প্রস্তাবিত ২০১৩-১৪ অর্থবছরের সম্পূরক বাজেটের অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। গত ৬ জুন সংসদে আগামী অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেট পেশ করা হয়। এর পর দু’দিন বিরতি দিয়ে রোববার আবার অধিবেশন শুরু হলে প্রশ্নোত্তর টেবিলে উপস্থাপন করে স্পিকার ড. শিরিন শারমিন চৌধুরী সম্পূরক বাজেটের উপর আলোচনা শুরু করেন।
বাজেট আলোচনায় স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য ডা. রুস্তম আলী ফরাজী সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ আনেন। এসব বিষয়ে মন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলেও কোন প্রতিকার হচ্ছে না বলেও তিনি অভিযোগ করেন।
সম্পূরক বাজেটের উপর আলোচনার প্রথমদিন কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরীসহ অংশ নেন অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এম মান্নান, আওয়ামী লীগের নূরজাহান বেগম, জাতীয় পার্টির পীর ফজলুর রহমান, স্বতন্ত্র সদস্য ডা. রুস্তম আলী ফরাজী।
কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী আলোচনার সূচনা করে বলেন, “৫৮টি মন্ত্রণালয় বা বিভাগের মধ্যে ৩৫টি বেশি এবং ২৩টি কম খরচ করেছে। এই ৩৫টি মন্ত্রণালয় বা বিভাগের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১০০৪ কোটি টাকার কিছু বেশি দাবি করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তবে সবগুলো মন্ত্রণালয় ও বিভাগের দাবি সমর্থন করি।”
তিনি বলেন, “ঘাটতি বাজেট সব দেশেই আছে। এমনকি ভারত-আমেরিকাতেও আছে। প্রশ্ন হচ্ছে- আমরা ঋণ করে ঘি খেয়েছি কি না। আমরা ঋণ করে ঘি খাইনি, উন্নয়ন করেছি।”
মতিয়া চৌধুরী শিক্ষা, যোগাযোগ এবং তার নিজ কৃষি মন্ত্রণালয়সহ আরও কয়েকটি মন্ত্রণালয়ের সাফল্য তুলে ধরে বলেন, “গত বছর বিএনপি-জামায়াতের দেশজুড়ে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের পরও জিডিপি ৬ ভাগ অর্জিত হয়েছে। তা না হলে এটি ৭-এর ঘরে থাকতো।”
জিডিপি নিয়ে কয়েকটি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের দ্বিমতের চরম সমালোচনা করে তিনি বলেন, “গণতন্ত্র-বিরোধীরা নির্বাচিত সরকারের তথ্য মানতে চায় না। গণতন্ত্রের সাফল্য মানতে চায় না। তারা ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে চায়। এ জন্য সত্য শুনলে তাদের অস্বস্তি লাগে।”
জাতীয় পার্টির পীর ফজলুর রহমান বলেন, “সর্বোচ্চ বরাদ্দের পরও শিক্ষা মন্ত্রণালয় ১১৯৩ কোটি সম্পূরক বরাদ্দ দাবি করেছে। অথচ এই মন্ত্রণালয় প্রশ্নপত্র ফাঁস ঠেকাতে পারে না। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এত রাদ্দের পরও ১৪৪১ কোটি টাকা সম্পূরক দাবি গ্রহণযোগ্য নয়। সুনামগঞ্জ একপি প্রবাসী অধ্যুসিত জেলা, সেখানে পাসপোর্ট অফিসে মেশিন রিডেবল যন্ত্র নেই।”
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় অতিরিক্ত দাবি করেছে, জেলা সদরে চিকিৎসক নেই। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান ৪৪০ কোটি টাকা অতিরিক্ত দাবি করেছে। অথচ পুঁজিবাজারে নিঃস্ব হওয়া লাখ লাখ ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীর রক্তক্ষরণ বন্ধ করার ব্যবস্থা নেই। যারা পুঁজিবাজারে লুটপাটকারীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেই। খালিদ ইব্রাহিমের সুপারিশ বাস্তবায়নে উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। এই বরাদ্দ দেওয়ার আগে জাতীয় নেতৃবৃন্দকে ভাবতে হবে। বলে মন্তব্য করেন তিনি।
তিনি বলেন, “একজন মন্ত্রী দাবি করেছেন- প্রয়াত নাসিম ওসমানকে জোর করে জাতীয় পার্টি করানো হয়েছে। এ কথাও সঠিক নয়।”
স্বতন্ত্র সদস্য ডা. রুস্তম আলী ফরাজী বলেন, “প্রশাসনে দুর্নীতি দমনের কোনো কার্যকর উদ্যোগ নেই। দুর্নীতি বন্ধ করতে না পারলে স্বপ্নের সোনার বাংলা উপহার দেওয়া সম্ভব হবে না।”
তিনি বলেন, “মন্ত্রি পরিষদ সচিবের নেতৃত্বে একটি কমিটি করা হয়েছে। সেই কমিটির কোনো বৈঠক হয় না। প্রশাসনে চাটুকারদের পদোন্নতি হয়। কিন্তু দক্ষতা বাড়ানোর পদক্ষেপ নেই। তিনি দুর্নীতি দমন কমিশনকে আরও শক্তিশালী করার দাবি জানান।”
তিনি বলেন, “ভূমি রেজিস্ট্রেশনের ক্ষেত্রে সাব-রেজিষ্ট্রি অফিসে ঘুষ ছাড়া কাজ হয় না। মন্ত্রীকে এসব বিষয়ে জানানো হয়েছে। কিন্তু এ বিষয়ে সরকার কোন ব্যবস্থা নিতে পারছে না। একজন কর্মকর্তার বেতন ত্রিশ হাজার টাকা, আর তারা মাসে ১০ লাখ টাকা আয় করছে কোথা থেকে। সরকার এসব বিষয় দেখছে না।”
অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এম মান্নন বলেন, “বিগত অর্থবছরের বাজেট আগের সরকারের শেষ বাজেট। বিরোধীদল প্রতি পদে পদে সরকারকে হেনস্তা করার ব্যর্থ চেষ্টা করেছে। কিন্তু সরকার সফল হয়েছে। বিশ্ব মন্দার মধ্যেও ৬ ভাগ জিডিপি অর্জন সম্ভব হয়েছে।”
নারায়ণগঞ্জের ৭ খুনের ঘটনায় বিব্রত মন্তব্য করে তিনি বলেন, “দু’একটি ঘটনা ছাড়া দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো। মানুষ নিরাপদে চলাফেরা করছে। এছাড়া শেখ হাসিনার সরকার জনবান্ধব ও স্বচ্ছতার সরকার।”
জনপ্রশাসনে নানা কারণ কিছু তিক্ততা আছে মন্তব্য করে বলেন, “তবে তারা আগের তুলনায় অনেক বেশি শিক্ষিত।”