির লাইন ছিদ্র হয়ে গেছে। আবার তিতাসের দেওয়া ম্যাপেও ব্যাপক গরমিল। এর কারণে ইস্কাটনে জনকণ্ঠ অফিসের সামনে ড্রিল করার সময় গ্যাস পাইপ লাইন ছিদ্র হয়ে যায়। আবার মগবাজারে ড্রিল করার সময় ইলেকট্রিক লাইনের ক্ষতি হয় ও পানির লাইন ছিদ্র হয়ে পানি বের হচ্ছে, এখনো কর্দমাক্ত অবস্থার কারণে সেখানে নরকের অবস্থা সৃষ্টি হয়ে আছে। এলজিইডি জানায়, রাজধানীর যানজট নিরসনে মগবাজার-মৌচাক (সমন্বিত) ফ্লাইওভারটি নির্মাণ কাজ শুরু হয় ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফ্লাইওভারের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। চার লেনবিশিষ্ট এ ফ্লাইওভারের মোট দৈর্ঘ্য ৮ দশমিক ২৩ কিলোমিটার। এটি নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়ছে ৭৭২ কোটি ৭০ লাখ টাকা। প্রকল্পের কাজ শুরুর দুই বছরের মধ্যেই এর নির্মাণ কাজ শেষ করার কথা। মগবাজার-মৌচাক উড়াল সড়কের প্রকল্পের পরিচালক নাজমুল আলম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, প্রকল্প ব্যয় বাড়লেও কত হবে তা এখনই বলা যাচ্ছে না। এলজিইডির অপর একটি সূত্র জানায়, ফ্লাইওভারটির ডবি্লউ-৪ প্যাকেজের আওতায় তেজগাঁও সাতরাস্তা থেকে শুরু হয়ে এফডিসি মোড়, মগবাজার রেলক্রসিং, চৌরাস্তা হয়ে হলি ফ্যামিলি হাসপাতালের কাছে নেমে যাবে ফ্লাইওভারটি। ডবি্লউ-৫ প্যাকেজ রামপুরা রোড থেকে মৌচাক হয়ে শান্তিনগর গিয়ে শেষ হবে। আর ডবি্লউ-৬ প্যাকেজে বাংলামোটর থেকে মগবাজার, মৌচাক, মালিবাগ হয়ে রাজারবাগ পুলিশ লাইনে গিয়ে শেষ হবে। ফ্লাইওভারে ওঠানামার জন্য ৮টি লুপ থাকবে। রাজধানীর যানজট নিরসনের অংশ হিসেবে মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভার নির্মাণ প্রকল্পটি ২০১১ সালে অনুমোদন করে সরকার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *